Doctor chopped his driver’s body into 500 pieces at Hoshangabad dgtl
Sunil Mantri
Hoshangabad Murder case: চালককে খুন করে ৫০০ টুকরো করলেন চিকিৎসক! পরকীয়া না মানসিক রোগ, হত্যার নেপথ্যে কী
তাঁর অবৈধ সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবেন, এই আশঙ্কায় নিজের গাড়ির চালককে খুন করে ৫০০ টুকরো করে কেটে ফেলেন মধ্যপ্রদেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসক সুনীল মন্ত্রী।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২২ ১২:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
চিকিৎসকদের অনেকেই ‘ভগবান’ রূপে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু সেই চিকিৎসকই যদি প্রাণ কেড়ে নেন, তা হলে মানুষ কি আর তাঁদের আগের মতো ভরসা করতে পারবে? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। ভোপালের বুকে এমনই এক নৃশংস ঘটনা ঘটে যা, মধ্যপ্রদেশবাসীর রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।
০২২২
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি। মধ্যপ্রদেশের ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সরকারি হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন সুনীল মন্ত্রী। অস্থিসংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে সকলে সুনীলের উপরেই আস্থা রাখতেন। হাসপাতালে সবচেয়ে সিনিয়র অর্থোপেডিক সার্জন হিসাবে প্রচুর নামডাক ছিল তাঁর।
০৩২২
দুই ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকায়, স্ত্রী সুষমা তাঁর সঙ্গেই ভোপালে থাকতে শুরু করেন। আনন্দনগর এলাকায় দোতলা বাড়িতে থাকতেন মন্ত্রী-দম্পতি। সময় কাটানোর জন্যে বাড়ির নীচেই একটি বুটিকের দোকান খোলেন সুষমা।
০৪২২
একা হাতে সব সামলাতে পারবেন না বলে দোকানে রানি বলে এক মহিলাকে নিয়োগ করেন। ২০১৭ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে সুষমার মৃত্যু হয়। স্ত্রীর শেষ স্মৃতি হিসাবে সুষমার নিজের হাতে তৈরি করা বুটিকের দোকানটি বন্ধ না করার নির্দেশ দেন সুনীল।
০৫২২
তিনি রানিকেই দোকান সামলানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেন। এখানেই বাধে গন্ডগোল। রানির হাতে হঠাৎ করেই প্রচুর টাকাপয়সা আসতে থাকে। তাঁর পোশাকআশাক, হাবভাবেও পরিবর্তন আসে। হঠাৎ এমন আমূল পরিবর্তন লক্ষ করে সন্দেহ হয় তাঁর স্বামীর।
০৬২২
বীরেন্দ্র পচৌরী ওরফে বীরু ভাবেন, তাঁর স্ত্রীর ডাক্তারবাবুর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে রয়েছেন। না হলে হঠাৎ এত টাকা আসে কী করে? এই সন্দেহের বশেই তিনি রানির ফোনে কল রেকর্ড দেখেন। দেখতে পান, সুনীলের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়েছে রানির। এমনকি, টাকাপয়সার আদানপ্রদান নিয়েও কথা হয়েছে দু’জনের।
০৭২২
সব জানতে পেরে বীরু সোজা সুনীলের বাড়িতে যান। পাড়াপড়শিকে সুনীলের ব্যাপারে সব খোলসা করে দেবেন বলে ভয় দেখাতে থাকেন বীরু। শুধু তা-ই নয়, রানির সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে হাসপাতালে গিয়েও সুনীলের আসল রূপ কী, তা জানিয়ে আসবেন বলে হুমকিও দেন।
০৮২২
সুনীল বার বার বোঝালেও বীরু কিছুতেই তাঁর কথা মানতে চান না। পাছে তাঁর দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে এই আশঙ্কায় তিনি বীরুকে তাঁর গাড়ি চালাতে অনুরোধ করেন। এই সুযোগে দিনের বেশির ভাগ সময় সুনীলের সঙ্গেই থাকতে পারবেন বীরু।
০৯২২
যদি সুনীল ও রানির মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়ে থাকে, তবে তা খুব সহজেই ধরা পড়বে বীরুর চোখে। একই সঙ্গে তাঁর মাসিক রোজগারও হবে। অবশেষে ১৬ হাজার টাকা মাসিক বেতনে সুনীলের গাড়ি চালাতে রাজি হন তিনি।
১০২২
চাকরি পাওয়ার পরেও তিনি সুনীলকে হুমকি দিতেন মাঝেমাঝেই। সুনীল বার বার এই হুমকির জেরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। বীরু তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন, এই ভেবে তাঁকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন সুনীল।
১১২২
হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সুনীল খুব ভাল করে জানতেন, কী করে খুন করার পর প্রমাণ লোপাট করতে হয়। পরিকল্পনা মাফিক প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করতে শুরু করেন তিনি।
১২২২
অবশেষে সেই সুযোগও পেয়ে গেলেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বীরু জানান, তাঁর দাঁতে অসহ্য যন্ত্রণা করছে। সুনীল তাঁকে বাড়ির ভিতর আসতে বলেন এবং ব্যথা কমানোর জন্য ইনজেকশন দেন।
১৩২২
আসলে ব্যথা কমানোর ওষুধের বদলে বীরুকে তিনি অজ্ঞান করার ওষুধ দিয়েছিলেন। বীরু সম্পূর্ণ অচেতন হলে সুনীল তাঁকে দোতলার বাথরুমে নিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গলার নলি লক্ষ করে ছুরি চালিয়ে খুন করেন বীরুকে।
১৪২২
৪ ফেব্রুয়ারি, সোমবার রাত ৯টা নাগাদ খুন করা হয় বীরুকে। এর পরেই শুরু হয় ভয়ঙ্কর ঘটনা। বীরুর মৃতদেহকে বাথরুমের মেঝেতে ফেলে টুকরো টুকরো করে কাটতে শুরু করেন সুনীল। দেহের টুকরোগুলি দেখে যাতে শনাক্ত করা না যায়, তাই তিনি ড্রাম-ভর্তি অ্যাসিডের মধ্যে টুকরোগুলি ডুবিয়ে রাখেন।
১৫২২
অ্যাসিড, ড্রাম এবং বড় আকারের বাসন সুনীল আগে থেকেই কিনে রেখেছিলেন। সোমবার সারা রাত ধরে বীরুর দেহ কাটতে থাকেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে বীরুর পরনের জামা-সহ রক্তে মাখা সমস্ত কাপড়ই তিনি বাড়ি থেকে কিছু দূরে ফেলে আসেন।
১৬২২
কেউ যাতে তাঁকে সন্দেহ না করে, তাই মঙ্গলবার সকালেও তিনি হাসপাতালে যান। দুপুর অবধি থেকে তিনি আবার বাড়ি ফিরে আসেন। আবার শুরু হয় মৃতদেহ কাটা। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁর প্রতিবেশীরা পুলিশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
১৭২২
তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসককে রক্তমাখা জামায় মাঝেমাঝেই বাড়ির মধ্যে হাঁটাচলা করতে দেখা গিয়েছে। এমনকি, তাঁর বাড়ির দিক থেকে আসা অদ্ভুত পোড়া গন্ধে তাঁদের সন্দেহ আরও বেড়েছে।
১৮২২
পুলিশ খোঁজ পেয়েই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করতে আসে। বাড়ির ভিতর এসে তারা হাতেনাতে প্রমাণ পায়। ঘর জুড়ে রক্ত, মাংসের টুকরো ছড়ানো। বড় ড্রাম ও বাসনের ভিতরেও মাংসের টুকরো ভেসে রয়েছে।
১৯২২
পুলিশ আধিকারিক অরবিন্দ সাক্সেনা সেই মুহূর্তে ঘরের ভিতর উপস্থিত ছিলেন। তিনি পরে জানান, পুলিশরা যখন ঘরে ঢোকে, তখনও সুনীল মৃতদেহের কোমরের নীচের অংশ টুকরো টুকরো করে কাটছিলেন। আচমকা পুলিশদের দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন।
২০২২
অ্যাসিডে দেহের টুকরোগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো শনাক্ত করা যাচ্ছিল না, কাকে এই ভাবে খুন করেছেন সুনীল। পরে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন তিনি নিজেই সব স্বীকার করেন।
২১২২
কিন্তু শুধু মাত্র সন্দেহ করতেন বলে এক জনকে এত নৃশংস ভাবে খুন করা যেতে পারে, তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না পুলিশ। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ টি টুকরো উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কেন এমন নৃশংস ভাবে হত্যা? তদন্তকারীদের অনুমান, হয়তো রানির সঙ্গে তাঁর সত্যিই সম্পর্ক ছিল, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই সুনীল খুন করেছেন, না হলে সুনীল মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলেন না।
২২২২
খুনের কারণ যা-ই হোক না কেন, এই ভয়ানক হত্যাকাণ্ড গোটা মধ্যপ্রদেশকে নাড়িয়ে রেখে দেয়। চিকিৎসক হয়ে তিনি কী করে এক জন নির্দোষ ব্যক্তিকে এ ভাবে খুন করতে পারেন, তার উত্তর আজও মেলেনি।