Advertisement
১৮ মার্চ ২০২৫
Earth Observation Satellite

কারণ কি শুধুই খরা-বন্যার পূর্বাভাস? ড্রাগনের কাঁধে চেপে অন্তরীক্ষে ছুট লাগাচ্ছে আফ্রিকার গরিব দেশ

আগামী বছর চিনা সহযোগিতায় মহাশূন্য তৃতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাবে ইথিওপিয়া। অন্তরীক্ষের দৌড়ে আমজনতার কতটা উপকার করতে পারবে আফ্রিকার এই দেশ?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৮
Share: Save:
০১ ১৯
Earth Observation Satellite

মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই আসবে আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, চিন, ভারত বা জাপানের নাম। আফ্রিকার কোনও দেশ নভো গবেষণার পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, এ যেন এক অলীক কল্পনা। বাস্তব কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। এ ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়েছে ইথিওপিয়া। নিত্য নতুন কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠাচ্ছে ‘অন্ধকার মহাদেশ’-এর স্থলবেষ্টিত এই রাষ্ট্র।

০২ ১৯
Earth Observation Satellite

আদ্দিস আবাবার মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটিকে গোটা দুনিয়া চেনে ‘ইথিওপিয়ান স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড জিয়োস্পেশ্যাল ইনস্টিটিউট’ বা ইএসএসজিআই নামে। আগামী বছর পৃথিবীর উপর পর্যবেক্ষণ চালাতে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কথা ঘোষণা করেছে তারা। এই নিয়ে তৃতীয় বার এই ধরনের মিশনে নামছে ইথিওপিয়ার মহাকাশ সংস্থা। তবে এ ব্যাপারে চিনের সহযোগিতা পেয়েছে তারা।

০৩ ১৯
Earth Observation Satellite

ইএসএসজিআই জানিয়েছে, নতুন যে কৃত্রিম উপগ্রহটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হবে, তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বেশ উন্নত। পূর্বসূরিদের তুলনায় উচ্চ রেজ়োলিউশনের ছবি তুলতে সক্ষম ওই নভোযান। ফলে সেগুলি বিশ্লেষণ করে এই দুনিয়ার বহু অজানা রহস্যের সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী আফ্রিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

০৪ ১৯
Earth Observation Satellite

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন ইএসএসজিআইয়ের উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ বিভাগের এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর তেসফায়ে ফুফার। তিনি জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেখানে কোনও ফাঁক নেই। যদিও এই মিশনে বেজিঙের থেকে কত পরিমাণে আর্থিক সাহায্যে এসেছে, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

০৫ ১৯
Earth Observation Satellite

আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ইথিওপিয়ার উত্থান ধুমকেতুর মতো। তার জন্য অবশ্য চিনের হাত থাকাকে মূলত দায়ী করে থাকেন বিশ্লেষকেরা। ইএসএসজিআইয়ের প্রতিটা মিশনের সঙ্গে শুরুর দিন থেকেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে বেজিং। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, এ ব্যাপারে মোটা টাকা খরচের সময়ে হাত উপুড় করতেও পিছিয়ে আসেনি ড্রাগন সরকার। আর এখান থেকেই শুরু হয় সন্দেহ। কোনও মতলব ছাড়া বেজিং টাকা খরচ করছে, এমনটা কষ্টকল্পিত।

০৬ ১৯
Earth Observation Satellite

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চিনা সহায়তায় প্রথম বার কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্য পাঠায় আদ্দিস আবাবা। প্রথম প্রচেষ্টাতেই সেটিকে পৃথিবীর নিম্নকক্ষে স্থাপন করতে সক্ষম হন ইথিওপিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। উপগ্রহটির নাম ছিল ‘ইথিওপিয়ান রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট-১’ বা ইটিআরএসএস-১। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষি গবেষণা, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ।

০৭ ১৯
Earth Observation Satellite

এই ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহের উৎক্ষেপণ করে আদ্দিস আবাবা। এর নাম দেওয়া হয় ‘ইথিওপিয়া স্মার্ট রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট’। এর সাহায্যে মহাজাগতিক ঘটনাবলীর উপর টানা নজরদারির সুযোগ পাচ্ছেন আফ্রিকার দেশটির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এক কথায় মহাকাশ গবেষণায় আরও উন্নত স্তরে পৌঁছনোর উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় উপগ্রহটিকে ব্যবহার করছেন তাঁরা।

০৮ ১৯
Earth Observation Satellite

ইথিওপিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, তৃতীয় উপগ্রহটিতে বেশ কিছু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে থাকবে থার্মাল ইমেজিং ব্যবস্থা। ফলে পৃথিবীর উপর নজরদারি চালানোর সময়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম খবর ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন তাঁরা। এতে জীবনহানি বা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনার সুযোগ পাবে আদ্দিস আবাবা।

০৯ ১৯
Earth Observation Satellite

এ ক্ষেত্রে অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে তিনটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ইথিওপিয়া। সেগুলি হল, বন্যা, খরা এবং বনাঞ্চল ধ্বংস। এগুলির প্রতিটির উপর জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশে সম্পর্ক যুক্ত। ফলে উপগ্রহের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে আফ্রিকার উপর এর প্রভাব কতটা পড়ছে বা পড়তে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করবেন ইএসএসজিআইয়ের গবেষকেরা। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দিকে নজরদারির কথা বলেছেন তাঁরা।

