Former Minister Sukh Ram who went to jail for taking bribe was allegedly involved in Telecom Scam dgtl
Sukh Ram
Telecom Scam: কংগ্রেস মন্ত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার কোটি কোটি টাকা! ২০ হাজার কোটির দুর্নীতি এখনও রহস্য
সুখরামের বাড়ি থেকে উদ্ধার কোটি কোটি টাকার উৎস কী? সে জবাব এখনও অজানা সিবিআইয়ের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২২ ০৯:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
টেলিফোনের ঘণ্টি আর বাজবে না— মাস কয়েক আগে এক বুধবার ঠাকুরদার মৃত্যুর পর এই উক্তি করেছিলেন আশ্রয় শর্মা।
০২২১
সে দিন অর্থাৎ ১১ মে মারা যান আশ্রয়ের ঠাকুরদা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখরাম। হিমাচল প্রদেশের রাজনৈতিক গণ্ডি ছাপিয়ে যিনি এক কালে পিভি নরসিংহ রাও সরকারের টেলিকমমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে সেই রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়েও যাঁর নাম ঘুরেফিরে আসে টেলিকম দুর্নীতিতে দোষী হিসাবে।
০৩২১
নব্বইয়ের দশকে এ দেশে আর্থিক সংস্কারের কাণ্ডারি হিসাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের নাম করা হয়। সেই সঙ্গে নাম উঠে আসে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং টেলিকমমন্ত্রী সুখরামের। তবে আর্থিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও টেলিকম দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় বরাবরের মতো কলঙ্কিত হয়েছিলেন সুখরাম।
০৪২১
১৯৯৬ সালে টেলিকম ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন সুখরাম। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়ার জেরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে কংগ্রেস।
০৫২১
দুর্নীতির পাশাপাশি বার বার দলবদলেও তাঁর নাম করা হয়। কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর হিমাচল বিকাশ মোর্চা কংগ্রেস নামে দল গড়েন সুখরাম। তারও পরে ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে ২০১৭ সালে আবারও দলবদল। এ বার বিজেপিতে।
০৬২১
পাঁচ বারের বিধায়ক এবং তিন বারের সাংসদ সুখরামের রাজনৈতিক জীবনে কালো অধ্যায় নিঃসন্দেহে টেলিকম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া।
০৭২১
১৯৯৬ সালের এপ্রিলে সেই দুর্নীতির খবর পেয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। তদন্তে নামেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাতেই প্রকাশ্যে আসে সুখরামের নাম।
০৮২১
সে সময় ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনস (ডট)-এর এক আধিকারিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ফোন করে দাবি করেন, টেলিকম যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য হায়দরাবাদের অ্যাডভান্সড রেডিয়ো মাস্টার্স (আর্ম) নামে এক সংস্থা-সহ ডটকে এক কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা দিয়েছে টেলিকম মন্ত্রক। এবং এ সবই হয়েছে টেলিকমমন্ত্রী সুখরামের আমলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিকের আরও দাবি ছিল, নিজের অভিযোগের সমর্থনে প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে।
০৯২১
খবর শুনে ন়ড়েচড়ে বসে সিবিআই। তবে তৎকালীন সিবিআই প্রধান কে বিজয় রামা রাও এ নিয়ে কোনও সরকারি মেমো জারি করেননি। উল্টে আগেই আর্মের বিরুদ্ধে বিশেষত তাঁর মালিকের সম্পর্কে খোঁজখবর করার নির্দেশ দেন গোয়েন্দাদের।
১০২১
তদন্তের সেই শুরু। প্রচলিত অর্থে শিল্পপতি ছিলেন না আর্মের মালিক পাটালু রামা রাও। বরং তিনি ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার এক কর্মী মাত্র। তবে তাঁর উত্থান চোখে পড়ার মতো ছিল।
১১২১
১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর্ম নামে নিজের সংস্থাটি খোলেন তিনি। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯০-’৯১ সালে সাত কোটি টাকার টেলিকম যন্ত্রপাতি বিক্রি করেছিল আর্ম। তার পরের বছর বিক্রি ১৩ গুণ হয়ে ৯০ কোটিতে পৌঁছয়। ’৯৩-এ বিজয়নগর ইন্টিগ্রেটেড স্টিল প্ল্যান্ট গড়ার কথা ঘোষণা করেন। এত কম সময়ের মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকার ওই বিনিয়োগের তথ্য পেয়ে চমকে যান সিবিআই গোয়েন্দারা।
১২২১
পাটালু রাওয়ের চমকে দেওয়া উত্থানের কাহিনি জানার পর ১৯৯৬ সালের মে-জুন মাস ধরে ফাইলের পর ফাইল তথ্য জোগাড় করে ফেলেছিলেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। সে সব তথ্যের বেশির ভাগই ছিল জটিল প্রযুক্তিগত শব্দে ভর্তি। যার অর্থ বোধগম্য করতে টেলিকম বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে হয়েছিল। তবু ধাঁধার সমাধান হচ্ছিল না।
১৩২১
সিবিআই সূত্রের দাবি, এক বার সে ধাঁধার সমাধান হতেই জানা যায় যে টেলিকম ক্ষেত্রে তখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতবদল হয়ে গিয়েছে।
১৪২১
সে বছরের জুনে দুর্নীতির অভিযোগের সমর্থনে সরকারি ভাবে তথ্য জোগাড়ের কাজে নেমে পড়ে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, সে কাজ আজও শেষ হয়নি।
১৫২১
১৯৯৬ সালের অগস্টের ৮ তারিখে সুখরাম, পাটালু রাও এবং ডটের ডিরেক্টর (ফাইনান্স) রুনু ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর করে সিবিআই। অত্যন্ত চড়া দামে টেলিকম যন্ত্রপাতি বিক্রির অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে।
১৬২১
১৬ অগস্ট দিল্লির সফদরজং লেনে সুখরামের বাসভবনে হানা দেয় সিবিআই। একই সঙ্গে হিমাচল প্রদেশের মান্ডিতে তাঁর বাড়িতেও চলে অভিযান। দিল্লিতে উদ্ধার হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
১৭২১
মান্ডির বাড়িতে ২২টি স্যুটকেস এবং ট্রাঙ্কে ভরে রাখা ছিল থরে থরে নোট। মান্ডিতে পুজোর ঘরে বিগ্রহের পিছন থেকে উদ্ধার হয় এক কোটি ১৬ লক্ষ নগদ টাকা। কী ভাবে এই টাকা এল, তার সদুত্তর দিতে পারেননি সুখরামের মেয়ে।
১৮২১
ওই দিনই রুনু ঘোষের বাড়ি থেকে নগদে এক কোটি ৩২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে সিবিআই। সেই সঙ্গে এক কেজি সোনা এবং এক লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের বিদেশি মুদ্রাও ছিল তাঁর বাড়িতে। ওই সময়ই হায়দরাবাদের আর্মের দফতর থেকে প্রচুর নথিপত্র-সহ টাকা উদ্ধার হয়।
১৯২১
টেলিকম দুর্নীতির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২১টি টেলিকম সার্কলের জন্য ১৬টি সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেওয়ার দর হেঁকেছিল হিমাচল ফিউচারিস্টিক কমিউনিকেশনস (এইচএফসিএল), ইজরায়েলি সংস্থা বেজেক এবং তাইল্যান্ডের সিনাবাত্রা। সব মিলিয়ে তারা ৮৫ হাজার কোটি টাকা দর উঠেছিল।
২০২১
সুখরামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হরিয়ানা টেলিকম লিমিটেড (এইটিএল)-কে টেলিকম চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার বদলে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন তিনি। সরকারি পদের অপব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছিল। তার জেরেই ওই সংস্থাটি ৩০ কোটি টাকার কেব্ল পাতার চুক্তি পায়। ওই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে পাঁচ বছরের জেল হয় সুখরামের। তবে সুখরামের বাড়ি থেকে উদ্ধার বাকি কোটি কোটি টাকার উৎস কী? সে জবাব এখনও অজানা সিবিআইয়ের।
২১২১
সিবিআইয়ের দাবি, সুখরাম এবং তাঁর ‘বাছাই করা’ আধিকারিকেরা ২০,০০০ কোটি টাকার টেলিকম যন্ত্রপাতি কিনেছিলেন। দরপত্র নিয়ে তদন্ত শেষ হলে এই টাকার অঙ্কটি বাড়তে পারে বলেও মনে করে সিবিআই।