El nino returns after seven years in Pacific Ocean what will be the impact dgtl
El Nino Impact
সাত বছর পর প্রশান্ত মহাসাগরে ফিরল উষ্ণস্রোত! ভারতে খরার ভ্রুকুটি? কী এই ‘এল নিনো’?
পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে কোনও কোনও বছর উষ্ণ দক্ষিণমুখী এক স্রোতের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র এবং সারা বিশ্বের আবহাওয়ায়।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ১৪:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
শেষ বার তাকে দেখা গিয়েছিল বছর সাতেক আগে। ২০১৫ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে এসেছিল এল নিনো। তার পর ২০২৩ সালে আবার তার প্রত্যাবর্তন হয়েছে, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
০২১৯
ভূগোল নিয়ে যাঁরা নিয়মিত চর্চা করেন, সমুদ্রের জলের গতিবিধির দিকে যাঁরা নজর রাখেন, তাঁরা ছাড়া এল নিনোকে হয়তো অনেকেই চেনেন না। এটি একটি উষ্ণ সামুদ্রিক স্রোত। যার প্রভাব পড়ে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়ায়।
০৩১৯
পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, ইকুয়েডর বরাবর কোনও কোনও বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার উষ্ণ দক্ষিণমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরই নাম এল নিনো।
০৪১৯
এল নিনো স্প্যানিশ শব্দ। এর অর্থ ছোট্ট ছেলে। পেরু, ইকুয়েডর উপকূলেই মাঝেমাঝে এল নিনোর বিপরীত একটি শীতল স্রোত সৃষ্টি হয়। তার নাম লা নিনা। দুই স্রোতের প্রভাব পড়ে বিশ্বের আবহাওয়ায়।
০৫১৯
এল নিনোর প্রভাবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে উত্তরমুখী শীতল পেরু স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সাময়িক ভাবে ঘেঁটে যায়। ওই অঞ্চলে মৎস্যচাষে ব্যাঘাত ঘটে। সামুদ্রিক প্রাণী এবং পাখিদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে এই স্রোতের প্রভাবে।
০৬১৯
দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে এল নিনো নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। যার ফলে ওই এলাকায় অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তবে এই উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে কেবল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ থাকে না।
০৭১৯
নিরক্ষরেখা বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরের জল এল নিনোর প্রভাবে ধারাবাহিক ভাবে উষ্ণ হতে শুরু করে। এর ফলে কোথাও অতিবৃষ্টিতে বন্যা, কোথাও অনাবৃষ্টিতে খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
০৮১৯
আমেরিকার ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনস্ট্রেশন (এনওএএ) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনোর দেখা মিলেছে। ২০০০ সাল থেকে এই নিয়ে পঞ্চম বার উষ্ণ স্রোতটির আবির্ভাব হল।
০৯১৯
এ বছর এল নিনো আসতে পারে, আগেই তার পূর্বাভাস ছিল। তবে মনে করা হয়েছিল অগস্ট মাসের আগে তার দেখা মিলবে না। কিন্তু সময়ের অনেক আগেই স্রোত বইতে শুরু করেছে সাগরে।
১০১৯
সাধারণ ভাবে বছরের এই সময়ে নিরক্ষরেখা বরাবর আয়নবায়ু পশ্চিম দিকে বইতে শুরু করে। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকার দিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জল এশিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়।
১১১৯
কিন্তু এল নিনোর প্রভাবে আয়নবায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। এই বাতাস এশিয়ার দিকে আসার পরিবর্তে পশ্চিম আমেরিকার উপকূলেই থেমে যায়। ফলে নিরক্ষরেখা সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের জল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উষ্ণ থাকে।
১২১৯
ভারতে গত ১০০ বছরে ১৮ বার খরা হয়েছে। এই ১৮টি খরার মধ্যে ১৩টির নেপথ্যেই রয়েছে এল নিনোর হাত। প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জল অতীতে ভারতে খরা ডেকে এনেছে বার বার।
১৩১৯
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯০০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরে সাত বার এল নিনোর সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এল নিনোর দেখা মিলেছে অন্তত ১৫ বার।
১৪১৯
এল নিনোর এই ১৫টি বছরের মধ্যে ৯ বার ভারতে বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হয়নি। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম বৃষ্টি হয়েছে এই বছরগুলিতে।
১৫১৯
পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ভারতের কৃষি ব্যবস্থা প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঠিক সময়ে সংশ্লিষ্ট ফসল উৎপাদিত হয় না। চাহিদা অনুযায়ী জোগান না থাকায় মূল্যবৃদ্ধিও হয়ে পড়ে অবধারিত। অতীতে এল নিনোর বছরগুলিতে এ ভাবেই ভুগতে হয়েছে ভারতকে।
১৬১৯
চলতি বছরে প্রথম থেকেই গরম স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। দু-এক দিন বাদে এপ্রিল মাস থেকে টানা তাপপ্রবাহের শিকার হয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। জুন মাসেও বাংলার জেলায় জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি।
১৭১৯
এমনকি, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির মতো পাহাড়ঘেঁষা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছিল হাওয়া অফিস। গরমে দক্ষিণবঙ্গকেও এ বছর পাল্লা দিয়েছে উত্তর। বর্ষা প্রবেশেও বিলম্ব হয়েছে।
১৮১৯
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাত বছর পর এল নিনো ফিরেছে। ভারতের আবহাওয়ায় কি এই উষ্ণ স্রোতের প্রভাব শুরু হয়ে গিয়েছে? বৃষ্টির ঘাটতি কি আবার খরার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এ দেশে?
১৯১৯
সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞেরা। তবে আরও কিছু দিন পর ভারতের উপর এ বছরের এল নিনোর প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।