Chunkey Pandey wanted to be hero but remained a side actor in bollywood dgtl
Chunkey Pandey
শাহরুখ-সলমনদের থেকে পিছিয়ে পড়া চাঙ্কি সফল হতে কেন পাড়ি দেন বাংলাদেশ
দীর্ঘকায়, উজ্জ্বলবর্ণ, মাথায় এক ঝাঁক কোঁকড়া চুল। নয়ের দশকে বলিউড হিরোসুলভ সব বৈশিষ্টই তাঁর মধ্যে প্রকট। তিনি সুযশ পাণ্ডে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৯
দীর্ঘকায়, উজ্জ্বলবর্ণ, মাথায় এক ঝাঁক কোঁকড়া চুল। নয়ের দশকে বলিউড হিরোসুলভ সব বৈশিষ্টই তাঁর মধ্যে প্রকট। তিনি সুযশ পাণ্ডে।
০২২৯
তবে এই নামে বলিউড তথা দর্শকমহলের সিকিভাগও তাঁকে চেনে না। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে গিয়ে সুযশ নামটা পিছনে ফেলে আসেন তিনি। হয়ে ওঠেন চাঙ্কি পাণ্ডে।
০৩২৯
১৯৬২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মুম্বইতে জন্ম চাঙ্কির। তাঁর বাবা শরদ পাণ্ডে ছিলেন বিখ্যাত হার্ট সার্জেন। কেরিয়ারে তিনি ১০০টিরও বেশি সার্জারি করেছেন। এমনকি হাঁটু জল ভেঙ্গেও চিকিৎসা করতে যেতেন শরদ। চিকিৎসক হিসাবে তাঁর দৃঢ় সংকল্পের কথা আজও অনেকের মুখে মুখে ফেরে।
০৪২৯
বাবা এত বড় মাপের চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও ছেলে কিন্তু প্রচলিত কোনও পেশা কেরিয়ার হিসাবে বেছে নিতে আগাগোড়াই নারাজ ছিলেন। ১৯৮৬ সালে অভিনয় শেখানোর স্কুলেশিক্ষক হিসাবে যোগ দেন চাঙ্কি। অক্ষয়কুমার-সহ আরও অনেক নবাগত সেই সময় চাঙ্কির জুনিয়র ছিলেন।
০৫২৯
এরপর ঠিক ১ বছর পরেই বড়পর্দায় অভিষেক হয় চাঙ্কির। চিত্র প্রযোজক পহলাজ নিহলানি বলিউডে চাঙ্কিকে প্রথম ব্রেক দেন। ১৯৮৭ সালে ‘আগ হি আগ’ ছবির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন চাঙ্কি। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন নীলম কোঠারি।
০৬২৯
প্রথম ছবিতেই ধর্মেন্দ্র, শত্রুঘ্ন সিনহার মতো কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেও প্রশংসা পান চাঙ্কি। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘পাপ কি দুনিয়া’ একই ভাবে বক্সঅফিসে সাফল্য পায়। এই ছবিতেও চাঙ্কির সঙ্গে ছিলেন নীলম। এ ছাড়াও সানি দেওল অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে।
০৭২৯
এরপর বলিউডে বিখ্যাত হয়ে ওঠে চাঙ্কি-নীলম জুটি। ‘খতরোঁ কে খিলাড়ি’, ‘মিট্টি অউর সোনা’, ‘ঘর কা চিরাগ’-এর মতো সফল ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন তাঁরা।
০৮২৯
বলিউডে পা রাখার মাত্র ১ বছরের মধ্যেই চাঙ্কির ঝুলিতে এসে পড়ে মাল্টিস্টারার ‘তেজাব’। সেখানে নায়কের চরিত্রে অভিনয় না করলেও, এই ছবিই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম মাইলফলক।
০৯২৯
অনিল কপূরের বন্ধু বব্বনের চরিত্রে দর্শকদের নজর কাড়েন চাঙ্কি। এমনকি ১৯৮৯ সালে ‘তেজাব’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ারে ‘বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাক্টর’-এর খেতাবের জন্য মনোনীত হন চাঙ্কি।
১০২৯
এ ভাবে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করার পর দেখা গেল, নায়ক চাঙ্কির থেকে চরিত্রাভিনেতা চাঙ্কির গ্রহণযোগ্যতা মানুষের কাছে বেশি। অর্থাৎ বলিউডে পা রাখার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই শুরু হল পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে তাঁর নতুন ইনিংস।
১১২৯
ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খন্না, জিতেন্দ্র, সানি দেওলের মতো সফল নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় চাঙ্কিকে।
১২২৯
এরপর নয়ের দশকের শুরুর দিক থেকে বলিউডে আছড়ে পড়ে নতুন তরঙ্গ। আমির খান, সলমন খান, শাহরুখ খান-এর মতো নবাগতরা ‘রোম্যান্টিক হিরো’ হিসাবে তখন ধীরে ধীরে পায়ের নীচে জমি শক্ত করছেন।
১৩২৯
অন্যদিকে, অক্ষয় কুমার, সুনীল শেট্টি, অজয় দেবগণরাও একের পর এক অ্যাকশন সিনেমা করে ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসাবে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেন।
১৪২৯
বলিউডে আগত নবাগতদের ভিড়ে চাঙ্কি নিজের জায়গা ক্রমশ হারাতে থাকেন। রোম্যান্টিক বা অ্যাকশন--এই দুই ধরনের কোনওটিতেই চাঙ্কি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।
১৫২৯
সেই সময় ফের মাল্টিস্টারার ছবি থেকে হিন্দি ছবির অভিমুখ ঘুরে যায় সিঙ্গেল হিরো নিয়ে ছবির দিকে। অর্থাৎ যে ধরনের ছবিতে চাঙ্কি বেশির ভাগ কাজ করতেন, তেমন ছবির সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
১৬২৯
কিন্তু চাঙ্কি শুধু মাত্র পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে রাজি ছিলেন না। নিজেকে তখন নায়ক হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে বলিউড ত্যাগ করেন চাঙ্কি। নতুন ভাবে কেরিয়ার শুরু করার আশা নিয়ে তিনি বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন।
১৭২৯
বাংলাদেশ চাঙ্কিকে হতাশ করেনি। সেখানে গিয়ে ফের মুখ্য চরিত্রে কাজ পেতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ৬টি ছবিতে নায়ক হিসাবে অভিনয় করেন তিনি।
১৮২৯
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে ‘স্বামী কেন আসামী’ সেই ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়াও ১৯৯০ সালে তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী হালদারের সঙ্গে ‘মন্দিরা’ ছবিতে কাজ করেন। সেই সময় ছবিটি বক্স অফিসেও সাফল্য লাভ করেছিল।
১৯২৯
কেরিয়ারের টানাপড়েনের মধ্যেই ১৯৯৮ সালে ভাবনাকে বিয়ে করেন চাঙ্কি। তাঁদের দুই কন্যাসন্তান হয়, অনন্যা এবং রাইসা। অনন্যা এই মুহূর্তে বলিউডের নায়িকা। ২০১৯ সালে কেরিয়ার শুরু করে ইতিমধ্যেই ৩টি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি।
২০২৯
বাংলাদেশ চাঙ্কিকে তাঁর প্রত্যাশিত যশ, খ্যাতি দিলেও ফের বলিউডের টানে তিনি ২০০৩ সালে তিনি ফিরে আসেন আরব সাগরের তীরে। কিন্তু সে বারেও ফের হতাশ হতে হয়।
২১২৯
দ্বিতীয় ইনিংসেও কম বাজেটের কিছু ছবিতে দেখা যায় চাঙ্কিকে। ‘কয়ামত: দ্য সিটি আন্ডার থ্রেট’, ‘এলান’, ‘মুম্বই সে আয়া মেরা দোস্ত’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেন চাঙ্কি। এতগুলো বছর পরেও বলিউডে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পাওয়ার স্বপ্ন তখনও তাঁর অধরা।
২২২৯
এরপরেও আশাহত চাঙ্কি। অভিনয় করে গিয়েছেন একের পর এক ছবিতে। কিন্তু সেগুলির মধ্যে কোনওটি দর্শকদের মনে ছাপ ফেলতে পারেনি।
২৩২৯
এ ভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পরে ২০১০ সালে সাজিদ খান পরিচালিত ‘হাউজফুল’ ছবিতে অভিনয় করেন চাঙ্কি। যথারীতি সেখানেও ছোট একটি চরিত্র পেয়েছিলেন। ‘আখরি পাস্তা’ নামক ইন্দো-ইতালিয়ান হোটেল মালিকের চরিত্রে অভিনয় করে ফের দর্শকদের মন জয় করেন চাঙ্কি।
২৪২৯
খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ছবিতে থাকলেও কৌতুকাভিনেতা হিসাবে নিজের দক্ষতা তুলে ধরেছিলেন চাঙ্কি। এরপর থেকেই দর্শকমহলে ‘আখরি পাস্তা’ হিসাবেই নতুন পরিচিতি পান চাঙ্কি।এই চরিত্র ফের বলিউডে তাঁর কেরিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।
২৫২৯
এরপর ‘হাউজফুল’ ফ্যাঞ্চাইজির অংশ হয়ে যান চাঙ্কি। ‘হাউজফুল ২’, ‘হাউজফুল ৩’ এবং ‘হাউজফুল ৪’ ছবিতেও দেখা যায় তাঁকে।
২৬২৯
এ ভাবেই সময়ের সঙ্গে নিজেকে পাল্টে ফেলেন চাঙ্কি। এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি আর নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে চান না। তার পরিবর্তে বিভিন্ন মজাদার চরিত্রে অভিনয় করতে চান তিনি।
২৭২৯
তবে শুধু কৌতুকাভিনয়ের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি চাঙ্কি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘বেগমজান’ ছবিতে খলের ভূমিকায় তাক লাগিয়েছিলেন চাঙ্কি। সেখানে ‘কবীর’ এর চরিত্রে পরিণত অভিনেতা হিসাবে পর্দায় উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।
২৮২৯
এরপর ‘প্রস্থানম’, ‘শাহো’ র মতো ছবিতেও খলনায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে।
২৯২৯
অভিনয় দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কোনও দিন বলিউডের ‘এ লিস্টার’দের মধ্যে নিজের নাম সামিল করতে পারেননি চাঙ্কি। তবে হার মানতে নারাজ এই অভিনেতা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এতগুলি বছর পরেও জুঝছেন বলিউডের অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের।