Advertisement
২৮ জুলাই ২০২৫
Europe Backing Ukraine

ট্রাম্প-বিচ্ছেদেও অভাব নেই বন্ধুর, কেন জ়েলেনস্কির ‘প্রেমে পাগল’ গোটা পশ্চিম ইউরোপ?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানোয় কপাল পুড়েছে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির। কিভকে দেওয়া যাবতীয় সামরিক সাহায্য বন্ধ করেছে ওয়াশিংটন। যদিও ইউক্রেনের প্রতি ‘অন্ধ সমর্থন’ বজায় রেখেছে পশ্চিম ইউরোপ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫ ১০:৩৬
Share: Save:
০১ ২২
Europe Backing Ukraine

ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তর্কাতর্কি! শান্তি সমঝোতা ও খনি চুক্তি ভেস্তে দিয়ে ‘চূড়ান্ত অবাধ্যতা’! সেই ঘটনার পরই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের রক্তচাপ বাড়িয়ে যাবতীয় সামরিক সাহায্য বন্ধ করার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হেন পরিস্থিতিতেও কিভের হাত ছাড়তে নারাজ পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্র।

০২ ২২
Europe Backing Ukraine

ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি থেকে শুরু করে স্পেন, ডেনমার্ক এবং পর্তুগাল। ইটালি হোক বা সুইডেন-নরওয়ে। পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশই গত তিন বছর ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অন্ধের মতো ইউক্রেনকে সমর্থন করে চলেছে। কিন্তু কেন? এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

০৩ ২২
Europe Backing Ukraine

প্রথমত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই সম্প্রসারণবাদী নীতি নেয় সোভিয়েত রাশিয়া। পশ্চিম দিকে ধীরে ধীরে সীমান্ত বৃদ্ধি করতে থাকে মস্কো। ফলে বাল্টিক এলাকায় রকেটগতিতে বৃদ্ধি পায় ক্রেমলিনের প্রভাব। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই রুশ আগ্রাসনকে সবচেয়ে বড় বিপদ বলে চিহ্নিত করে পশ্চিম ইউরোপ।

০৪ ২২
Europe Backing Ukraine

১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর এই ‘ফাঁড়া’ পুরোপুরি কেটে গিয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও বাল্টিক দেশগুলি এবং মস্কোর মাঝে একটি বাফার এলাকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ইউক্রেন। কিভের জন্যই ইইউ বা আমেরিকার শক্তিজোট নেটোয় থাকা ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে এত দিন রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করতে হয়নি।

০৫ ২২
Europe Backing Ukraine

কিন্তু, ইউক্রেনের পতন হলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য দিকে বাঁক নেবে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নেটোভুক্ত দেশগুলির ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করবে মস্কো। এতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়ার মতো দেশগুলিতে রয়েছে রুশ আগ্রাসনের আতঙ্ক।

০৬ ২২
Europe Backing Ukraine

পোল্যান্ড-সহ পূর্ব ইউরোপের বাল্টিক এলাকার রাষ্ট্রগুলির উপর দশকের পর দশক ধরে বজায় ছিল সোভিয়েত আধিপত্য। সেই স্মৃতি সেখানকার আমজনতা বা সরকার ভুলে গিয়েছে, এমনটা নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণে প্রমাদ গুনছেন তাঁরা। মস্কোর এই আগ্রাসনের মধ্যে পুরনো সোভিয়েত সাম্রাজ্য ফেরানোর নীল নকশা লুকিয়ে আছে বলে মনে করছে ইইউ এবং বাল্টিক এলাকার দেশগুলি।

০৭ ২২
Europe Backing Ukraine

একই কথা জার্মানির ক্ষেত্রেও সত্যি। সেখানেও সম্ভাব্য রুশ আক্রমণের আতঙ্ক রয়েছে। আর তাই কিভকে লাগাতার হাতিয়ার জুগিয়ে চলেছে বার্লিন। অন্য দিকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড।

০৮ ২২
Europe Backing Ukraine

দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনকে বলা হয় ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’। উত্তর গোলার্ধের মহাদেশটির জ্বালানি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এত দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে কিভ। ইউক্রেনীয় শস্যেই ইইউ ভুক্ত সমস্ত দেশগুলির আমজনতার পেট ভরে, একথা বললে অত্যুক্তি হবে না। পাশাপাশি, পূর্ব ইউরোপের দেশটির মধ্যে দিয়েই পশ্চিম ইউরোপে গ্যাস পরিবহণ করে রাশিয়া।

০৯ ২২
Europe Backing Ukraine

যুদ্ধে ইউক্রেনের হার হলে পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে পড়বে তার বড় প্রভাব। সে ক্ষেত্রে জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলিতে দেখা দিতে পারে খাদ্যসঙ্কট। দ্বিতীয়ত, ইইউ ভুক্ত দেশগুলির জ্বালানির সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধে পর রুশ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে তার মাসুল দিতে হবে পশ্চিম ইউরোপ এবং বাল্টিক দেশগুলিকে।

১০ ২২
Europe Backing Ukraine

তৃতীয়ত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ‘স্নায়ু যুদ্ধ’র সময়ে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে আমেরিকার নেতৃত্বে ইউরোপীয় দেশগুলি গড়ে তোলে একটি শক্তিজোট। এরই নাম ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন’ (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন বা নেটো)। ১৯৪৯ সালে তৈরি হওয়া এই নেটোর বর্তমানে সদস্য সংস্থা ৩২।

