Former police constable resigns after humiliation ranks in UPSC dgtl
Uday Krishna Reddy
ঊর্ধ্বতনের অপমানের ‘বদলা’ নিতে ইউপিএসসি, সফল হয়ে ‘প্রতিশোধ’ নিলেন প্রাক্তন হাবিলদার
প্রাক্তন এই পুলিশ কনস্টেবল চাকরি ছেড়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেছিলেন প্রস্তুতি। তাতেই আসে সাফল্য। খুব শীঘ্রই তিনি হতে চলেছেন সরকারি আধিকারিক।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল। ঊর্ধ্বতনের অপমানে চাকরি ছেড়েছিলেন। প্রাক্তন সেই কনস্টেবলই পাশ করলেন ইউপিএসসি (ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন)। খুব শীঘ্রই তিনি হতে চলেছেন সরকারি আধিকারিক।
০২১৯
প্রকাশম জেলার উদয়কৃষ্ণ রেড্ডি ২০২৩ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৭৮০ র্যাঙ্ক পেয়েছেন। ৩০ বছরের যুবক হতে চান আইএএস। প্রাক্তন এই পুলিশ কনস্টেবল চাকরি ছেড়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেছিলেন প্রস্তুতি। তাতেই আসে সাফল্য।
০৩১৯
কেন ছেড়েছিলেন চাকরি? উদয় জানান, ২০১৮ সালে প্রায় ৬০ পুলিশকর্মীর সামনে তাঁকে অপমান করেছিলেন সার্কল ইনস্পেক্টর (সিআই)। যা নয় তা-ই বলেছিলেন সে দিন।
০৪১৯
পুলিশ ড্রিল চলছিল। পুলিশকর্মীদের শৃঙ্খলার পাঠ দেওয়া হচ্ছিল। তাতে দেরি করে এসেছিলেন উদয়। সে কারণে নানা কথা শুনিয়েছিলেন ঊর্ধ্বতন। তবে অপমানের শুরুটা হয়েছিল অনেক আগে।
০৫১৯
ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গিয়েছিলেন উদয়ের। বড় হয়েছেন ঠাকুমার কাছে। তেলুগু মাধ্যমের সরকারি স্কুলে পড়াশোনা। আইএএস হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য ছিল না। ২০১৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশে যোগ দেন তিনি। তখন বয়স ছিল ১৯ বছর। নিজের ব্যাচে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
০৬১৯
পুলিশের চাকরির ফাঁকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উদয়। সেই বিষয়টি কানে যায় সার্কল ইনস্পেক্টরের। উদয় জানিয়েছেন, বিষয়টি শোনার পর বিভিন্ন ভাবে তাঁকে অপদস্থ করেন সিআই। প্রকাশ্যে কটাক্ষ করতে থাকেন।
০৭১৯
উদয় আরও জানিয়েছেন, এক বার রাজামুন্দ্রিতে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সে বার ইচ্ছা করেই সিআই তাঁকে সেন্ট্রির ডিউটিতে নিয়োগ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে সারা রাত থানার বাইরে ছোট জায়গায় বসে পাহারা দিতে হয় পুলিশকর্মীদের। ওই ডিউটির কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি উদয়।
০৮১৯
উদয় বলেন, ‘‘যখনই কোনও সুযোগ আসত বা পরীক্ষা হত, সিআই নানা ভাবে আমাকে অপদস্থ করার, আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার চেষ্টা করতেন। এই নিয়ে ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি লিখেছিলাম।’’
০৯১৯
সিআই নানা ভাবে কটাক্ষ করতেন উদয়কে। বার বার বলতেন, স্বপ্ন না দেখে তাঁর মনে রাখা উচিত যে, তিনি নেহাতই এক জন কনস্টেবল।
১০১৯
২০১৮ সালের ১০ অগস্ট পুলিশের ড্রিল ছিল। সেখানে যোগ দিতে দেরি করেছিলেন উদয়। তাঁর কথায়, ‘‘বরাবরই আমাকে হিংসা করতেন সিআই। কখন হেনস্থা করবেন, সুযোগ খুঁজতেন। ওই দিন দেরি করে আসায় সকলের সামনে ঊর্ধ্বতন আমায় অপমান করা শুরু করেন। তিনি বলেন, এই স্যর নাকি আইপিএস বা আইএএস হবেন!’’
১১১৯
সেখানেই থামেননি সিআই। উদয় ড্রিলে যোগ দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। তাতে কুকথার মাত্রা বেড়েছিল। উদয়ের কথায়, ‘‘আমি যোগদানের অনুমতি চাইলে তিনি যা-তা বলতে থাকেন। এক ঘণ্টা শাস্তি দেন। তার পর বলেন, অত স্বপ্ন দেখো না। তুমি নেহাতই এক জন কনস্টেবল।’’
১২১৯
বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি উদয়। সেই দিনই চাকরিতে ইস্তফা দেন। স্থির করেন, পুরোদমে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করবেন। আইএএস অফিসার হবেন।
১৩১৯
তাতেও নিস্তার পাননি উদয়। তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি সিআই। উদয়ের কথায়, ‘‘আমার ইস্তফাপত্র ছুড়ে ফেলে দেন সিআই। পাল্টা বলেন, আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?’’
১৪১৯
উদয় জানিয়েছিলেন, নিজের ইচ্ছাতেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কারও জন্য নয়। কিন্তু উদয়ের ইস্তফাপত্র ঊর্ধ্বতনদের কাছে পৌঁছে দেননি সিআই।
১৫১৯
অগত্যা থানা থেকে ছুটি নিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন। একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। সেই কোচিংয়ের শিক্ষক শরৎ চন্দ্রকে ধন্যবাদ দিয়েছেন উদয়। জানিয়েছেন, শরৎ চন্দ্র না থাকলে আজ তিনি এই সাফল্য পেতেন না।
১৬১৯
ইস্তফা দেওয়ার এক বছর পর উদয়কে ডেসার্টেশন নোটিস পাঠানো হয় পুলিশের তরফে। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘সিআই আমার উপর নজরদারি চালানোর জন্য একটি দল তৈরি করেছিলেন। জেনারেল ডায়েরিতে তাঁকে ডেসার্টার বলে লেখা হয়।’’ যে সব সেনা কর্তব্য করার সময় পালিয়ে যান, তাঁদের বলা হয় ‘ডেসার্টার’।
১৭১৯
এত বাধার পরেও ২০১৯ সালে ইউপিএসসির প্রাথমিক পরীক্ষা (প্রিলিমস) পাশ করেন উদয়। মেনসের জন্য তাঁকে ‘যোগ্য’ ঘোষণা করা হয়। তবে মেনসে বসার আগে তাদের ওয়েবসাইটে ঊর্ধ্বতনের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) দাখিল করতে হয়। সেই এনওসির জন্য ইউনিট অফিসার সিদ্ধার্থ কৌশলের সঙ্গে দেখা করেন উদয়। তিনি আশ্বস্ত করেন। শেষে কৌশল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের ফোন করে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করেন।
১৮১৯
তার পরেই উদয়ের ইস্তফা গৃহীত হয়। যদিও সে বার মেনসে সফল হননি উদয়। এর পর আরও দু’বার ব্যর্থ হন উদয়। চতুর্থ বারে সফল তিনি। উদয় জানিয়েছেন, দিনে আট ঘণ্টা রোজ পড়াশোনা করেছেন। তিন ঘণ্টা জিমে শরীরচর্চা করে কাটিয়েছেন। বাকি সময় তিন বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।
১৯১৯
আইএএস হয়ে কী করতে চান উদয়? সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পশুদের জন্য কিছু করতে চান। ১০৮-এ ফোন করলে যেমন অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি পরিষেবা পৌঁছে যায় মানুষের কাছে, সে রকম একটি নম্বর চালু করতে চান, যেখানে ফোন করলে পশুদের কাছেও পৌঁছে যাবে সাহায্য। তাদের দেওয়া হবে পুনর্বাসন, চিকিৎসা পরিষেবা।