Eight cheetahs from Namibia flying in a special cargo plane then in a helicopter of IAF to Kuno National Park dgtl
Cheetah
বায়ুসেনার কপ্টারে চড়ে কুনো পালপুর অরণ্যে এল আফ্রিকার চিতা, কী ভাবে হবে পুনর্বাসন?
নরেন্দ্র মোদী সরকারের দাবি, সাড়ে সাত দশক পর ভারতের বনে ফিরে এসেছে চিতা। কিন্তু আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আনা চিতা কি আদৌ ভারত থেকে লুপ্ত হওয়া এশীয় চিতার উত্তরসূরি হতে পারে?
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
নাকের বদলে নরুন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা-সহ বিশেষ ‘কার্গো ফ্লাইট’ বি-৭৪৭ জাম্বো জেট মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রের বায়ুসেনা ঘাঁটির মাটি ছোঁয়ার পর নতুন করে এই প্রশ্ন উঠেছে।
০২২১
গ্বালিয়রের বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে চিনুক কপ্টারে কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যোনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিতাগুলিকে। সেগুলিকে আগামী এক মাস রাখা হবে বিচ্ছিন্নবাসে।৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০ মিটার প্রশস্ত জালের ঘেরাটোপে। আলাদা আলাদা ভাবে। দু’দিন অন্তর দেওয়া হবে তিন কিলোগ্রাম মাংস।
০৩২১
পরবর্তী ধাপে চিতাগুলিকে কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যোনের একাংশ তারের জালে ঘিরে তৈরি ৫৫০ হেক্টর (১,৩৬০ একর) এলাকায় ছাড়া হবে। গাছে ছাওয়া প্রান্তরে থাকবে শিকার ধরার সুযোগও। যাতে তারা মুক্ত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ব্যবস্থা।
০৪২১
আটটি চিতার বয়স চার থেকে ছ’বছর। তার মধ্যে তিনটি পুরুষ। দু’টি নামিবিয়ার চিতা কনজারভেশন প্রজেক্টের ৫৮ হাজার হেক্টেরের ‘ওটজিওয়ারঙ্গো প্রাইভেট রিজার্ভে’র বাসিন্দা। অন্যটি এরিন্ডি প্রাইভেট রিজার্ভের।
০৫২১
চলতি বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একটি দল নামিবিয়ায় পাঠিয়েছিল। তারাই বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরে ভারতে আনার জন্য চিতা বাছাই করেছে। দলে ছিলেন ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিুডব্লিউএফ)-র বিজ্ঞানী ওয়াইভি ঝালা।
০৬২১
বন্যপ্রাণ গবেষকদের মতে জঙ্গল ও তৃণভূমিতে ঘেরা মধ্যপ্রদেশের এই বনাঞ্চলের পরিবেশ এবং আবহাওয়ার সঙ্গে আফ্রিকার চিতার প্রাকৃতিক আবাসভূমি সাভানার খুবই মিল রয়েছে। ফলে খাপ খাইয়ে নিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে অসুবিধা হবে না।
০৭২১
এক দশক আগে গড়ে তোলা হয়েছিল গির অরণ্য থেকে আনা সিংহের প্রাকৃতিক আবাসভূমি হিসেবে। কিন্তু গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদী সিংহ দিতে গররাজি হওয়ায় আফ্রিকার চিতার ঠাঁই হচ্ছে মধ্যপ্রদেশের সেই কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে।
০৮২১
শেষ ধাপে চিতাগুলিকে কুনো পালপুরের ৭৪০ বর্গকিলোমিটারের মুক্ত পরিবেশে ছাড়া হবে। সাভানায় থমসন্স গ্যাজেল, গ্রান্টস গ্যাজেল, ইম্পালা শিকারে অভ্যস্ত চিতাগুলিকে পেট ভরানোর জন্য ধরতে হবে চিঙ্কারা, কৃষ্ণসার, চৌশিঙা অ্যান্টিলোপ বা চিতল হরিণ।
০৯২১
কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগামী পাঁচ বছর ধরে ধাপে ধাপে ৫০টি চিতা ভারতে আনা হবে। এর মধ্যে চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হবে আরও ১২টিকে।
১০২১
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চলে এখন চিতার সংখ্যা ৭,০০০-এর কিছু বেশি। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে প্রায় ৪,৫০০টি। নামিবিয়া, বৎসোয়ানা এবং জিম্বাবোয়েতেও রয়েছে ভাল সংখ্যায় চিতা।
