Foreign Investors in Indian Stock Market know their dominance and Importance dgtl
Foreign Investors
মুখ ঘোরাতেই কোটি কোটি টাকা গায়েব! ‘মান ভাঙিয়ে’ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফেরাতে পারবে সেবি?
ভারতীয় শেয়ার বাজার থেকে অক্টোবর এবং নভেম্বরে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বিদেশি লগ্নিকারীরা। কেন তাঁরা মুখ ঘুরিয়ে রয়েছেন? কী ভাবেই বা তাঁদের বাজারে ফেরাবে সেবি ও সরকার?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
একেবারেই দিন ভাল যাচ্ছে না ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের। চলতি বছরের অক্টোবর এবং নভেম্বরে হু হু করে নেমেছে সূচক। সেনসেক্স ও নিফটির এই পতনের নেপথ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারত থেকে মুখ ফেরানোকেই মূলত দায়ী করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতি আর্থিক সঙ্কট ডেকে আনতে পারে বলেও মিলেছে সতর্কবার্তা।
০২১৮
ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দাবি, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বম্বে ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিদেশি লগ্নিকারীরা তুলে নিয়েছেন আনুমানিক ২০ হাজার কোটি টাকা। ৪ থেকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে ওই অর্থ প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে এই বিনিয়োগকারীরা চিন, জাপান এবং হংকংয়ের বাজারে হাত উপুড় করে লগ্নি করছেন বলে জানা গিয়েছে।
০৩১৮
এ দেশে বিদেশি লগ্নিকারীদের মূলত দু’টি ভাগে ভাগ করেছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সেবি (সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া)। প্রথম শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বলা হয়, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বা এফআইআই (ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরস)।
০৪১৮
দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট)। ১৯৯৫ সালের সেবি আইন অনুযায়ী, এফআইআই ভুক্তরা ভারতীয় বাজারে ইক্যুইটি শেয়ারে ১০ শতাংশের কম লগ্নি করতে পারেন। আইপিওতে বিনিয়োগের অধিকারও রয়েছে তাঁদের।
০৫১৮
কিন্তু কোনও বিদেশি বিনিয়োগকারী ১০ শতাংশ বা তার বেশি ইক্যুইটি শেয়ারে লগ্নি করলে তাকে এফডিআইয়ের অন্তর্ভুক্ত করে সেবি। ২০১৪ সালে ভারতীয় বাজারে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ছিল এক লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। গত ১০ বছরে বহু বার এর ব্যাপক ওঠানামা সহ্য করেছে সেনসেক্স ও নিফটি।
০৬১৮
এ দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আসার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতিগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। ফলে এ দেশের জিডিপি যথেষ্ট ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বাজারে লগ্নি করলে লাভের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন বিদেশি লগ্নিকারীরা।
০৭১৮
দ্বিতীয়ত, ভারতে যুব জনসংখ্যার হার অনেক বেশি। এর জেরে এ দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রের চাহিদার সূচক ঊর্ধ্বমুখী। ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলির ভাল লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বাজার বিদেশি লগ্নিকারীদের চুম্বকের মতো টানে বলেও মনে করা হচ্ছে।
০৮১৮
তৃতীয়ত, বিদেশি লগ্নি টানতে বেশ কিছু নীতিতে বদল এনেছে কেন্দ্র। বাজার অর্থনীতির বহু আইন সংশোধন করে তুলনামূলক সহজ করা হয়েছে। ছোট ও মাঝারি পুঁজির ব্যবসায় ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ছাড়ের ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে আইপিও এবং স্টার্ট আপের বৃদ্ধির উপর নজর দেওয়া হয়েছে।
০৯১৮
আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআইয়ের কড়া পদক্ষেপের জেরে বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। অন্য দিকে, শেয়ার বাজারের উপর ভাল রকমের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেবির। এগুলিকে বিদেশি লগ্নি টানার অনুকূল পরিবেশ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
১০১৮
এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে কেন ভারতের বাজার থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বিদেশি লগ্নিকারীরা? এর জন্য প্রাথমিক ভাবে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, পূর্ব ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জার্মানিতে আচমকা সরকারের পতন, পশ্চিম এশিয়ায় ইজ়রায়েলের সঙ্গে হামাস ও হিজ়বুল্লার সংঘর্ষের ক্ষতিকর প্রভাব অর্থনীতির উপর পড়তে শুরু করেছে।
১১১৮
পাশাপাশি, আগামী দিনে আর্থিক মন্দার করাল গ্রাসে ফের এক বার গোটা দুনিয়া পড়তে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ফলে ভারত-সহ বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশ থেকে বিদেশি লগ্নিকারীদের টাকা সরানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভাল রিটার্নের আশায় আমেরিকা, চিন এবং জাপানের বাজারে বিনিয়োগ করছেন তাঁরা।
১২১৮
চলতি বছরের নভেম্বরে দ্বিতীয় বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শপথ নেবেন তিনি। ট্রাম্প কুর্সি পাওয়ায় আমেরিকার অর্থনীতি রকেট গতিতে ছুটবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বিদেশি লগ্নিকারীরা এখন থেকে সেখানে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন।
১৩১৮
অন্য দিকে, ‘ফিস্কাল স্টিমুলাস’ ঘোষণা করেছে চিন। এর মাধ্যমে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে বাজারে টাকা ছড়ানোয় গতি এনেছে বেজিং। পাশাপাশি সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী করেছে জাপানি ব্যাঙ্ক। আর তাই ড্রাগন ও টোকিয়োর বাজারে ঢেলে বিনিয়োগ করছেন বিদেশি লগ্নিকারীরা।
১৪১৮
এফআইআই এবং এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে আমেরিকার বন্ডে বিনিয়োগ করার প্রবণতা রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক (পড়ুন ফেডারেল রিজার্ভ) সুদের হার বৃদ্ধি করায় সেখান থেকে বেশি লাভের সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা। তা ছাড়া ডলারের নিরিখে টাকার দামের পতনকেও বিদেশি লগ্নির মুখ ফেরানোর অন্যতম কারণ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে।
১৫১৮
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় বাজারে কিছুটা মন্দা দেখা গিয়েছে। বিদেশি লগ্নিকারীরা এ দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। সে ক্ষেত্রে এ দেশের সংস্থাগুলির বৃদ্ধির সূচক নিম্নমুখী হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে, কমবে লাভের অঙ্ক। ফলে অন্য দেশের বাজারে বিনিয়োগের উৎসাহ হারাচ্ছেন এফআইআই এবং এফডিআইয়ের লগ্নিকারীরা।
১৬১৮
প্রসঙ্গত, বিদেশি লগ্নিকারীদের ধরে রাখতে অবিলম্বে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়ন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘গতি শক্তি’ প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
১৭১৮
তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে রেপো রেটে কোনও বদল আনেনি আরবিআই। ফলে বাজারে স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে। ডিসেম্বরে মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে এই রেপো রেটে বদল করতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সেই পদক্ষেপ করলে বিদেশি লগ্নিকারীরা ফের মুম্বইমুখী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৮১৮
অন্য দিকে, প্রবাসী ভারতীয়দের টানতে বাজারের বেশ কিছু নিয়ম শিথিল করেছে সেবি। আগামী দিনে বম্বে ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এর সুফল পাবে বলে আর্থিক বিশ্লেষকেরা যথেষ্ট আশাবাদী। দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে বিদেশি লগ্নিকারীদের পেতে এফআইডি টানার উপরের জোর দিচ্ছে মোদী সরকার।