Ritabhari Chakraborty loves to live on her own terms dgtl
bollywood
প্রেমে পড়েন, প্রেমেই বাঁচেন, কিন্তু কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে ঘোর আপত্তি ঋতাভরীর
মা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সামনে ক্লাস টেনের ফাইনাল পরীক্ষা। এখন মেগা সিরিয়ালে কাজ অসম্ভব। সে যাত্রা মুলতুবি থাকল মেগা সিরিয়ালে অভিনয়। তবে সুযোগ এল কয়েক মাস পরেই। রবি ওঝার প্রোডাকশন থেকেই আবার ডাক এল। ‘ওগো বধূ সু্ন্দরী’ ধারাবাহিকের ‘ললিতা’ হয়ে টলিউডে পা রাখলেন ঋতাভরী চক্রবর্তী।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ১২:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
ছোটবেলায় কোনওদিন অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। যদিও বাবা মা দু’জনেই ফিল্মের জগতের উজ্জ্বল নাম। কিন্তু মায়ের কড়া নজর ছিল দুই মেয়ের পড়াশোনার দিকে। বাড়িতে নিয়মই ছিল, যা-ই করো না কেন, লেখাপড়ায় মন দিতেই হবে। সেই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনেই অভিনেত্রী হয়েছেন ঋতাভরী।
০২২৫
হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্রীর জীবনে পড়াশোনা এবং অভিনয় ছোটবেলা থেকেই ছিল হাত ধরাধরি করে। দরকার পড়লেই ঋতাভরীর ডাক পড়ত মায়ের কাজে। ছোট মেয়েকে অনায়াসে ভিড়ের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিতেন পরিচালক শতরূপা স্যান্যাল। তাই কবে যে প্রথম ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছেন, আজ ভুলেই গিয়েছেন। ‘ভিড়’-এর অংশ হতে হতেই হয়ে উঠেছেন একক অভিনেত্রী।
০৩২৫
এই যাত্রাপথে মা পাশে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-র ‘ললিতা’ থেকে শুরু করে আজ যে জায়গায় তিনি পৌঁছেছেন, তার সবটুকুই নিজের হাতে গড়েছেন যত্ন করে। তবে তাঁর নিজের কথায়, ‘‘আমি যা কাজ করি, সেটা জনপ্রিয় ঠিকই। কিন্তু আমার দিদির কাজ অনেকটাই মায়ের কাজের কাছাকাছি।’’
০৪২৫
ঋতাভরীর টেলিভিশনে কাজ করার ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছেন তাঁর দিদি চিত্রাঙ্গদা। তখন রবি ওঝা প্রোডাকশনের ‘বউ কথা কও’-এর জন্য অডিশন চলছে। চিত্রাঙ্গদা গিয়েছিলেন সেখানে। দিদিকে আনতে পৌঁছেছিলেন ক্লাস টেনের পড়ুয়া বোনও। তাঁকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় প্রোডাকশনের। এ বার কথা বলার পরে আরও একধাপ এগিয়ে অডিশনের সুযোগই এসে গেল কিশোরীর কাছে।
০৫২৫
কিন্তু বাড়িতে বলতেই বিপত্তি। মা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সামনে ক্লাস টেনের ফাইনাল পরীক্ষা। এখন মেগা সিরিয়ালে কাজ অসম্ভব। সে যাত্রা মুলতুবি থাকল মেগা সিরিয়ালে অভিনয়। তবে সুযোগ এল কয়েক মাস পরেই। রবি ওঝার প্রোডাকশন থেকেই আবার ডাক এল। ‘ওগো বধূ সু্ন্দরী’ ধারাবাহিকের ‘ললিতা’ হয়ে টলিউডে পা রাখলেন ঋতাভরী চক্রবর্তী।
০৬২৫
এ বার আর মায়ের আপত্তি ছিল না। কারণ ধারাবাহিকের কাজ শুরু হয়েছিল ক্লাস টেনের চূড়ান্ত পরীক্ষার পরের লম্বা ছুটিতে। এবং ঋতাভরী কথা দিয়েছিলেন অভিনয়ের জন্য পড়াশোনা ব্যাহত হবে না। সেই কথা তিনি রেখেছিলেন। দু’বছর পরে ক্লাস টুয়েলভের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভাল ফল করেছিলেন মেধাবী ঋতাভরী। নিজের স্কুলে মেধাতালিকার শীর্ষে ছিলেন তিনি।
০৭২৫
ধারাবাহিকের কাজ যত এগোতে থাকে, ঋতাভরী তত টের পেতে থাকেন এর পিছনে লুকিয়ে থাকা পরিশ্রম। কিন্তু একবার জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছে ধারাবাহিক। দর্শকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে চলে এসেছে ‘ললিতা’। তাই কষ্ট হলেও ঋতাভরী আর ফিরে যাননি। বললেন, ‘‘এই ভালবাসা এবং জনপ্রিয়তা অনেকটা ড্রাকুলার কাছে রক্তের স্বাদের মতো। একবার পেয়ে গেলে আর ফিরে আসা যায় না।”
০৮২৫
তবে এর পর কিন্তু তিনি ফিরে এলেন। দ্বিতীয় মেগা ধারাবাহিক ‘চোখের তারা তুই’-এ অভিনয় থামিয়ে দিলেন মাঝপথেই। সে সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ফলে অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। বহু অনুরোধ সত্ত্বেও সুস্থ হওয়ার পরে ফিরে যাননি মেগার সেটে। প্রথমত কলেজের ক্লাস করতে পারছিলেন না। তাছাড়া, মেগা ধারাবাহিকে অভিনয় করতেও তাঁর ভাল লাগত না।
০৯২৫
মাত্র ৩ মাস অভিনয় করে ‘চোখের তারা তুই’ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী বললেন, ‘‘আমার মনে হয় না কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি টেলিভিশনকে ছোট করছি না। এই মাধ্যমের কাছে ঋণী। কিন্তু মেগায় কাজ করতে আমার ভাল লাগছিল না। এখনও টিভিতে ফিরে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। বছরের পর বছর একই চরিত্র করে যেতে পারব না। খুব ইন্টারেস্টিং কিছু হলে ভেবে দেখতে পারি।”
১০২৫
অভিনয় থেকে সরে এসে তখন মন দিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঋতাভরী। তাঁর দাদু ছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল। দিদা পড়াতেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। ডক্টরেট করেছেন মা। ফলে সেরকম একটি পরিবারের অংশ হয়ে লেখাপড়ায় অবহেলা করার কথা ভাবতেই পারেননি তিনি। তবে পাশাপাশি চলেছে অভিনয়ও। সে সময় তিনি অভিনয় করতেন মঞ্চে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও সেই সময়েই।
১১২৫
পাশাপাশি ঋতাভরী মন দিয়েছিলেন নিজের ভাবমূ্র্তি ভাঙতে। বাংলা ধারাবাহিকের শাড়ি পরা আদর্শ গৃহবধূর ছবি থেকে বার হতে চেয়েছিলেন তিনি। সকলকে চমকে দিয়েছিলেন বিকিনি শ্যুটে।
১২২৫
তবে শুধুই অভিনয় করে যাওয়া নয়। একইসঙ্গে চলেছে কনটেন্ট তৈরিও। আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে মিউজিক ভিডিয়ো ‘ওরে মন’ থেকে কল্কি কেঁকলার শর্ট ফিল্ম ‘নেকড’-এর গল্প লেখা— নিজেকে নানাভাবে মেলে ধরতে চেয়েছেন ঋতাভরী।
১৩২৫
এই রূপান্তর প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ ছিল না। স্বীকার করেন ঋতাভরী। কারণ, যেখানে কুশীলবের নাম ছাপিয়ে চরিত্র প্রধান হয়ে ওঠে, সেখানে নিজেকে ভেঙে অন্য রূপে মেলে ধরা খুব কঠিন। কিন্তু সেটাই করেছেন ঋতাভরী।
১৪২৫
‘ললিতা’-র খোলস ভেঙে বেরিয়ে এসে ‘চতুষ্কোণ’, ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন কলকাতা’, ‘পরী’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মো কী’, ‘টিকি টাকা’-র মতো নানা স্বাদের ছবিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন।
১৫২৫
ইতিমধ্যেই কাজ করা হয়ে গিয়েছে আয়ুষ্মান খুরানা, অনুষ্কা শর্মা, রজত কপূর, কল্কি কেঁকলা, কুণাল কর্ণ কপূর, অনুরাগ কশ্যপের মতো বলিউডি তারকার সঙ্গে। আরবসাগর ঘেঁষা তারকাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কি অন্যরকম? ঋতাভরীর কথায়, “আমার তো মনে হয় তাঁরা আগে অভিনেতা, তার পর তারকা। কিন্তু টলিউডে ছবিটা অন্যরকম। এখানে সকলে আগে তারকা, তার পর অভিনেতা। হয়তো পরিসরটা ছোট বলেই।’’
১৬২৫
এখনও অবধি মুম্বইয়ের কুশীলবদের মধ্যে তাঁর সবথেকে ভাল লেগেছে কল্কিকে। মুগ্ধ হয়েছেন অনুষ্কা এবং ক্যাটরিনাকে দেখেও। তবে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে তাঁর সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে।
১৭২৫
তাঁর নানা ধরনের কাজের অন্যতম একটা অংশ জুড়ে আছে সমাজসেবামূলক পদক্ষেপ। মায়ের তৈরি এনজিও-র শরিক এখন ঋতাভরীও। এনজিও সংক্রান্ত কাজে সময় চলে যায় অনেকটাই। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-তে অভিনয় করার সময় পরিচয় হয়েছিল মূক ও বধির শিশুদের একটি স্কুলের সঙ্গে। আজ, ঋতাভরী এই প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক।
১৮২৫
পাশাপাশি কলকাতার সুলভ শৌচাগারগুলিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন রাখার চেষ্টা করে চলেছে তাঁর সংস্থা। ঋতাভরীর কথায়, ‘‘অনেকের বাড়ি গাড়ি নিয়ে স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন এটাই। আমি নিজের কনটেন্ট, ট্র্যাভেলিং, নিজের সংস্থা— এ সব নিয়েই থাকতে চাই। কারণ আমি নিজের জন্য বাঁচি। কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার দায় আমার নেই।’’
১৯২৫
এ সব কিছু মাঝে একটা জিনিসের জন্যই আপাতত সময় নেই। সেটা হল বিয়ে। আপাতত অন্যের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে নেওয়ার ইচ্ছে নেই। তাঁর বিয়েতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা এখন নয়। তাই বলে কি প্রেম আসেনি? সে তো এসেইছে। ‘‘লেখাপড়ায় সিরিয়াস ছিলাম মানে তো এই নয় যে বেরসিক ছিলাম’’—বলার পরেই শোনা গেল ফোনের ওপারে উচ্ছ্বল হাসি।
২০২৫
অল্পবিস্তর ইনফ্যাচুয়েশনের পাশাপাশি সিরিয়াস সম্পর্ক এসেছিল কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভেঙেও গিয়েছিল। সেই কষ্ট কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিল। তার পর থেকেই ঠিক করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তনী। সম্পর্ককেই জীবনের পরিচয় করে তুলবেন না। প্রেম থাকবে। তিনি প্রেমে বাঁচবেন। কিন্তু অমুক বা তমুকের সঙ্গে জড়িয়ে কোনও ‘জুটি’ হয়ে পরিচিত হতে চান না। তাঁর নিজের তৈরি পরিচয়ে এখনই কাউকে ভাগ বসাতে দিতে চান না।
২১২৫
বরং তিনি পরিচিত হতে চান একজন ব্যস্ত তরুণী হয়ে। তারকাবৃত্তের আলোর থেকে তাঁর বেশি ভাল লাগে ব্যস্ততাই। বাড়ির বাল্ব্ বিগড়ে গেলেও তিনি নতুন বাল্ব্ লাগান নিজের হাতেই। জানালেন, নিজের সংস্থার হয়ে এমন এমন জায়গায় কাজ করতে গিয়েছেন, যেখানে হয়তো কেউ তাঁকে চেনেনই না। কারণ তাঁদের বাড়িতে টিভি পর্যন্ত নেই। বিনোদন দুনিয়া থেকে বহু দূরে থাকা এই মুখগুলোর পাশে থাকা তাঁকে তৃপ্তি দেয়। কেরিয়ারের পালে হাওয়া লাগে না ঠিকই। কিন্তু এই মনের আনন্দ তাঁর কাছে অমূল্য।
২২২৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন, তাঁদের থেকেও নিজেকে আলাদা মনে করেন না তিনি। বিশ্বাস করেন, অনুরাগীদের থেকে তিনি অনেক কিছু পেয়েছেন। তবে তাঁদের কাছেও নিজেকে তারকা হিসেবে মেলে ধরতে ঘোর আপত্তি। তবে সবকিছুই সোশ্যাল মিডিয়ায় মেলে ধরতেও চান না তিনি। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটা তাঁর কাছে খুবই ব্যক্তিগত পরিসর।
২৩২৫
কাজপাগল ঋতাভরীর অতিমারি এবং লকডাউনের বছর গেল মিলিয়ে মিশিয়ে। অনেক দিন পর একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন মা এবং দিদির সঙ্গে। কিছুটা সময় হাতে পাওয়ায় তিনি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইনে কোর্সও করছেন। কাকভোরে উঠে ‘প্যাসিফিক টাইমজোন’ অনুযায়ী ক্লাস করছেন। তার পর শ্যুটিং করছেন। ব্যস্ত থাকছেন অন্য কাজে। পাশাপাশি, এই বছরের নানা রকমের কাজও করেছেন তিনি।
২৪২৫
অভিনেত্রী হয়েও এই ‘অন্যরকম’ থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকেই। নিদ্বির্ধায় জানালেন ঋতাভরী। বহু ঝড় সামাল দিয়েও তাঁর মা যেভাবে নিজের জীবনকে সাজিয়েছেন, সেটা শিক্ষণীয় বলে মনে করেন তিনি। পরিচালক এবং নাট্যব্যক্তিত্ব বাবা উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর বিভিন্ন গুণকে শ্রদ্ধা করেন ঋতাভরী। তবে বাবার প্রভাব তাঁর নিজের জীবনে শুধুই জন্মসূত্রে। এর বাইরে এগিয়ে চলার পথে মা-ই সব। সেখানে বাবার কোনও প্রভাব নেই।
২৫২৫
সমাজ থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখতে চান না ঋতাভরী। বাঁচতে এবং এগিয়ে যেতে চান সকলকে সঙ্গী করেই। এই একসঙ্গে সামগ্রিক সমষ্টি হিসেবে বেড়ে ওঠার মধ্যেই সার্থকতা, মনে করেন তিনি। ভবিষ্যতেও এরকমই থাকতে চান তিনি। পাশে চান শুধু মাকে। তাঁর সব কাজে মায়ের সমর্থন থাকে। শতরূপার বিশ্বাস, তাঁর মেয়ে আকাশ ছুঁতে পারে। আর ঋতাভরী মনে করেন, মা-ই তাঁর কাছে একটা খোলা আকাশ।