১০ ১৯
Earth Observation Satellite

গত কয়েক বছর ধরে ইথিওপিয়ায় দ্রুত হারে বাড়ছে নগরায়ন। সেই সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে বিপুল খরচ করছে সরকার। এগুলির ক্ষতিকর প্রভাব প্রকৃতির উপর কতটা পড়ছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার আশাও করছেন ইথিওপিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি মহাশূন্য থেকে কৃষি এবং জন সম্পদের উপরেও কড়া নজর রাখবে আদ্দিস আবাবার তৃতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ।

১১ ১৯
Earth Observation Satellite

৫৪টি দেশ নিয়ে গঠিত আফ্রিকার মধ্যে হাতে গোটা কয়েকটি রাষ্ট্র মহাকাশ গবেষণায় নিযুক্ত হয়েছে। সেই তালিকায় অবশ্যই থাকবে ইথিওপিয়ার নাম। দেরিতে শুরু করলেও দ্রুত মহাশূন্যের দখল নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আদ্দিস আবাবার। যদিও উপগ্রহের সংখ্যা এবং প্রকারভেদের দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে ইথিওপিয়া।

১২ ১৯
Earth Observation Satellite

আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠিয়েছে মিশর। ১৯৯৮ সালে এই মহাদেশের প্রথম রাষ্ট্র হিসাবে অন্তরীক্ষে নভোযান পাঠানোর কৃতিত্ব অর্জন করে ‘পিরামিড-রাষ্ট্র’। একাধিক পর্যবেক্ষণ এবং যোগাযোগ সংক্রান্ত কৃত্রিম উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করতে পেরেছে কায়রো।

১৩ ১৯
Earth Observation Satellite

‘পিরামিডভূমি’র মহাকাশ গবেষণায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া, চিন এবং ফ্রান্স। মূলত এই তিন দেশের সহায়তায় কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে মহাশূন্যে পাঠিয়েছে মিশর। কায়রোর মোট সফল উৎক্ষেপনের সংস্থা ১০। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে মাত্র দুই বেশি।

১৪ ১৯
Earth Observation Satellite

প্রোটিয়াদের মহাকাশ গবেষণায় বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মূলত ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সাহায্যে সেগুলির সফল উৎক্ষেপণ করতে পেরেছে কেপটাউন। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা নাইজ়েরিয়া এবং আলজিরিয়ার ছ’টি করে কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর নিম্নকক্ষে রয়েছে। এগুলির উৎক্ষেপনে বড় ভূমিকা নিয়েছে রাশিয়া, চিন এবং ব্রিটেন।

১৫ ১৯
Earth Observation Satellite

ইথিওপিয়ার মতো ফ্রান্সের সাহায্যে মরক্কোও এখনও পর্যন্ত দু’টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠাতে পেরেছে। বিশ্লেষকদের দাবি, ২১ শতকে আফ্রিকার দেশগুলি মহাকাশ প্রযুক্তির কৌশলগত গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে। ফলে এ ব্যাপারে উন্নতির জন্য এগিয়ে আসছে একের পর এক দেশ।

১৬ ১৯
Earth Observation Satellite

দশকের পর দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানি দেখেছে আফ্রিকা। এগুলি মোকাবিলায় কৃত্রিম উপগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম। মিশর, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নাইজিরিয়ার মতো দেশগুলির কাছে যোগাযোগ, ফৌজি নজরদারি এবং ভূ-পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত আলাদা আলাদা শ্রেণির কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে।

১৭ ১৯
Earth Observation Satellite

বিশ্লেষকদের দাবি, ইথিওপিয়ার মহাকাশ গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে চিনের সমর্থন পাওয়ায় আদ্দিস আবাবার অন্তরীক্ষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মহাদেশের মহাকাশ গবেষণায় বড় ভূমিকা রয়েছে ড্রাগনের। এ ক্ষেত্রে গবেষণা, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক, তিন ধরনের সাহায্যই দিচ্ছে বেজিং। বিষয়টিকে অবশ্য মোটেই ভাল চোখে দেখছে না পশ্চিমি দুনিয়া। তাদের আশঙ্কা, এ ভাবে ধীরে ধীরে গোটা মহাদেশে নিজের পা মজবুত করার ষড়যন্ত্র করছে চিন।

১৮ ১৯
Earth Observation Satellite

আগামী বছর তৃতীয় বার সফল ভাবে কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠাতে পারলে বড় কৃতিত্ব অর্জন করবে ইথিওপিয়া। সে ক্ষেত্রে পৃথিবীর উপর পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির দিক থেকে পূর্ব আফ্রিকায় শীর্ষস্থান দখল করবে আদ্দিস আবাবা। শুধু তা-ই নয়, উপগ্রহভিত্তিক গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার মেগা সুযোগ চলে আসবে ইএসএসজিআইয়ের সামনে।

১৯ ১৯
Earth Observation Satellite

তবে আফ্রিকার দেশগুলির নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মহাকাশ গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, এখানকার অধিকাংশ রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। বেশ কয়েকটি দেশে তো লম্বা সময় ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। ইথিওপিয়ারও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে মহাকাশ গবেষণাকে আদ্দিস আবাবা কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy