From marriage to separation, AR Rahman and Saira Banu’s relationship timeline dgtl
AR Rahman
দরগায় আলাপ, দু’মাসের মধ্যে বিয়ে, মধুচন্দ্রিমায় আলাদা ঘরে বীণা বাজিয়ে রাত কাটিয়েছিলেন রহমান
১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে সায়রাকে বিয়ে করেন রহমান। প্রেম করে নয়, সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের পর ২৯ বছরের সংসার। স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে সংসার ছিল রহমানের।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
চার হাত এক হওয়ার পর দুই জীবনের ‘তাল সে তাল’ মিলে গিয়েছিল। প্রায় তিন দশক পর কাটল সেই তাল। বিয়ের ২৯ বছর পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্কার বিজয়ী সুরকার এআর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু।
০২২০
১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে সায়রাকে বিয়ে করেন রহমান। প্রেম করে নয়, সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের পর ২৯ বছরের সংসার। স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে সংসার ছিল রহমানের। মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা করার পর পরিবারের সকলেই এই বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন নিজেদের সমাজমাধ্যমের পাতায়।
০৩২০
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রহমান জানিয়েছিলেন, তাঁর মায়ের পছন্দ হয়েছিল সায়রাকে। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সুরকার নিজেও। দুই পরিবারের মতে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় রহমানের।
০৪২০
রহমান বলেছিলেন, ‘‘আমি চিরকালই স্বল্পভাষী। সারা জীবন খালি সঙ্গীত, সুরের মধ্যেই ডুবেছিলাম। প্রেম, বিয়ে, সংসারের কথা আমার মাথায় কোনও দিনও আসেনি। কোনও নারীকে যে প্রেয়সী রূপেও দেখব তার সময়টুকুও ছিল না আমার কাছে। সঙ্গীতচর্চায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম।’’
০৫২০
রহমানের কথায়, ‘‘কাজের সূত্রে আমার সঙ্গে প্রচুর মহিলার আলাপ হয়েছে। তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছি। কখনও এমন চিন্তা আসেনি যে কারও সঙ্গে সারাটা জীবন কাটানো গেলে খুব ভাল হত।’’
০৬২০
তবে ২৭ বছর বয়সে রহমানের চিন্তাধারা বদলে যায়। রহমান পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘১৯৯৪ সালের কথা। তখন আমার বয়স ২৭ বছর হবে। হঠাৎ অনুভব করলাম যে, আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে আমার। এ বার বিয়ে করতে হবে। তখন মাও আমার জন্য কনে দেখা শুরু করল।’’
০৭২০
রহমান জানিয়েছিলেন, চেন্নাইয়ের সুফি সাধক মোতি বাবার দরগায় গিয়েছিলেন তাঁর মা। সেখানেই প্রথম সায়রাকে দেখেছিলেন তিনি। আসলে দরগা থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে ছিল সায়রার বাড়ি।
০৮২০
কানাঘুষো শোনা যায়, সায়রার বাড়িতে গিয়ে প্রথমে সায়রার বোনকে পছন্দ হলেও সায়রাকে দেখার পর তাঁকেই পুত্রবধূ হিসাবে পছন্দ করেছিলেন রহমানের মা।
০৯২০
১৯৯৫ সালের ৬ জানুয়ারি ২৮ বছর বয়সে পা দেন রহমান। সে দিনই সায়রার সঙ্গে প্রথম দেখা করেন তিনি। স্মৃতির খাতা থেকে সে দিনের কথা উল্লেখ করে রহমান বলেছিলেন, ‘‘আমি যে দিন আঠাশে পা রাখি, সে দিন সায়রার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়। খুব দীর্ঘ সাক্ষাৎ ছিল না। আমরা সাধারণত ফোনেই কথা বলতাম।’’
১০২০
সায়রা প্রসঙ্গে রহমানের মন্তব্য, ‘‘বিয়ের আগে সায়রা খুবই শান্ত ছিল। বিয়ের পর অবশ্য শান্ত ভাব কোথাও একটা উধাও হয়ে যায়। ও সাধারণত ইংরেজি ভাষায় কথা বলত। আমি ইংরেজি ভাষায় ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম ও আমায় বিয়ে করতে চায় কি না।’’
১১২০
১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে মাত্র দু’মাসের আলাপে বিয়ে হয় রহমান এবং সায়রার। চেন্নাইয়ের যে বহুতলে রহমানের বিয়ে হয়, ২০০৬ সালে সেখানেই স্টুডিয়ো নির্মাণ করেন সুরকার।
১২২০
বিয়ের পর দুই কন্যা এবং এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সায়রা। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রহমানের তিন সন্তানই সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে সায়রাকে বিয়ের পর প্রথম প্রথম মানিয়ে-গুছিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন রহমান।
১৩২০
পুরনো সাক্ষাৎকারে রহমান বলেছিলেন, ‘‘আমরা দক্ষিণ ভারতে থাকতাম। সায়রার জন্ম গুজরাতে। আমার এবং সায়রার পরিবারের আচার-সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তাই বিয়ের পর গোড়ার দিকে মানিয়ে নিতে একটু তো সমস্যা হয়েইছিল। আমার প্রতি মায়ের প্রবল অধিকারবোধ কাজ করত। তবে প্রথম সন্তানের জন্মের পর সব ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়।’’
১৪২০
দক্ষিণী অভিনেতা রাশিন রহমানের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল রহমানের। অভিনেতা রহমান এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রহমানের বিবাহিত জীবন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় সায়রাকে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিল রহমান। তখন রাত ১২টা কি ১টা বাজে। আমি মজার ছলে ওদের ফোন করেছিলাম। সায়রা ফোন তুলে যা বলল তা শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’’
১৫২০
অভিনেতা রহমানের কথায়, ‘‘সায়রা ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম রহমান কোথায়, তখন ও জানায় যে রহমান ওর সঙ্গে নেই। দু’জনে আলাদা ঘরে রয়েছে। পাশের ঘরে বীণা বাজিয়ে সুর তৈরি করছিলেন রহমান।’’
১৬২০
২০২৩ সালে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সায়রাকে ভাষা নির্বাচন নিয়ে নির্দেশ দেওয়ার সময় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রহমান। দক্ষিণ ভারতের এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণের জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন রহমান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও। দর্শকাসনে তখন দক্ষিণী জনপ্রিয় তারকাদের ভিড়।
১৭২০
পুরস্কার গ্রহণের পর মাইক নিয়ে রহমান বলতে শুরু করলেন, ‘‘সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর আমার আর সেগুলো শুনতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু আমার স্ত্রী বার বার সেই সাক্ষাৎকারগুলি শুনতে থাকে।’’ তামিল ভাষায় এই কথাগুলি বলেছিলেন তিনি। তা বলেই সায়রার দিকে মাইক এগিয়ে দিয়েছিলেন রহমান।
১৮২০
সায়রাকে মাইক এগিয়ে দেওয়ার সময় রহমান তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘হিন্দি ভাষায় নয়, তামিল ভাষায় কথা বলো।’’ সায়রা মুখের কাছে মাইক নিয়েই ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন, ‘‘হায় ভগবান! আমায় সকলে ক্ষমা করে দিন। আমি তামিল ভাষায় কথা বলতে তেমন স্বচ্ছন্দবোধ করি না। রহমানের স্বর আমার সবচেয়ে প্রিয়। ও যে এই পুরস্কার পেয়েছে, তার জন্য আমি খুবই খুশি।’’
১৯২০
মঙ্গলবার রাতে বিবৃতি দিয়ে সায়রার আইনজীবী বন্দনা শাহ রহমান এবং সায়রার বিবাহবিচ্ছেদ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বহু বছর একসঙ্গে সংসার করার পর রহমান এবং সায়রা বিচ্ছেদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা একে অপরকে ভীষণ ভালবাসেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে নানা ধরনের মানসিক টানাপড়েন চলছিল। মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
২০২০
নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানিয়ে রহমান লেখেন, ‘‘আমাদের আশা ছিল বিবাহিত জীবনের ত্রিশ বর্ষপূর্তি একসঙ্গে কাটাব। কিন্তু জীবনের সব কিছুই অজানা পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। আমরা খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের গোপনীয়তাকে সন্মান জানানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ।’’ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তাঁর কন্যা খাতিজা এবং পুত্র আমিন দু’জনেই সমাজমাধ্যমে গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।