From a Bank employee to millionaire this is how Malaysian man Aman Shah became 1 cent thief dgtl
Unusual Bank Fraud
‘এক শতাংশের চোর’! গ্রাহকদের সামান্য অর্থ সরিয়ে কোটিপতি ব্যাঙ্ককর্মী, ধরা পড়েন যে ভুলে
গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক কার্ড থেকে এক শতাংশেরও কম করে অর্থ সরাতে শুরু করেন ব্যাঙ্ককর্মী আমন শাহ আহমেদ। সেই চুরির অঙ্কটা এমনই ছিল যে গ্রাহকরা ভাবতেন ওটা ব্যাঙ্কিং চার্জ!
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:১১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
চাকরি করতেন ব্যাঙ্কে। কিন্তু ছাপোষা চাকুরি করে মোটেই পোষাচ্ছিল না উচ্চাকাঙ্ক্ষী আমন শাহ আহমেদের। চোখের সামনে এত রিংগিত (মালয়েশিয়া মুদ্রা)। কিন্তু সে রিংগিত ছোঁয়া যাবে না! কেন যাবে না? নিজেকে প্রশ্ন করে সুদর্শন ওই ব্যাঙ্ককর্মী শুরু করেন ‘সামান্য’ চুরি।
০২১৯
কথায় বলে, চুরি করা মহাবিদ্যা। সেই বিদ্যা ভালই রপ্ত করেছিলেন আমন। যে ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন, তার গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাতে শুরু করেন তিনি। তাঁর এই চুরির ঘটনা যখন প্রকাশ্যে আসে মালয়শিয়া জুড়ে হইচই শুরু হয়। ‘এক শতাংশের চোর’ বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন এই আমন।
০৩১৯
একসঙ্গে মোটা টাকা নয়। আমনের লক্ষ্য ছিল অনেকের থেকে অল্প অল্প করে টাকা নিয়ে বড়লোক হওয়ার। তাই গ্রাহকদের ব্যাঙ্কের কার্ড ব্যবহার করে শুরু করেন টাকা চুরি।
০৪১৯
কিন্তু সেই চুরি এতটাই সন্তর্পণে হত, এতটাই ছোট করে হত যে কোনও গ্রাহকের চোখেই পড়ত না। ‘এক শতাংশের চোর’ বলা হলেও ওই পরিমাণ অঙ্কও সরাতেন না আমন। তিনি সরাতেন আরও কম অর্থ। কী ভাবে হত সেই চুরি?
০৫১৯
বয়স মাত্র ২৫ বছর। ঝকঝকে চেহারা। চোখেমুখে বুদ্ধির ছাপ। আমন শাহ আহমদ চাকরি পেলেন মালয়েশিয়ার হকহুয়া ব্যাঙ্কে। সালটা ১৯৯০। এমনই প্রাণবন্ত এবং হাসিখুশি এই যুবক যে প্রায় সব সহকর্মীর সঙ্গেই তাঁর দুর্দান্ত সম্পর্ক। ‘মানি মার্কেট প্রসেসিং ডিপার্টমেন্ট’-এর প্রধান পদে থেকে বেশ ভালই বেতন পেতেন আমন। কিন্তু শুধু ভালয় তাঁর চলবে কেন! তাই শুরু করেন চুরি।
০৬১৯
তবে সরাসরি চুরি নয়। বুদ্ধিমান আমনের প্রতারণার পন্থাটাই ছিল অন্য রকম। এ জন্য তিনি একটা কম্পিউটার কোর্স করে ফেলেন।
০৭১৯
নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যেক গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু টাকা কাটেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেটা খুবই ছোট অঙ্কের টাকা। ব্যাঙ্ককর্মী আমন ঠিক সেই জায়গাটা ধরেই শুরু করেন চুরি। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে সামান্য অঙ্কের অর্থ সরানো শুরু করেন তিনি।
০৮১৯
গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক কার্ড থেকে এক শতাংশেরও কম করে অর্থ সরাতে শুরু করেন আমন। সেই চুরির অঙ্কটা এমনই ছিল যে গ্রাহকরা ভাবতেন সে সব ব্যাঙ্কিং চার্জ!
০৯১৯
টাকা সরানোর কাজটা যাতে ঘুণাক্ষরেও কেউ টের না পান, তার জন্যও রাস্তা বার করেন এই ব্যাঙ্ককর্মী। একটি কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ওই ভাইরাস ব্যবহার করে তৈরি করেন অফিশিয়াল মেসেজ। ব্যাঙ্ক থেকে অর্থ তুললে মোবাইল ফোনে মেসেজ পান গ্রাহক। সেই রকম মেসেজ তৈরি করে ফেলেন আমন।
১০১৯
একটি ভাইরাসের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের এক পদস্থ আধিকারিকের কম্পিউটারের তথ্য হাতিয়ে নেন ওই ব্যাঙ্ককর্মী। সবাইকে বোকা বানিয়ে এ ভাবেই তিনি চালিয়ে যান প্রতারণার কাজ।
১১১৯
পরে ব্যাঙ্কের যত কম্পিউটার আছে, সবগুলো থেকে গ্রাহকদের তথ্য হাতের মুঠোয় নিয়ে নেন আমন।
১২১৯
এই ভাবে একটু একটু করে টাকা সরাতে সরাতে ওই ব্যাঙ্ককর্মী ধনবান হতে শুরু করেন। বদলে যেতে থাকে তাঁর জীবনধারা। বদল আসে যাপনে।
১৩১৯
ছোট থেকেই দামি গাড়ির শখ আমনের। চুরির অর্থে তিনি শখপূরণ শুরু করেন। একে একে ছয়টি দামি গাড়ি কিনে ফেলেন। থাকার জায়গাটাও বদলে ফেলেন। রীতিমতো নবাবি চালচলন আর কি।
১৪১৯
শুধু গাড়ি-বাড়ি করে শখ মেটানোই নয়। আমন শাহ বুঝতে পেরেছিলেন যে ভাবে তিনি চাকরি করছেন এবং যে চাকরি করেন, তা দিয়ে বেশি দিন চলবে না। এ ভাবে দিনের পর দিন সবার চোখে ধুলো দেওয়ায় তো মুশকিল। তাই অন্য কিছু কাজের ছক কষেন তিনি। পকেটে যখন চুরির মোটা অর্থ, ঠেকায় কার সাধ্যি। একটি বড় বিজ্ঞাপনী সংস্থা খুলে ফেলেন আমন।
১৫১৯
চুরি করে বড়লোক হয়েছেন। তাই খুব সাবধানী ছিলেন বুদ্ধিমান আমন। কিন্তু বেশি অর্থের সঙ্গে লোভও চাড়া দেয়। এ বার এল ক্ষমতার লোভ। পরিচিতির লোভ। সেই জালেই জড়িয়ে ধরা পড়েন ব্যাঙ্ককর্মী থেকে ধনবান উদ্যোগপতি হয়ে ওঠা আমন।
১৬১৯
দূর থেকে দেখলে আমনের উত্থান চমকপ্রদ। অল্প বয়সে ভাল চাকরি। সেখান থেকে উদ্যোগপতি। প্রচুর অর্থ। বিশাল সম্পত্তি। এমন এক জন মানুষই তো অন্যদের অনুপ্রেরণা দিতে পারেন! টিভি শোয়ে ডাক পেলেন আমন। তাঁর ইন্টারভিউ নিল মালয়েশিয়ার একটি টিভি চ্যানেল। আর তার পরেই পড়লেন ধরা।
১৭১৯
আমনের ওই সাক্ষাৎকার দেখেন তাঁর ছেড়ে আসা কর্মস্থলের লোকজন। দেখেন সেই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারও। অনেক দিন থেকেই সন্দেহ ছিল তাঁর। আমন তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা শুনে ভাল লাগেনি ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
১৮১৯
আসলে আমন ব্যাঙ্ক ছাড়ার আগেই বেশ কয়েক জন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অভিযোগ জানানোর তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার হন আমন।
১৯১৯
তখন আমনের ২৬ বছর বছর বয়স। আদালতে তাঁকে অপরাধী ঘোষণা করে। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ওই যুবককে। উপরে ওঠার শর্টকার্টই ধ্বংস করে আমনকে।