কবে প্রথম তাঁর মাথায় এমন কল্পনা এল? এই প্রশ্নের উত্তরে থিয়ো বলেন, ‘‘আমি নেদারল্যান্ডসের সংবাদপত্রে কলাম লিখতাম। ১৯৯০ সালে সমুদ্রতটে কঙ্কাল নিয়ে লিখে খুব মজা পেয়েছিলাম। আমার ভাবনা ছিল, কঙ্কালগুলোর আশেপাশে বালি আটকে বালিয়াড়ি তৈরি হবে। এতে সমুদ্রের এগিয়ে আসা রোধ করা যাবে। তবে গোটাটাই আমার কল্পনা ছিল।’’
থিয়ো ব্যাখ্যা করেছেন সেই প্রযুক্তি। তিনি বলেন, ‘‘একটি দণ্ডের গতি সরলরৈখিক। কিন্তু চক্রাকার মেরুদণ্ডের গতি তো তেমন নয়। তা হলে উপায়? এ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের চক্রাকার গতিকে সরলরৈখিক গতিতে রূপান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ উপরের কাঠামো হাওয়া থেকে টানা শক্তি মেরুদণ্ডে পাঠায়। চক্রাকার গতি তার পর রূপান্তরিত হয় সরলরৈখিক গতিতে। আর পা ফেলে ফেলে এগিয়ে চলে বিস্ট।’’
নির্মাণশৈলির দক্ষতায় বিস্ট হয়ে উঠেছে বুদ্ধিমান। বিস্টগুলো ভুলেও সমুদ্রে নেমে যায় না। অতিরিক্ত যন্ত্র বা পিস্টনের সাহায্যে কতটা হাওয়া গ্রহণ করা ঠিক হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করা আছে। ফলে, আক্ষরিক অর্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ না করেও বুদ্ধিমানের মতোই আচরণ করে কৃত্রিম প্রাণীগুলোর কঙ্কাল। এমনকি সমুদ্রতটে বায়ুর গতি কম থাকলেও সঞ্চয় করে রাখা ইন্ধনেই সে এগিয়ে যাবে পায়ে পায়ে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রুখতে প্রথম যে উদ্ভাবনের ধারণা জন্ম, তা আদতে হয়ে উঠেছে বহুমুখী এক হাতিয়ার। সমুদ্রতট দাপিয়ে বেড়ানো স্ট্র্যান্ড বিস্ট বা বিচ বিস্ট পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে যেমন সফল তেমনই বায়ুশক্তি সঞ্চয় করে রাখার পাশাপাশি জোয়ার-ভাটার দিকে নজর রাখা এমনকি আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার সঙ্গেই ঝড় ঠেকাতে দেওয়ালের মতোও কাজ করে।
কিন্তু তাঁর এই উদ্ভাবন মানবসভ্যতার বিকাশে কী কাজে লাগবে? এ ব্যাপারেও স্পষ্ট ধারণা আছে থিয়োর। তিনি জানিয়েছেন, হয়তো তাঁর এই কাজ দেখে কেউ সত্যিই বানিয়ে ফেলবেন এমন পরিবেশবান্ধব কোনও কৃত্রিম প্রাণী, যা বিনা ইন্ধনে পরিবেশ রক্ষার কাজ করে যাবে। মূলত, আগামী প্রজন্মকে ভাবনার খোরাক জোগাতেই নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধাবনকে উৎসর্গ করেছেন থিয়ো।
থিয়োর তৈরি বিস্টের মেয়াদ ফুরোবে এ বছরের শেষেই। তার পর হয়তো কোনও আস্তাকুড়ে স্থান হবে এক সময় তট দাপিয়ে বেড়ানো বিস্টগুলোর। কিন্তু থিয়ো জানেন, তাঁর তৈরি এই ‘কাইনেটিক বিচ বিস্ট’ অমর হয়ে থাকবে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে। সেই সব শিল্পী, যাঁরা শিল্প ও ইঞ্জিনিয়ারিংকে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে মনে করেন, ঠিক তারই মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy