Sting Operation in Sushant Singh Rajput Death Case Alleges Rhea Chakraborty More Prominently dgtl
bollywood
সুশান্ত কাণ্ডে এ বার স্টিং অপারেশন, রিয়ার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ নায়কের ট্রেনারের
সেই ‘স্বাভাবিক’ সুশান্ত কী ভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে পারেন মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে? হিসেব মেলাতে পারছেন না সমীর। পারছেন না অনেকেই। এখনও অবিশ্বাসের ঘোর কাটছে না সুশান্তের পরিজনদের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ১২:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
যত সময় এগোচ্ছে, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুরহস্যে ‘স্বজনপোষণ’-এর পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল দৃঢ় হচ্ছে রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। এই পালাবদল স্পষ্ট করে ধরা পড়েছে সম্প্রতি সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ পটনায় রিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্য-সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পরই।
০২২৭
এ বার রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের তিরকে আরও তীক্ষ্ণ করল একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলের স্টিং অপারেশন। সেখানে চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে কথা বলেছেন সুশান্তের ফিটনেস ট্রেনার সমীর আহমেদের সঙ্গে।
০৩২৭
গত পাঁচ বছর সমীরের তত্ত্বাবধানে শরীরচর্চা করেছেন সুশান্ত। পেশাদার সম্পর্কের বাইরে তিনি সুশান্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন বলে জানান সমীর। তাঁর বিস্ফোরক দাবি, সুশান্ত কী ওষুধ খাবেন, সেটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতেন রিয়া।
০৪২৭
ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে রিয়া তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন, সুশান্ত অবসাদের শিকার ছিলেন এবং দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক অবসাদের ওষুধ খাচ্ছিলেন। কিন্তু সত্যিই কি পর্দার এম এস ধোনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন? এ প্রশ্ন এ বার উঠে আসছে ট্রেনার সমীরের বক্তব্যেও।
০৫২৭
স্টিং অপারেশনে তিনি দাবি করেছেন, সুশান্তের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়েছিল গত ১ জুন। তার আগে ২৯ মে নিজের মাকে হারিয়েছিলেন সমীর। সে কথা জানতে পেরে নিজেই তাঁকে ফোন করেছিলেন সুশান্ত।
০৬২৭
ফোনে কথা বলার সময় সুশান্ত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন বলে দাবি সমীরের। যে কোনও প্রয়োজনে সমীর আসতে পারেন তাঁর কাছে, এমন আশ্বাসও নাকি এসেছিল বড় পর্দার সত্যান্বেষীর কাছ থেকে। সেই ‘স্বাভাবিক’ সুশান্ত কী ভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে পারেন মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে? হিসেব মেলাতে পারছেন না সমীর। পারছেন না অনেকেই। এখনও অবিশ্বাসের ঘোর কাটছে না সুশান্তের পরিজনদের।
০৭২৭
তাঁর দিদির বক্তব্য, গত ৮ জুন তিনি রিয়ার ফোন পান। রিয়া তাঁকে জানান, সুশান্তের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়েছে। তিনি সুশান্তের বাড়ি ছেড়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজের বাড়িতে। যাওয়ার সময় রিয়া তাঁর নিজের এবং সুশান্তের কিছু জিনিস নিয়ে যান বলে দাবি সুশান্তের দিদির। তিনি আর ফিরতে না-ও পারেন, এমনও নাকি জানিয়ে গিয়েছিলেন রিয়া।
০৮২৭
