Film Sector 36 is inspired by the 2006 Nithari case in Noida dgtl
Sector 36
নৃশংস খুন, নরমাংস ভক্ষণ, শবদেহের সঙ্গে সঙ্গম! ওটিটির দৌলতে আবার চর্চায় ভয়ঙ্কর নিঠারি হত্যাকাণ্ড
‘সেক্টর ৩৬’ নামের ছবিটিকে নয়ডার নিঠারি হত্যার রোমহর্ষক ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করেছেন পরিচালক আদিত্য নিম্বলকর।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বস্তি থেকে একের পর এক শিশু অপহরণ। অন্ধকার নামলেই ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে কেটে টুকরো টুকরো করে নরমাংস ভক্ষণ! তার আগে শিশুদের উপর শারীরিক নির্যাতন।
০২২০
খুন, নরমাংস ভক্ষণ এবং শবদেহের সঙ্গে সঙ্গমের মতো একাধিক অপরাধে যুক্ত অপরাধীকে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে ‘সেক্টর ৩৬’ নামের ছবিটিতে। নয়ডার নিঠারি হত্যার রোমহর্ষক ঘটনা অবলম্বনে এই ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক আদিত্য নিম্বলকর।
০৩২০
নিঠারি হত্যাকাণ্ড। ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডগুলির মধ্যে অন্যতম। সেই হত্যাকাণ্ডের খণ্ড খণ্ড ঘটনা জুড়ে গল্পের ছন্দে বেঁধেছেন পরিচালক ও কাহিনিকার। ঘা ঘিনঘিনে দৃশ্য দেখে ভয়ে-ঘেন্নায় ছটফট করলেও ছবি শেষ না করে উঠতে পারেননি বেশির ভাগ দর্শকই।
০৪২০
গল্প, চিত্রনাট্য এবং অভিনয়ের সঠিক মিশেলে টানটান ‘সেক্টর ৩৬’ ছবিটি দেখতে দেখতে উঠে আসে একাধিক আর্থ-সামাজিক সমস্যা। এক পুলিশ আধিকারিক ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে প্রশাসনের দুর্নীতির কবলে পড়েন।
০৫২০
সালটা ছিল ২০০৬। নয়ডার নিঠারি গ্রামের কাছ থেকে একের পর এক শিশু নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল। ওই বছরেরই ৩০ ডিসেম্বর সকালে সেক্টর ৩৬-এ মনিন্দর সিংয়ের বাড়ির পিছন থেকে উদ্ধার হয় খুলি ও নরকঙ্কাল।
০৬২০
এর পর তদন্ত শুরু হতেই ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। একে-একে উদ্ধার হয় মোট ১৭টি খুলি ও কঙ্কাল। এর পরই মনিন্দর সিংহ ও তাঁর সহকারী সুরিন্দর কোলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
০৭২০
‘সেক্টর ৩৬’ সিনেমায় সুরিন্দর কোলির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত মাসে। পর্দায় যাঁর নাম প্রেম সিংহ। আপাত শান্ত নিরীহ প্রেম যে এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে দীপক ডোবরিয়ালকে।
০৮২০
আসল গল্প শুরু হয় যখন নয়ডার সেক্টর ৩৬-এ একটি বাচ্চা ছেলে বল খুঁজতে গিয়ে একটি পচা হাত খুঁজে পায়। প্রথমে পুলিশ এতে আমল দেয়নি। পুলিশ দাবি করে, কোনও জন্তু মুখে করে এনে এই হাতটি ওখানে ফেলে গিয়েছে। সে রকম উদ্বেগের কিছু হয়নি বলেই গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে পুলিশ। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য অনেক দিন পর্যন্ত এই রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি।
০৯২০
তার পর থেকে নিঠারি গ্রাম থেকে নিখোঁজ হতে শুরু করে একের পর এক বাচ্চা ছেলেমেয়ে। হঠাৎ করেই নিখোঁজের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সকলের নজরে পড়ে বিষয়টি। তদন্ত নেমে বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশ আধিকারিকেরা পৌঁছে যান মনিন্দর সিংহ পান্ধেরের বাংলোয়। একে একে রহস্যের পর্দা উঠতে থাকে নিঠারি হত্যাকাণ্ডের উপর থেকে।