১১২১
জিনগত বিবর্তন বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৫০০০ বছর আগে আফ্রিকার চিতার (অ্যাসিনোনিক্স জুবেটাস জুবেটাস) থেকে উৎপত্তি হয়েছিল তার জাতভাই এশীয় চিতার (অ্যাসিনোনিক্স জুবেটাস ভ্যানাটিকাস)। সেই থেকে তারা ভিন্ন উপপ্রজাতি।
১২২১
১৯৪৭ সালে সরগুজার (বর্তমান ছত্তীসগঢ়ে) রাজা রামানুজ প্রসাদ সিংহদেও তিনটি এশীয় চিতা শিকার করেছিলেন। তার পর আর ভারতে চিতার দেখা মেলেনি। এখন কেবল ইরানের তুরান-সহ কিছু এলাকায় শ’খানেক এশীয় চিতা টিকে রয়েছে।
১৩২১
মনমোহন সিংহের সরকারের আমলে ২০০৯ সালে ইরান থেকে এশীয় চিতা আনার চেষ্টা হয়েছিল। তেহরানের প্রাথমিক সম্মতিও মিলেছিল। তবে এশীয় চিতার বিনিময়ে ভারত থেকে এশীয় সিংহ চেয়েছিল ইরান। শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
১৪২১
পঞ্জাব, রাজপুতানা, উত্তর ভারত, মধ্যভারত, দাক্ষিণাত্য এমনকি, ওড়িশায় ছিল চিতার বসতি। এদের পোষ মানিয়ে ‘কোর্সিং’ (লেলিয়ে দিয়ে শিকার করানোর খেলা)-এর রেওয়াজও প্রায় হাজার বছরের পুরনো।
১৫২১
দ্বাদশ শতকে কল্যাণীর চালুক্যরাজ তৃতীয় সোমেশ্বরের দরবারি নথিতে পোষা চিতার সাহায্যে কৃষ্ণসার, চিঙ্কারা শিকারের প্রসঙ্গ রয়েছে। ‘তুজ্ক-ই-জহাঙ্গিরি’ বলছে, মুঘলরাজ জহাঙ্গিরের পশুশালায় ছিল কয়েক হাজার প্রশিক্ষিত শিকারি চিতা।
১৬২১
ব্রিটিশ জমানায় নির্বিচারে শিকারের পাশাপাশি ভারত থেকে এশীয় চিতা বিলুপ্তির নেপথ্যে আরও দু’টি কারণ আছে বলে মনে করা হয়— শিকারের উপযোগী তৃণভূমি ধ্বংস করে চাষাবাদ এবং খাঁচায় বন্দি অবস্থায় প্রজননে অক্ষমতা।
১৭২১
মুক্ত পরিবেশে একটি চিতা ৮-১২ বছর বাঁচে। ফলে উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা পেলে আগামী পাঁচ বছরে কুনো পালপুর চিতার স্থায়ী আবাসক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। প্রয়োজনে সংরক্ষিত অঞ্চল লাগোয়া ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাও চিতা সংরক্ষণে ব্যবহার করা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
১৮২১
মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান এলাকা ওই এলাকায় চোরাশিকারিদের উপদ্রব থাকায় চিতাদের সুরক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বনরক্ষী নিয়োগের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে পাঁচটি নজরমিনার। থাকছে সিসিটিভি এবং ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থাও।
১৯২১
রয়েছে অন্য বিপদও। কুনো-পালপুর এবং আশপাশে ৫০টিরও বেশি চিতাবাঘের (লেপার্ড) বাস। অদূরের রণথম্বৌর ব্যাঘ্র প্রকল্প আর কৈলাদেবী অভয়ারণ্য থেকে বাঘের আনাগোনাও ঘটে প্রায়শই। ‘বহিরাগত’ চিতাদের সঙ্গে তাদের সঙ্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
২০২১
মোদী সরকারের ‘প্রজেক্ট চিতা’র অন্যতম সহায়তাকারী তথা নামিবিয়ার চিতা সংরক্ষণ প্রকল্পের আধিকারিক ল্যারি মার্কারের মতে রোগ বা শিকারি প্রাণীর হানায় চিতার ৯০ শতাংশ শাবকেরই মৃত্যু হয়। অচেনা পরিবেশে তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাই বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
২১২১
আফ্রিকা থেকে চিতা এনে ভারতের জঙ্গলে ছাড়ার সরকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণপ্রেমীদের একাংশ সুপ্রিম কোর্টে মামলাও দায়ের করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে শীর্ষ আদালত সেই আর্জি খারিজ করে ‘পরীক্ষামূলক ভাবে’ চিতা ছাড়ার অনুমতি দেয় মোদী সরকারকে।