Gold price surge more than thrice in last 10 years when will it reach Rs 2 lakh dgtl
Gold Price Hike
৩৭ বছরে ৩২ গুণ! ১০ বছর আগে কত দাম ছিল সোনার? কত দিনে দু’লাখের গণ্ডি পেরোতে পারে হলুদ ধাতু?
সর্বকালীন উচ্চতায় উঠে ৮০ হাজার টাকা ছুঁয়েছে সোনার দাম। গত ১০ বছরে তিন গুণ দামি হয়েছে হলুদ ধাতু।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
উৎসবের মরসুমে বেড়েই চলেছে সোনার দাম। হলুদ ধাতুর দর ইতিমধ্যেই ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সোনার দাম দু’লক্ষ টাকায় পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
০২২১
ভারতীয়দের কাছে গৃহস্থালি সম্পদের মধ্যে অন্যতম হল সোনা। যা বিভিন্ন সময়ে আকর্ষণীয় মুনাফা দিয়েছে। তাই এ দেশের আমজনতার মধ্যে হলুদ ধাতু কেনার প্রবণতা রয়েছে।
০৩২১
ইন্ডিয়া বুলিয়ান অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিজেএ) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ অক্টোবর সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছয় সোনা। ওই দিন ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট হলুদ ধাতু বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার ৩৩০ টাকায়।
০৪২১
এ বছরের ১৮ এপ্রিল ৭৩,৪৭৭ টাকা/১০ গ্রাম দরে বিক্রি হয়েছে ২৪ ক্যারেটের সোনা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ন’বছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এই দামে পৌঁছেছে হলুদ ধাতু। ২০১৫ সালে এর দর ছিল ২৪ হাজার ৭৪০ টাকা।
০৫২১
২০০৬ সালের ৩ মার্চ ২৪ ক্যারেট সোনার বাজারমূল্য প্রতি ১০ গ্রামে মাত্র ৮ হাজার ২৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। এই দর তিন গুণ বাড়তে ন’বছরের বেশি সময় লেগেছিল। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ ২,৫৭০ টাকা/১০ গ্রাম দরে বিক্রি হয়েছে ২৪ ক্যারেটের হলুদ ধাতু।
০৬২১
১৯৮৭ সাল থেকে সোনার দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে প্রায় ১৯ বছর সময় নিয়েছিল। তার আগে দর তিন গুণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সময় লেগেছিল আট থেকে ছ’বছর।
০৭২১
বর্তমানে সোনার দাম যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, দর তার থেকে তিন গুণ বাড়লে এটি ২.৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে। আগামী ছয় থেকে ন’বছরের মধ্যে ওই দামে হলুদ ধাতু বিক্রি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
০৮২১
সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণের উল্লেখ করা হয়েছে। সমীক্ষক সংস্থা ‘এলকেপি রিসার্চ’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট যতীন ত্রিবেদীর কথায়, ‘‘বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে সংঘর্ষ বা ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলে হলুদ ধাতুর দর বাড়তে থাকে। এখন তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।’’
০৯২১
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে পূর্ব ইউরোপে তৈরি হয় অস্থিরতা। অন্য দিকে গত বছর (পড়ুন ২০২৩) থেকে ‘থ্রি এইচ’ (হামাস-হিজ়বুল্লা-হুথি) ও ইরানের সঙ্গে ইজ়রায়েলের চলছে তীব্র সংঘাত। যা পশ্চিম এশিয়ার মাটিকে রক্তে ভিজিয়েছে।
১০২১
বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই ঘটনাগুলি সোনার দামের উপর মারাত্মক ভাবে প্রভাব ফেলেছে। কারণ, ইতিহাসগত ভাবে দেখা গিয়েছে বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন বা আর্থিক সঙ্কটে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দামি হয়েছে হলুদ ধাতু।
১১২১
‘‘শেষ পাঁচ বছরের দিকে তাকালে দেখা যাবে ভারতীয় টাকার মূল্য হ্রাসের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অতিমারী ও যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। যা ৪০ হাজার থেকে সোনাকে ৭০ হাজারের বেশিতে নিয়ে গিয়েছে। মাত্র ৩.৩ বছরে এতে প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে।’’ বলেছেন সমীক্ষক সংস্থার কর্ণধার যতীন ত্রিবেদী।
১২২১
২০১৪ সালে সোনার দাম ছিল গড়ে ২৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে সেটাই বেড়ে ৩১,২৫০ টাকায় গিয়ে পৌঁছয়। অর্থাৎ, এই সময়সীমার মধ্যে হলুদ ধাতুর দরে ১২ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল।
১৩২১
ত্রিবেদীর কথায়, ‘‘এখনকার ধারা বজায় থাকলে ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে তিন গুণ হবে সোনার দাম। অর্থাৎ, দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে ১০ গ্রাম হলুদ ধাতু।’’
১৪২১
কিছু বিশেষজ্ঞ আবার আরও দ্রুত সোনার দাম দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকায় পৌঁছবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাঁদের দাবি, আগামী ছ’বছরের মধ্যেই এটা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
১৫২১
আইবিজেএ-র জাতীয় সম্পাদক সুরেন্দ্র মেহতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘রাশিয়া-ইউক্রেন এবং পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধের জেরে পরিস্থিতি এমনিতেই জটিল হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিন-তাইওয়ান সংঘাত শুরু হলে, তার প্রভাবও সোনার দরের উপরে এসে পড়বে।’’
১৬২১
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই অনিশ্চয়তাগুলি বিশ্ব অর্থনীতিকে ডলার মুক্ত করার দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজান শহরে হওয়া ‘ব্রিকস’ সম্মেলনে তার সূচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই রাষ্ট্রগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য হল ভারত।
১৭২১
এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে হলুদ ধাতুর দাম। যা বর্তমানে বেশ উচ্চ স্তরেই রয়েছে। যত ক্ষণ মুদ্রাস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকবে, তত ক্ষণ সোনার দর বাড়বে বলেই মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
১৮২১
‘‘মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়লে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়। ফলে সাধারণ টাকায় জিনিসপত্র কেনার সুযোগ কমতে থাকে। আর তখনই সোনার দিকে ঝুঁকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এতে চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায় দর।’’ বলেছেন আইবিজেএ-র জাতীয় সম্পাদক সুরেন্দ্র মেহতা।
১৯২১
এগুলি বাদ দিলে সোনার দর বৃদ্ধির নেপথ্যে আরও কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তা হল, বেশ কিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের লাগাতার হলুদ ধাতু ক্রয়। সেই তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, চিন ও ভারত।
২০২১
মেহতার বলেছেন, ‘‘একটা সময়ে সোনাকে ভোগবাদী পণ্য বলে মনে করা হত। কিন্তু, সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে ভারতের আমজনতা। একে এখন বিনিয়োগের অন্যতম সেরা মাধ্যম বলে মনে করা হচ্ছে।’’
২১২১
বিশেষজ্ঞদের কথায়, এখনই সোনায় বিনিয়োগ করার সঠিক সময়ে। সেটির মাধ্যম অলঙ্কার ক্রয় বা গোল্ড বন্ডে লগ্নি হতে পারে। গয়না কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই হলমার্ক দেখে নিতে হবে।