নিজের জীবন থেকে শেখা কথাগুলি নেটমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই লিখে ফেলেন হরবিন্দর।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ১৩:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
১০ বছর বয়সেই টের পেয়েছিলেন, আর সকলের মতো বেড়ে উঠছেন না। অন্যদের থেকে উচ্চতায় তিনি খাটো। সেই বয়সেই সকলের গঞ্জনার শিকার। স্কুলের সহপাঠীরাও তাঁকে নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করতেন। নিজের উচ্চতা নিয়ে অবসাদেও ভুগেছিলেন।
০২১৩
সে সব কাটিয়ে আইনজীবী হিসাবে কেরিয়ার গড়েছেন পঞ্জাবের হরবিন্দর কউর জনগল। ৩ ফুট ১১ ইঞ্চির হরবিন্দরের কাহিনিই আশাভরসা জোগাচ্ছে শারীরিক ভাবে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের।
০৩১৩
ছোট বয়সে যা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হত, সেটিই নিজের শক্তি হিসাবে ‘ব্যবহার’ করছেন হরবিন্দর। নেটমাধ্যমে অসংখ্য অনুপ্রেরণাদায়ক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
০৪১৩
ইনস্টাগ্রামে হরবিন্দরের ভক্তসংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছরে তা ৫০ হাজার ছিল। তবে চলতি বছরে তা বেড়ে ৩ লক্ষ ২৩ হাজারে পৌঁছেছে।
০৫১৩
নিজের জীবন থেকে শেখা কথাগুলি নেটমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই লিখে ফেলেন হরবিন্দর। কখনও তিনি লিখেছেন, ‘নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট হলে অন্যদের কাছে তা প্রমাণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে না।’ আবার কখনও বা তাঁর মন্তব্য, ‘দেখনদারির জন্য নয়, আপনি যে কতটা সক্ষম, তা-ই অন্যদের দেখানো উচিত।’
০৬১৩
ছোটবেলায় অবশ্য এতখানি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না হরবিন্দর। উল্টে বেশ হীনম্মন্যতায় ভুগতেন তিনি। উচ্চতায় খাটো হওয়ায় সমাজের চোখে ‘স্বাভাবিক’ ছিলেন না।
০৭১৩
২৫ বছরের হরবিন্দরের বেড়ে ওঠা জলন্ধরের আরমান নগর এলাকায়। বাবা শামসের সিংহ ট্র্যাফিক পুলিশ। মা ব্যস্ত থাকতেন সংসার সামলাতে।
০৮১৩
হরবিন্দর জানিয়েছেন, ছোটবেলা বেশ নিঃসঙ্গ কেটেছে তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় টের পাই যে, আর পাঁচটা বাচ্চার মতো আমার স্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে না। তা নিয়ে হাসিঠাট্টার খোরাকও হতে হত। স্কুলের উঁচু ক্লাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সে সব বাড়তে থাকে।’’
০৯১৩
অন্যদের কটূক্তি-ঠাট্টাতামাশা অসহ্য হয়ে উঠেছিল হরবিন্দরের। এক সময় স্কুলে যেতেও ভয় পেতে শুরু করেন। হরবিন্দরের কথায়, ‘‘মাধেমধ্যেই স্কুল যাওয়া বন্ধ করতে শুরু করি। নিজের ঘরে একলা বসে থাকতাম। অন্যদের কটূক্তি শুনতে শুনতে নিজের ক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ হতে শুরু করে।’’
১০১৩
দীর্ঘ দিন এ ভাবেই কেটেছিল। তবে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পর আচমকাই এক দিন সব কিছু বদলে যায়। এলএলবি পড়ার জন্য একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তি হন তিনি। হরবিন্দর বলেন, ‘‘তার পর থেকে জীবনটাই পাল্টে গিয়েছিল।’’
১১১৩
আইন নিয়ে ডিগ্রি লাভের পর জলন্ধরের বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জগপাল সিংহ ধুপরের তত্ত্বাবধানে আদালতে প্র্যাকটিস শুরু করেন হরবিন্দর।
১২১৩
আইনজীবী হিসাবে হরবিন্দর নয়া উচ্চতায় উঠেছেন। পাশাপাশি, নেটমাধ্যমে প্রভাবশালী হিসাবেও খ্যাত হয়েছেন তিনি। ছোটবেলার সেই কটূক্তির বদলে প্রশংসা ঝরে পড়ছে তাঁর উপর। হরবিন্দরের কথায়, ‘‘যাঁরা এক কালে বাঁকা চোখে তাকাতেন বা কটাক্ষ করতেন, তাঁরাই আজ আমার তারিফ করছেন।’’ হরবিন্দরের সাফ কথা, ‘‘নিজেকে নিয়ে গর্ব হয়। যাঁরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন, তাঁরা আমার থেকে আত্মবিশ্বাস পেতে পারেন।’’
১৩১৩
ফাঁপা বুলি নয়, অন্যদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে চান হরবিন্দর। তিনি জানিয়েছেন, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা দিতে চান তিনি। কেন? হরবিন্দরের কথায়, ‘‘ওঁদের যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারি।’’