From protest over job quota to Sheikh Hasina’s resignation, timeline of Bangladesh crisis dgtl
Bangladesh Unrest
৫ জুন থেকে ৫ অগস্ট: কী ভাবে রক্তে লাল হল বাংলাদেশের মাটি? কেমন ছিল আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি?
বাংলাদেশে গত দু’মাসে রক্ত ঝরেছে প্রচুর। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছে। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১৬:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১৩৬
প্রথমে কোটা সংস্কার, পরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ— এই দুই প্রধান দাবিতে গত দু’মাস ধরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে বাংলাদেশ। রক্ত ঝরেছে প্রচুর। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছে। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। তবে বাংলাদেশ এখনও অশান্ত। সোমবার থেকে দিকে দিকে হিংসার ঘটনা ঘটছে। আগুন জ্বলছে।
০২৩৬
এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। তবে পরে সরকারকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের সুর আরও এক ধাপ চড়ে। বিশাল আকার ধারণ করে বাংলাদেশের ছাত্রবিক্ষোভ।
০৩৩৬
কিন্তু গত দু’মাসে কী ভাবে অশান্ত হয়ে উঠল সোনার বাংলা? কোন পথে চলল আন্দোলন? স্বাধীনতার আগে এবং পরে— অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবিতে উত্তাল হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী।
০৪৩৬
তবে বর্তমানে যে আন্দোলন চলছে, তার সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে ৫ জুন থেকে। হাসিনার পদত্যাগের ঠিক দু’মাস আগে থেকে।
০৫৩৬
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। ১৯৭২ সাল থেকে এই নিয়ম চলে আসছিল। ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল।
০৬৩৬
২০১৮ সালে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ।
০৭৩৬
পরে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তারই প্রতিবাদেই বাংলাদেশের ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ফের আন্দোলনে নামেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, হাই কোর্টের রায়ে আখেরে লাভ হবে আওয়ামী লীগের অনুগামী পরিবারগুলির। প্রথমে সেই প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হলেও পরে তা হিংসাত্মক চেহারা নেয়।
০৮৩৬
তবে ছাত্রবিক্ষোভ শুরুর পরের দিনই, অর্থাৎ, ৬ জুন ইদ উপলক্ষে আন্দোলনে ভাটা পড়ে। ইদ উদ্যাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সারা দেশ। তবে পড়ুয়াদের এই বিক্ষোভকে কোনও ভাবেই গুরুত্ব দিতে রাজি ছিলেন না হাসিনা। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘ছাত্ররা নিজেদের সময় নষ্ট করছেন।’’
০৯৩৬
এর পর ৭ জুন থেকে আবার বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের আগুন ধিক ধিক করে বাড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে দাবানলে পরিণত হয় আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। ৩০ জুনের মধ্যে তা সারা দেশে ছড়িয়ে প়ড়ে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের।
১০৩৬
জুলাই মাসের শুরুতে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় আরও কিছুটা। বিভিন্ন জেলায় রাস্তা এবং রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়।
১১৩৬
১৫ জুলাই হাসিনা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সহযোগীদের তুলনা করেন। তাঁর এই মন্তব্যে ছাত্রবিক্ষোভ আরও বড় চেহারা নেয়। এর পর বিক্ষোভকারীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এমনকি, ঢাকা হাসপাতালে ঢুকে আহত আন্দোলনকারীদের মারধরের অভিযোগও ওঠে।
১২৩৬
১৬ জুলাই বাংলাদেশের আন্দোলন হিংসার চেহারা নেয়। বিক্ষোভকারী এবং সরকারপন্থীদের সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। দেশ জুড়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেয় হাসিনা সরকার।
১৩৩৬
১৭ জুলাই মৃত বিক্ষোভকারীদের স্মরণে মিছিল চলাকালীন সেই মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশি পুলিশের বিরুদ্ধে। এর পর বিক্ষুদ্ধ ছাত্রেরা দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেন। ওই একই দিনে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন হাসিনা। কী ভাবে ছ’জনের মৃত্যু হল, তা তদন্ত করে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ওই একই দিনে দেশ জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় সরকারের তরফে।
১৪৩৬
১৮ জুলাই হাসিনার আন্দোলন বন্ধের আর্জিতে সাড়া না দিয়ে পাল্টা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব হন পড়ুয়ারা। স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে সারা দেশ। এর মধ্যেই ওই একই দিনে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং একাধিক সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। সব মিলিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
১৫৩৬
এর পর দিন, অর্থাৎ ১৯ জুলাই দফায় দফায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারী পড়ুয়া এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তারক্ষীরা। সরকারের তরফে কার্ফু জারি করা হয়। যদিও সেই কার্ফু মানতে রাজি হননি আন্দোলনকারীরা।
১৬৩৬
কার্ফুর জেরে ২০ জুলাই আন্দোলনের তীব্রতা কিছুটা কমে। হাজার দুয়েক বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হন। তাঁদের মধ্যে ছাত্রদের পাশাপাশি বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত প্রায় দেড়শো জনের মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। আন্দোলনও ছাত্রদের গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
১৭৩৬
২১ জুলাই সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে হাই কোর্টের রায় খারিজ করে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত রায় দেয়, দেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে। হাই কোর্টের রায় বাতিল করা হলেও সংরক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি। দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট সাত শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার মধ্যে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। বাকি দুই শতাংশ অন্য শ্রেণির জন্য। ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার আর্জিও জানায় আদালত। খুশির হাওয়া ছড়ায় বাংলাদেশে।
১৮৩৬
এর পর ২২ জুলাই বিরোধী বিএনপি এবং জামাত নেতাদের সতর্ক করেন হাসিনা। ২৩ জুলাই সরকারের তরফে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত অর্ডার পাশ করা হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তা নাকচ করে দেন।
১৯৩৬
২৫ জুলাই আমেরিকা, কানাডা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে বাংলাদেশের সরকারকে আন্দোলনকারীদের উপর কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। তবে এর এক দিন পরেই বাংলাদেশের পুলিশবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রছাত্রী-সহ অনেক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে।
২০৩৬
দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখার পর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়। তবে সমাজমাধ্যম থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা হয়নি।
২১৩৬
১ অগস্ট কট্টরপন্থী মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। নিষিদ্ধ করা হয় তাদের শাখা সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকেও, যাদের নেতৃত্বের সঙ্গে আল কায়দার যোগ থাকার দাবি অতীতে করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
২২৩৬
২ অগস্ট থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন ঘিরে আবার উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৩ অগস্ট আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চ, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর পূর্বঘোষিত মিছিল কর্মসূচি ঘিরে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে কুমিল্লা শহর। শনিবার কুমিল্লা শহরে কোটা সংস্কারপন্থী পড়ুয়াদের মিছিলে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় অন্তত পাঁচ জন আন্দোলনকারী গুরুতর জখম হন। শাসকদল আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগ এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।
২৩৩৬
৪ অগস্ট সেই আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চের ডাকে রবিবার থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনের নয় দফা দাবি নেমে আসে এক দফায়— হাসিনা সরকারের পদত্যাগে।
২৪৩৬
৪ অগস্ট শাহবাগ এলাকায় শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের এক দফা সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই চত্বরে ভাঙচুর চালানো হয় বেশ কিছু গাড়িতে। গাজিপুরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বরে পুলিশের একটি ভ্যান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। একই চিত্র ধরা পড়ে মুন্সিগঞ্জ এলাকাতেও। সেখানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নিহত হন দু’জন। এই পরিস্থিতিতে ফের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার।
২৫৩৬
৫ অগস্ট পুলিশের গুলিতে আরও পাঁচ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ জুড়ে উত্তাপ আরও ছড়িয়ে পড়ে। হাসিনাকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দেয় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। হাসিনা ইস্তফা দিয়েই দেশ ছাড়েন। সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঢাকার বাসভবন ছেড়ে বোনকে নিয়ে কপ্টারে রওনা হন শেখ হাসিনা। কপ্টারে চেপে ভারতে পৌঁছন।
২৬৩৬
হাসিনা ঢাকা ছাড়ার আগেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে বাংলাদেশের বিশিষ্টজন এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াকার। এর পর ভারতীয় সময় অনুযায়ী, সাড়ে ৩টে নাগাদ দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা শুরু করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ চালাব। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।’’
২৭৩৬
পাশাপাশি বাংলাদেশের জনতার কাছে সেনাপ্রধানের আর্জি ছিল, ‘‘ভাঙচুর, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকুন। ধৈর্য হারাবেন না। আমি নিশ্চিত, আপনারা যদি আমাদের কথামতো চলেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তা হলে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে এগোতে পারব।’’
২৮৩৬
হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তেই দিকে দিকে ধরা পড়ে বিজয়োল্লাসের ছবি। আন্দোলনকারীদের দীর্ঘ দিনের রাগ-ক্ষোভ বদলে যায় হাসিতে। কেউ কেউ আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে মোনাজ়াত শুরু করেন। কারও কারও গলায় শোনা যায় আনন্দ মেশানো চিৎকার।
২৯৩৬
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আনন্দে শামিল হতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকেও। ট্যাঙ্কের মাথায় চড়ে থাকা বাহিনীকে হাসতে হাসতে হাত মেলাতেও দেখা যায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তাঁর বাসভবন গণভবনেও ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে স্লোগান এবং উল্লাসের মাধ্যমে বিজয় উদ্যাপন করেন তাঁরা। বাংলাদেশের পতাকা হাতে অনেকে গণভবনের মাথায় চড়েন। সেখানে থেকে আনন্দে চিৎকার শুরু করেন সাধারণ মানুষ। ‘গণভবন’ থেকে সংসদ ভবন, দখল নেয় আন্দোলনকারীরা।
৩০৩৬
তবে কোথাও কোথাও আনন্দ উদ্যাপনের ভিন্ন দৃশ্য ধরা পড়ে। বিক্ষোভ দেখাতে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি ভাঙেন বিক্ষোভকারীরা। মূর্তির উপরে চড়ে সেটিকে ভাঙার চেষ্টার ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে।
৩১৩৬
অন্য দিকে, ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে। দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁর বাড়ির ফটক ভেঙে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এর পর বাড়ি থেকে ধোঁয়া বার হতেও দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ‘প্রথম আলো’।
৩২৩৬
বেলা গড়াতে বিশৃঙ্খলাও বা়ড়ে বাংলাদেশে। নানা জেলায় হামলার বলি হন অনেক মানুষ। হাসিনা-বিরোধী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি। হাসিনা সরকারের পতনের পরেই উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিল মুজিবের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি। পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশে রক্তাক্ত পালাবদলের সময় ওই বাড়িতেই ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দেহ।
৩৩৩৬
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভের আগুনে মৃত্যু হয় অনেকের। চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তাঁর ছেলে অভিনেতা শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার এলাকা ছেড়ে নাকি পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে জনরোষের মুখে পড়েন তাঁরা। সেখান থেকে কোনও রকমে রক্ষা পেলেও বাগাড়া বাজারে এসে উত্তেজিত জনতার মুখোমুখি হন দু’জনে। সেখানেই গণপিটুনিতে নিহত হন সেলিম খান ও তাঁর ছেলে শান্ত খান।
৩৪৩৬
অন্য দিকে, সেনাপ্রধানের এই ঘোষণার পরে সোমবার রাতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ জানায়, সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না। প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া অন্য কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
৩৫৩৬
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে কার্ফু প্রত্যাহার করা হয়েছে বাংলাদেশে। অফিস, কারখানা, স্কুল-কলেজ পুনরায় খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুললেও, এখনই শুরু হল না বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাভাবিক পঠনপাঠন। সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি বাংলা’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়াকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ক্যাম্পাস খোলা থাকলেও, পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া এখনই চালু হচ্ছে না। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকের পরই পঠনপাঠন শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। একই ছবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও।
৩৬৩৬
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন থেকে হাসিনার পদত্যাগ। গত দু’মাসে ‘সোনার বাংলা’ নয়, অন্য বাংলাদেশ দেখেছে বিশ্ব। এখন সে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়, তার দিকেই তাকিয়ে মানুষ।