১০২০
পেশায় ব্যবসায়ী মনিন্দর সেক্টর ৩১-এর ডি-৫ বাংলোর মালিক ছিলেন। সুরিন্দর কোলি নামে এক যুবক ২০০৩ সালে মনিন্দরের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে যোগ দেওয়ার পরই নিঠারি গ্রাম থেকে একের পর এক শিশু এবং মহিলা নিখোঁজ হতে থাকেন।
১১২০
কিছু দিন তদন্ত চালিয়ে পুলিশ মনিন্দরের বাংলোর পিছনের নর্দমা থেকে নরকঙ্কাল ভর্তি অনেকগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মনিন্দর এবং সুরিন্দরকে।
১২২০
তাঁদের গ্রেফতারের ঠিক এক দিন পর বাংলোর পাশের একটি জায়গায় মাটি খুঁড়ে অনেকগুলি নরকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। অপরাধীদের শাস্তির দাবি উঠতে থাকে বিভিন্ন মহলে। চাপে পড়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়।
১৩২০
তদন্ত চলাকালীন অভিযোগ ওঠে যে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে খেয়ে ফেলতেন পান্ধের এবং তাঁর বা়ড়ির পরিচারক সুরিন্দর।
১৪২০
তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি ছিল, সুরিন্দর নাকি তার স্বীকারোক্তিতে জানান যে, তিনি বাচ্চাদের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে এনে তাদের খুন করতেন। সুরিন্দর নাকি এ-ও স্বীকার করেছিলেন যে, খুনের পর তিনি মৃতদেহগুলির সঙ্গে সঙ্গম করতেন এবং শেষে মৃতদেহগুলি কেটে রান্না করা হত। সব শেষে পড়ে থাকা কঙ্কালগুলি বাংলোর পিছনের নর্দমায় ফেলে দিয়ে আসতেন সুরিন্দর।
১৫২০
পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালগুলির মধ্যে একটি ছিল বাঙালি তরুণীর কঙ্কাল। যৌন নির্যাতনের পরে খুন হতে হয় তাঁকে, এমনটাই অভিযোগ ছিল। সিবিআই তদন্তে উঠে আসে, পান্ধেরের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন পিঙ্কি। যৌন নির্যাতনের পরে খুন করা হয় তাঁকে। তার পর তাঁর দেহও নাকি খেয়ে ফেলেন দুই অভিযুক্ত।
১৬২০
৬০ দিনের পুলিশ হেফাজতের পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি সিবিআই। মনিন্দর সিংহ পান্ধারের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ আনা হয়। পর্নোগ্রাফি চক্রের সঙ্গেও তাঁর যোগ থাকতে পারে বলে অনুমান করেন তদন্তকারীরা।
১৭২০
দীর্ঘ দিন ধরে এই মামলা চলার পর পরিচারিকা পিঙ্কিকে অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় পান্ধের এবং কোহলিকে দোষী সাব্যস্ত করে গাজ়িয়াবাদের সিবিআই আদালত।
১৮২০
মনিন্দর সিংহ পান্ধের ও সুরিন্দর কোলিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। ঘটনাটিকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে উল্লেখ করে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক।
১৯২০
মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচতে অনেক বার আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মনিন্দর। তবে বার বার তা খারিজ করা হয়েছে। নিঠারিকাণ্ডের সেই দুই মূল অভিযুক্ত মনিন্দর এবং সুরিন্দরের ফাঁসির সাজা রদ করে দেয় ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। সুরিন্দরকে ১২টি মামলায় এবং মনিন্দরকে দু’টি মামলায় ‘বেকসুর’ ঘোষণা করা হয়।
২০২০
‘ভারতের সবচেয়ে নৃশংস হত্যা’ বলে আলোচিত হলেও মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এই মর্মে ফাঁসির সাজা রদ করে দেয় আদালত।