১১ ২২
Europe Backing Ukraine

কিন্তু, এই ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই নেটোয় দেখা দিয়েছে ফাটল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিমধ্যেই নেটো ত্যাগের ইঙ্গিত পর্যন্ত দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এই চুক্তি সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তেমন কোনও খরচই করে না। ফলে প্রায় গোটা পশ্চিম ইউরোপের নিরাপত্তার বোঝা বইতে হচ্ছে ওয়াশিংটনকে।

১২ ২২
Europe Backing Ukraine

নেটোর পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তৃতীয় কোনও দেশ এই শক্তিজোটের যে কোনও রাষ্ট্রকে আক্রমণ করলে, সকলে মিলে সেই হামলা প্রতিহত করবে। কিন্তু আমেরিকা শেষ পর্যন্ত নেটো ছাড়লে শক্তিজোটটি যে অনেকাংশেই দুর্বল হয়ে পড়বে, তা বলা বাহুল্য।

১৩ ২২
Europe Backing Ukraine

চতুর্থত, নেটোভুক্ত দেশগুলির মধ্যে তুরস্কের এই শক্তিজোট ত্যাগের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বেড়েছে আঙ্কারার ঘনিষ্ঠতা। তাই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের সংঘবদ্ধ রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পশ্চিম ইউরোপ।

১৪ ২২
Europe Backing Ukraine

পঞ্চমত, যুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে ইউক্রেনের বুচা ও মারিয়োপোল এলাকায় রুশ ফৌজের বিরুদ্ধে উঠে যুদ্ধাপরাধ এবং নৃশংসতার অভিযোগ। সেখানকার হাজার হাজার নিরীহ জনতাকে নির্বিচারে পুতিন ফৌজ হত্যা করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি মানতে পারেনি পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি। কিভের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি রক্ষার স্লোগান তুলেছে তারা।

১৫ ২২
Europe Backing Ukraine

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত সহ্য করতে হওয়ায় আগ্রাসনের কড়া সমালোচনা করে থাকে তারা। স্বাধীনতা হারিয়ে ইউক্রেনের রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল আপত্তি রয়েছে তাদের।

১৬ ২২
Europe Backing Ukraine

আর তাই ইউক্রেনকে সামরিক এবং অন্যান্য সাহায্য বজায় রাখার কথা একরকম ঘোষণাই করে দিয়েছে ফ্রান্স এবং জার্মানি। মার্কিন সফর সেরে সোজা লন্ডনে গিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে দেখা করেন জ়েলেনস্কি। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্টারমারের থেকে বিপুল আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন তিনি।

১৭ ২২
Europe Backing Ukraine

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ চালাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্ষমতায় এসেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হন ট্রাম্প। এর জন্য শান্তি সমঝোতায় রাজি হতে জ়েলেনস্কিকে ওয়াশিংটনে ডাকেন তিনি। পাশাপাশি ইউক্রেনের সঙ্গে খনি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল তাঁর।

১৮ ২২
Europe Backing Ukraine

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি হওয়া ওই বৈঠককে শান্তি সমঝোতার ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখান জ়েলেনস্কি। আর তখনই ক্ষিপ্ত ট্রাম্প বলে ওঠেন, ‘‘আপনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলতে বসেছেন। আর তাই সমঝোতার পথে হাঁটতে চাইছেন না।’’

১৯ ২২
Europe Backing Ukraine

ওই সময়ে চুপ করে বসে না থেকে পাল্টা গলা চড়ান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও। তিনি বলেন, ‘‘আপনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিথ্যারই পুনরাবৃত্তি করছেন। রাশিয়াকে সুযোগ করে দিচ্ছেন। মস্কো আমাদের জায়গা চুরি করছে, সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে, শিশুদের অপহরণ পর্যন্ত করছে।’’ এর পরই বৈঠক ভেস্তে যায়।

২০ ২২
Europe Backing Ukraine

ট্রাম্প-জ়েলেনস্কি বৈঠক ভেস্তে পাওয়ার পর ইউক্রেনের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ব্রিটেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে কিভকে ২৮০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন ইংরেজ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। ফলে আগামী দিনে লড়াই আরও ছড়িয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার বিদেশনীতি কোন খাতে বয়ে চলে, সেটাই এখন দেখার।

২১ ২২
Europe Backing Ukraine

ট্রাম্প-জ়েলেনস্কি নিষ্ফলা বৈঠকের পর বিষয়টি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা এবং বিদেশনীতির প্রধান কাজা কালাস। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘আজ এটা প্রমাণিত যে ‘মুক্ত বিশ্ব’ তৈরি করার জন্য নতুন নেতার প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের অর্থাৎ ইউরোপীয়দেরই গ্রহণ করতে হবে।’’

২২ ২২
Europe Backing Ukraine

এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) করা পোস্টে ইউক্রেনকে ইউরোপ বলে উল্লেখ করেছেন কালাস। ‘‘আমরা সব সময়ে কিভকে সমর্থন করে যাব যাতে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে তারা লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।’’ সেখানে লিখেছেন তিনি। ব্রিটেন বা ইউরোপীয়ন ইউনিয়ানের এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy