Advertisement
১২ ডিসেম্বর ২০২৪
US Birthright Citizenship

আমেরিকায় জন্মালেই আমেরিকান নয়! ১৫৬ বছরের ‘বস্তাপচা’ আইন বদলের হুঙ্কার ট্রাম্পের

প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার নেওয়ার প্রথম দিনেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিল করবেন, এ বার তেমনই হুঙ্কার ছাড়লেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৭
Share: Save:
০১ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

দায়িত্বভার নিয়ে প্রথম দিনেই ছক্কা হাঁকাবেন তিনি। শপথের পর অফিসে ঢুকে কী কী কাজ করবেন, তা একরকম ছকে ফেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু এক মাস আগে সেই পরিকল্পনার কথা জানাজানি হতেই সকলের চক্ষু চড়কগাছ! নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এ বার চিরতরে খতম করবেন জন্মসূত্রের নাগরিকত্ব। ফলে অভিবাসী থেকে শুরু করে আমজনতার একটা বড় অংশের মনের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপা আতঙ্ক।

০২ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইস্তক একের পর এক হুঙ্কার ছেড়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার নবতম সংযোজন হল জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিলোপ। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এর উল্লেখ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, এই নিয়মকে ঠান্ডা ঘরে পাঠাতে হলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। সেই জটিল আইনি প্রক্রিয়া সামলানো ট্রাম্পের পক্ষে মোটেই সহজ নয়।

০৩ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর ‘এনবিসি নিউজ়’-এর ক্রিস্টেন ওয়েলকারের সঙ্গে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানেই আগামী চার বছরের কাজের রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে ছিল বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, অভিবাসীদের অন্য দেশে স্থানান্তর এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইনের বিলুপ্তি। পাশাপাশি, উন্নত আমেরিকার ‘স্বপ্ন দেখা’ তথাকথিত অভিবাসীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ একটি চুক্তি করার কথাও বলেছেন তিনি।

০৪ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

আমেরিকার সংবিধানে জন্মসূত্রের নাগরিকত্বকে বলা হয় ‘জুস সোলি’। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ল্যাটিন শব্দ। যার অর্থ হল ‘মাটির অধিকার’। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা হয়েছে, সেখানে জন্ম নেওয়া প্রতিটা শিশুকে স্বাভাবিক ভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শিশুটির মা-বাবা অন্য দেশের নাগরিক হলেও সে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাবে।

০৫ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

১৮৬৮ সালে ১৪তম সংশোধনীতে এই জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময়ে সদ্য গৃহযুদ্ধ কাটিয়ে উঠেছিল আমেরিকা। সংশোধনীটিকে ১৮৫৭ সালের ‘ড্রেড স্কট সিদ্ধান্ত’কে পুরোপুরি নস্যাৎ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যা ছিল ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী ঘটনা।

০৬ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

আফ্রিকা থেকে আসা ড্রেড স্কট ছিলেন একজন ক্রীতদাস। আমেরিকার উইসকনসিন এলাকায় স্ত্রী হ্যারিয়েট এবং দুই মেয়ে এলিজ়া ও লিজ়ির সঙ্গে থাকতেন তিনি। নিজে ও পরিবারের সকল সদস্যের স্বাধীনতার জন্য একটা সময়ে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ওই মামলা ‘ড্রেড স্কট বনাম স্ট্যান্ডফোর্ড’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছে।

০৭ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

১৮৫৭ সালে স্কটের করা মামলার রায় দেয় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে ৭-২ ব্যবধানে পরাজিত হন যুক্তরাষ্ট্রের এই আফ্রিকান ক্রীতদাস। আদালতের যুক্তি ছিল, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কোনও ব্যক্তি আমেরিকার নাগরিকত্ব দাবি করতে পারেন না। ১৮৬৮ সালের সংবিধান সংশোধনীর আগে পর্যন্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলত আটলান্টিকের পারের এই উন্নত রাষ্ট্র।

০৮ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

চতুর্দশ সংবিধান সংশোধনে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব চালু হলে আফ্রিকা-সহ বিশ্বের অন্য দেশের অভিবাসীদের সন্তানেরা স্বাভাবিক ভাবে আমেরিকার নাগরিকত্ব পেতে শুরু করে। পরবর্তী দশকগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট একাধিক বার জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইনের উল্লেখ করেছে। উদাহরণ হিসাবে ১৮৯৮ সালের আমেরিকা বনাম ওং কিম আর্ক মামলার কথা বলা যেতে পারে। রায়ে মা-বাবা অভিবাসী অবস্থান নির্বিশেষে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারীরা দেশটির নাগরিক হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ করেছিল সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

০৯ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ট্রাম্প দাবি করেন, বর্তমানে আমেরিকাই একমাত্র দেশ, যেখানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এর জন্যেই দেশে অভিবাসী সমস্যা বাড়ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের এই দাবি সঠিক নয়। কানাডা ও ব্রাজ়িলেও একই ধরনের আইন রয়েছে। ফলে তাঁর ওই মন্তব্যের জেরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

১০ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করা মোটেই সহজ নয়। এর জন্য ট্রাম্পকে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে হলে আমেরিকার পার্লামেন্টের (পড়ুন কংগ্রেস) দুই কক্ষ ‘হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভস’ ও ‘সেনেট’-এর দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে।

১১ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

এই জটিল নিয়মে আমেরিকার কংগ্রেসে ট্রাম্পের নাগরিককত্ব সংশোধনী আইন পাশ হলেও তা আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১৮৯৮ সালের আর্ক মামলার রায়ে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকারকে মান্যতা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে ট্রাম্পের জমানায় তা বাতিল হবে, এমনটা ভাবা খুবই কঠিন।

১২ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

তবে শপথ নেওয়ার পর বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করতে ট্রাম্প যে উদ্যোগী হবেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অভিবাসীদের একটা বড় অংশকেও দেশত্যাগে বাধ্য করতে পারেন তিনি। এই কাজের জন্য কুর্সিতে বসেই ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন বলে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আতঙ্ক রয়েছে।

১৩ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘অবৈধ ভাবে কিছু শিশুকে আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। এদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ একটি চুক্তির কথা ভেবে রেখেছি।’’ প্রথম দফায় ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন অভিবাসীদের ত্রাণ এবং কাজ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। যদিও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তাঁর সেই সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হয়নি।

১৪ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘এমন অনেক শিশু রয়েছে, যাদের বিভিন্ন ভাবে আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। তারা এ দেশেই বড় হয়েছে বা হচ্ছে। আমাদের দেশের জন্য ভাল কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে তাদের। এই নিয়ে স্বপ্ন দেখছে তারা। রিপাবলিকানরা কখনই তাদের পাশ থেকে সরে যাবে না।’’

১৫ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

পাশাপাশি, প্রবল প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার বার্তাও দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেছেন তিনি। রিপাবলিকান নেতার অভিযোগ, বাইডেন ইচ্ছা করলে অভিবাসী সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু সেই সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন তিনি।

১৬ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, যে সমস্ত অভিবাসীর অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার রেকর্ড রয়েছে, প্রথমে তাঁদের তালিকা তৈরি করবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এর পর তাঁদের আমেরিকা থেকে নির্বাসিত করা হবে। বাছাই করা বেশ কিছু দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার নিয়মেও বড় বদল করতে পারেন তিনি।

১৭ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

চলতি বছরের নভেম্বরে হওয়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম বড় ইস্যু ছিল অভিবাসী সমস্যা। ভোটের প্রচারে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। তাঁদের জন্যেই দেশে মৌলবাদ ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। কুর্সি পেয়ে সেই কাজ করতে গিয়ে নাগরিকত্ব আইনে বদল আনতে চান বলে এ বার স্পষ্ট করলেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।

১৮ ১৮
Donald Trump new US President aims to end birth right citizenship may create legal issues in America

গত নভেম্বরের ৫ তারিখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা হলেও কার্যভার এখনও গ্রহণ করেননি ট্রাম্প। নিয়ম অনুযায়ী, দু’মাস ধরে চলছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন তিনি। এর পরই ওয়াশিংটনের ‘শ্বেত প্রাসাদে’ (পড়ুন হোয়াইট হাউস) পা রাখবেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসেই নাগরিকত্ব আইনে তিনি বদল আনেন কি না, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy