Girls are engaged at on birth married at 16 childhood marriage in madhya pradesh village dgtl
child marriage
জন্মালেই বাগ্দান, ষোড়শী হলে বিয়ে! মেয়েরা তো বটেই, যে গ্রামে শৈশবে ‘শৃঙ্খল’ জোটে ছেলেদেরও
জন্মের এক বা দু’বছর পর, এমনকি কোনও কোনও সময় মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেন তার মা-বাবা। যে পরিবারে যত বেশি অর্থের প্রয়োজন সেই পরিবারে তত তাড়াতাড়ি মেয়েদের বাগ্দান সম্পন্ন করে ফেলা হয়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
ভারতে বাল্যবিবাহ বহু দিন আইন করে বন্ধ হলেও তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি মধ্যপ্রদেশের এই অখ্যাত জেলার গ্রামগুলিতে। স্বাধীনতার ৭৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার দুর্গম ভূখণ্ডে তার আঁচটুকু লাগেনি। এখানকার রুক্ষ প্রান্তরে এসে সময়ও যেন থমকে গিয়েছে।
০২১৪
২০২৫ সালের শুরুতে দাঁড়িয়েও এই গ্রামে চলে এক অদ্ভুত প্রথা। এখানে চলে শৈশব কেনাবেচা। জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই এখানকার মেয়েদের পায়ে পরানো হয় এক সামাজিক বেড়ি, যা এখানকার মহিলাদের বয়ে নিয়ে চলতে হয় আমৃত্যু। সময়ের অনেক আগেই যৌবন ফুরিয়ে যায় এখানকার মেয়েদের।
০৩১৪
বাল্যবিবাহের মতো প্রাচীন প্রথা এখনও পুরোদস্তুর পালন করা হয় এই জেলার জৈতপুরা গ্রামে। শুধু এই গ্রামটিই নয়, আরও ৫০টি গ্রাম রয়েছে যেখানে জন্মের প্রায় পর পরই মেয়েদের বিয়ে ঠিক করে ফেলা হয়। শৈশবের টুঁটি টিপে পুতুলখেলার বয়সে বালিকা ও কিশোরীদের বসিয়ে দেওয়া হয় বিয়ের পিঁড়িতে।
০৪১৪
দারিদ্র ও হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের মেয়েদের শৈশবকেই বলি দেন পরিবারের সদস্যেরা। বাল্যবিবাহের মতো ‘সামাজিক প্রথা’ এখানে চলে আসছে যুগের পর যুগ। এই অচলায়তন ভেঙে বেরিয়ে আসা তো দূরের কথা, এই নিয়মের চোরাবালিতে ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে সব ক’টি পরিবার। প্রায় ৭০০ মেয়ের জীবনে নেমে এসেছে ‘বিয়ে’ নামক অভিশাপ।
০৫১৪
জন্মের এক বা দু’বছর পর, এমনকি কোনও কোনও সময় মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেন তার মা-বাবা। যে পরিবারে যত বেশি অর্থের প্রয়োজন সেই পরিবারে তত তাড়াতাড়ি মেয়েদের বাগ্দান সম্পন্ন করে ফেলা হয়।
০৬১৪
এই গ্রামে মহিলারা গর্ভবতী হলে পরিবারের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। যদি গর্ভস্থ সন্তান মেয়ে হয় আর প্রতিবেশীর বাড়িতে যদি ছেলে সন্তান থাকে, তা হলে তাদের বিয়ে ঠিক করে দেওয়া হয় সেই সময়ই। অনেক সময় বাড়ির পুরুষেরা মত্ত অবস্থায় থাকাকালীন বাড়ির সন্তানদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন।
০৭১৪
দু’বছরের মধ্যে বাগ্দান আর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে সেরে ফেলতে হয় এই গ্রামের নারী-পুরুষকে। নারীদের মতো পুরুষকেও নিয়মের বাঁধনে আটকে পড়তে হয়। চাইলেও এই বাগ্দান ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন না তাঁরা। কেউ বিয়ে ভাঙতে চাইলে তাঁদের বড়সড় জরিমানার মুখে পড়তে হয়।
০৮১৪
গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সি মহিলা রমা সংবাদমাধ্যমে জানান, মাত্র ১০ বছর বয়সেই তাঁর শৈশবের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। গীতা নামের আর এক তরুণী, এখন যাঁর ২২ বছর বয়স, তাঁর বাগ্দান হয়েছিল দু’বছর বয়সে, ষোড়শী হওয়ার পরই বিয়ে। গীতা এখন দুই সন্তানের জননী।
০৯১৪
গীতা জানান, তাঁর জীবন যে খাতে বয়ে গিয়েছে সেই দিকে তিনি তাঁর সন্তানদের এগিয়ে দেবেন না। রমা, গীতার মতো শয়ে শয়ে মহিলা চান এই শিকল থেকে মুক্তি পাক তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম। গ্রামের বড়দের চাপিয়ে দেওয়া জীবনের জাঁতায় পিষে গিয়েছে তাঁদের সমস্ত ইচ্ছা, ভাবনা, চাহিদা।
১০১৪
শুধু মেয়েরাই যে নিপীড়িত হচ্ছেন এমনটা নয়। একই দশা গ্রামের ছেলেদেরও। দিনেশ নামে এক নাবালক জানায়, বাগ্দানের সময় তার ভাবী স্ত্রীকে একটি অলঙ্কার এবং একটি লকেট পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল। ১০ বছরের এক বালক জানায়, “মিষ্টির হাড়ি দিয়ে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। আমি এখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।”
১১১৪
৮-১০ বছর বয়সি মেয়েরা জানায়, বিয়ে ও বাগ্দানের সময় তাদের হাতে ও পায়ের যে ভারী ভারী গয়নাগুলি দেওয়া হয় সেগুলি তারা পরতে চায় না। প্রতি দিন বাবা-মাকে বলা সত্ত্বেও এগুলি থেকে মুক্তি মেলে না তাদের। তাদের বলা হয় এগুলো পরতে হবে। এটা বন্ধন।
১২১৪
‘‘আমি এগুলি থেকে মুক্তি চাই’’, জানায় ১০ বছরের এক বালিকা। এই গ্রামের বেশির ভাগ মেয়ের কাছে এই অলঙ্কারগুলি বোঝার মতো, যা আজীবন বয়ে নিয়ে যেতে হয় তাদের।
১৩১৪
গ্রামবাসীরা বলেন, ঋণ এবং বিয়ের খরচ থেকে মুক্তি পেতে এই রীতি অনুসরণ করা হয়। “অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সন্তানদের বিয়ে ঠিক করেন। তাঁরা টাকা ধার করে তাঁদের মেয়েদের বিয়ে দেন। এ ভাবেই চলতে থাকে”, যুক্তি গ্রামের প্রধান গোবর্ধন তনওয়ারের।
১৪১৪
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজগড়ের ২০-২৪ বছর বয়সি ৪৬ শতাংশ মহিলার সাবালক হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। অর্ধেকেরও বেশি মহিলা নিরক্ষর। এই প্রথা ভাঙলে পরিবারগুলিকে মোটা জরিমানা দিতে হয়। এমনকি পঞ্চায়েতের সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহিও করতে হয়।