রিয়ার অনুরোধমতো সুশান্তের কাছে এসে কয়েক দিন ছিলেনও তাঁর দিদি। কিন্তু চার দিন সুশান্তের অ্যাপার্টমেন্টে থাকার পরে তাঁর দিদি গত ১২ জুন নিজের বাড়িতে ফিরে যান। তার ঠিক দু’দিন পরে তাঁর ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
০৯২৭
তিনি যে গত এক বছর সুশান্তের সঙ্গে ছিলেন, সে কথা স্বীকার করেছেন রিয়া নিজেও। সুপ্রিম কোর্টেও তিনি জানিয়েছেন, সুশান্তের সঙ্গে তাঁর লিভ ইন সম্পর্কের কথা। কিন্তু তিনি বার বার দাবি করেছেন, সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। রিয়া জোর দিয়েছেন সুশান্তের অবসাদ এবং সেই সংক্রান্ত চিকিৎসার উপর।
১০২৭
কিন্তু এই ‘ওষুধ’-এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ট্রেনার সমীর। তাঁর প্রশ্ন, ওষুধ দেওয়ার আগে কি সুশান্তের সঙ্গে কথা বলেছিলেন চিকিৎসক? মানসিক অবসাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক-রোগী কাউন্সেলিং বিশেষ প্রয়োজন। সেটা কি সুশান্তের বেলায় হয়েছিল? প্রশ্ন সমীরের।
১১২৭
তাঁর ক্লায়েন্ট কী ওষুধ খাচ্ছেন, সেটা এক জন ফিটনেস ট্রেনারের জানাটা খুবই জরুরি। সেইমতো তিনি ফিটনেস রুটিন ঠিক করেন। কিন্তু সুশান্তের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক সমীরের দাবি, অভিনেতা কী ওষুধ খেতেন, সেটা জানতেন একমাত্র রিয়া।
১২২৭
শরীরচর্চার ক্ষেত্রে সুশান্ত যে খুব ভাল এগোচ্ছিলেন, সে কথা জানিয়েছেন সমীর। তবে নায়কের ব্যক্তিগত পরিসরে যে একটা বড় পরিবর্তন হয়েছিল, টের পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন সমীর। বেশ কয়েক বছর তারকাকে কাছ থেকে দেখা এই অভিজ্ঞ ট্রেনারের দাবি, সুশান্তের জীবনে রিয়া আসার পরই সব পাল্টে যেতে থাকে।
১৩২৭
এই পরিবর্তনের জেরে তাঁদের ছেলে যে জীবন শেষ করার দিকে এগোচ্ছেন, সে কথা বিন্দুমাত্র টের পাননি সুশান্তের বাড়ির লোকজন। গত ২১ জানুয়ারি বিহারে, নিজের পারিবারিক বাড়িতে জন্মদিন কাটিয়েছিলেন সুশান্ত। কিন্তু সে সময় তাঁর মধ্যে মানসিক অবসাদের কোনও লক্ষণ দেখতে পাননি পরিজনরা।
১৪২৭
এমনকি, পরিবারের দাবি, রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে সুশান্তের প্রেম নিয়ে কিছুই জানতেন না তাঁরা। রিয়াকে তাঁরা কখনও দেখেননি এবং সুশান্তের মুখেও কখনও রিয়ার নাম শোনেননি৷ সুশান্তের বাবার অভিযোগ, সুশান্ত আগে যে বাড়িটায় বাস করতেন সেখানে ভূতপ্রেত আছে বলে সেই বাড়ি তাঁকে ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন রিয়া৷ সুশান্তের ‘মানসিক অবসাদ’-এর চিকিৎসাও নাকি করতেন রিয়ার পরিচিত চিকিৎসক।
১৫২৭
তদন্তে নেমে বিহার পুলিশ জানতে পেরেছে, সুশান্তের ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরে ধীরে ধীরে তাঁর পুরনো লোকদের সরিয়ে দেন রিয়া। পরিবর্তে, সুশান্তের চারপাশে রিয়া নাকি রেখেছিলেন নিজের লোক। পুরনো ভৃত্য, রাঁধুনিকে খারিজ করেন রিয়া। লকডাউনের আগে পরিবর্তন করেন সুশান্তের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীকে। কেন? ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
১৬২৭
তাঁরা কথা বলেছেন সুশান্তের এই প্রাক্তন কর্মচারীদের সঙ্গে। বিহার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো পরিচারক ও রাঁধুনি জানিয়েছেন, সুশান্তকে নিজের অঙ্গুলিহেলনে চালাতে ভালবাসতেন রিয়া। তিনি কী ওষুধ খাবেন, সেটা দেখাশোনা করতেন নিজে। এমনকি, সুশান্ত কোনও কোনও সময় ওষুধ খেতে ভুলে গেলে রিয়া নাকি নিজেই ওষুধ তুলে দিতেন তাঁর হাতে। পুলিশের কাছে জানিয়েছেন সুশান্তের প্রাক্তন পরিচারক ও রাঁধুনি।
১৭২৭
আত্মহত্যায় প্ররোচনার পাশাপাশি রিয়ার বিরুদ্ধে সুশান্তের টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ তুলেছেন কে কে সিংহ। তাঁর অভিযোগ, সুশান্তের একটি অ্যাকাউন্টে ১৭ কোটি টাকার মধ্যে ১৫ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছিল এমন এক অ্যাকাউন্টে, যার সঙ্গে সুশান্তের কোনও সম্পর্ক নেই।
১৮২৭
অন্য দিকে, আর একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সুশান্তের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে রিয়ার অ্যাকাউন্টে কোনওদিন বড় অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার হয়নি।
১৯২৭
তবে আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গে সুশান্তের বাবা কে কে সিংহের অভিযোগকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ইডি। বিহার পুলিশের কাছে কে কে সিংহ যে এফআইআর দায়ের করেছেন, তার একটি কপি দেখতে চেয়েছে ইডি।
২০২৭
রিয়া, তাঁর ভাই-সহ পরিবারের মোট ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এফআইআর-এ। আর্থিক প্রতারণার পাশাপাশি সুশান্তকে মানসিক নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার দায়েও অভিযুক্ত করা হয়েছে চক্রবর্তী পরিবারকে।
২১২৭
এই মামলা পটনা থেকে মুম্বইয়ে সরানো হোক, ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে এই মর্মে আবেদন করেছেন রিয়া। অভিনেত্রীর সংশয়, বিহার পুলিশ তদন্ত করলে তিনি সুবিচার পাবেন না।
২২২৭
সেই সঙ্গে এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের জন্য টুইটারে অমিত শাহের কাছে আবেদন করেছেন রিয়া। জানিয়েছেন, তিনি চান সুশান্তের রহস্যমৃত্যুতে সত্য প্রকাশিত হোক। তবে সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র সরকারের তরফেও সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
২৩২৭
চুপ করে নেই রিয়াও। তিনিও পাল্টা অভিযোগ এনেছেন সুশান্তের পরিজনদের বিরুদ্ধে। রিয়ার অভিযোগ, তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত করছেন সুশান্তের আত্মীয়রা। তা ছাড়া, সুশান্তের বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানিকেও নিজের বয়ানে তাঁর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে জোর করা হয়েছে বলে দাবি অভিনেত্রীর।
২৪২৭
রিয়ার দাবি, মুম্বই পুলিশকে একটি ইমেল করেছেন সিদ্ধার্থ। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, গত ২২ জুলাই কনফারেন্স কলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সুশান্তের দিদি মিতু এবং জামাইবাবু আইপিএস অফিসার ওপি সিংহ। সেখানে আইপিএস সিংহ জানতে চান রিয়ার সম্বন্ধে। সুশান্তের সঙ্গে রিয়া যখন লিভ ইন করছিলেন, সে সময়কার খরচের বিশদ হিসেবও চেয়ে পাঠান।
২৫২৭
মুম্বই পুলিশকে পাঠানো সিদ্ধার্থের ইমেলে নাকি আরও একটি ফোন কলের উল্লেখ আছে বলে দাবি রিয়ার। সেই ফোন তিনি নাকি পেয়েছিলেন ২৭ জুলাই। ফোনের ওপারে আইপিএস সিংহ নাকি সিদ্ধার্থকে বিহার পুলিশের কাছে রিয়ার বিরুদ্ধে বয়ান দিতে বলেন। তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও মুম্বই পুলিশকে জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ। দাবি রিয়ার।
২৬২৭
সব মিলিয়ে, সুশান্ত-কাণ্ডে এখন বেশ কোণঠাসা রিয়া। রিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় এসেছে সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখান্ডের সাম্প্রতিক বক্তব্য। তাঁর দাবি, সুশান্ত তাঁকে বলেছিলেন, রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে তিনি খুশি নন। প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে নিজের চ্যাটের ছবিও সুশান্তের পরিবারকে দিয়েছেন অঙ্কিতা।
২৭২৭
‘স্বজনপোষণ’, ‘অবসাদ’-এর মতো সম্ভাবনাকে ছাপিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় খলনায়িকা রিয়া-ই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক স্টিং অপারেশনের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সুশান্তের অপমৃত্যু আদপে ধীরে ধীরে পরিকল্পিত একটি পরোক্ষ হত্য়া?