Definition of hell as per Hinduism and punishment for various sims dgtl
Hell
নরক কেমন? কোন পাপের জন্য কোন শাস্তিই বা সেখানে বরাদ্দ
দেবতারা স্বর্গে থাকেন, সেখানে গিয়ে জুটতে পারে পুণ্যবানদের আত্মা। তা হলে পাপীদের কী হবে? এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় নরক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ ০৯:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
মৃত্যুর পরে মানুষ কোথায় যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই এক সময়ে জন্ম নিয়েছিল স্বর্গ বা নরকের ধারণা। দেবতারা স্বর্গে থাকেন, সেখানে গিয়ে জুটতে পারে পুণ্যবানদের আত্মা। তা হলে পাপীদের কী হবে? এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় নরক।
০২২২
হিন্দু ধর্মে নরকের অস্তিত্ব নেই কারণ, ঋগ্বেদে নরকের কোনও উল্লেখই নেই। প্রচলিত ধারণা হল, এ জন্মে কৃত পাপের জন্য নরকে মেয়াদ খাটতে হয় আত্মাদের। তার পর কর্মফল ফুরলে স্বর্গে কিছু দিনের জন্য বসবাস। সেখানকার মেয়াদও শেষ হলে পুনরায় ধরাধামে অবতীর্ণ হতে হয় আত্মাকে। একমাত্র সদাচারী মানুষের আত্মাই পুনর্জন্ম লাভ করে না।
০৩২২
‘ভাগবত পুরাণ’ অনুসারে নরকের অবস্থান ভূপৃষ্ঠের গভীরে সপ্ত পাতালেরও নীচে। ব্রহ্মাণ্ডের দক্ষিণে অবস্থান করে নরক। ‘দেবী ভাগবত’ অনুসারে নরক সাতটি পাতালের উপরে কিন্তু ভূপৃষ্ঠের নীচে অবস্থিত।
০৪২২
নরকের অধিপতি হলেন যম। তিনি চিত্রগুপ্তের সহায়তায় মানুষের পাপ-পুণ্যের বিচার করেন। যম ও চিত্রগুপ্ত দেবতা। মর্ত্য থেকে আত্মাদের নরকে নিয়ে যায় যমদূতরা। তারা দেবতা নয় বটে, কিন্তু অসুর অথবা দানবও নয়। কাঁধে কাঁটাওয়ালা মুগুর বা ড্যাঙশ নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়। তাদের হাত থেকে কোনও নশ্বর জীবেরই রক্ষা নেই।
০৫২২
প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘ঋগ্বেদ’-এ কিন্তু নরকের বিস্তারিত বর্ণনা নেই। সেই স্থানকে শুধুমাত্র অশুভ এবং অন্তহীন গহ্বর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘অথর্ব বেদ’-এ নরক ‘অন্ধকারের দেশ’ হিসেবে বর্ণিত।
০৬২২
সাহিত্যিক সমরেশ বসু তাঁর কালকূট ছদ্মনামে রচিত একাধিক পুরাণ-নির্ভর কাহিনিতে নরককে একটি ভৌগোলিক স্থান হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, ‘স্বর্গ’ বা ‘নরক’-এর ধারণা আর্য অভিপ্রয়াণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অভিপ্রয়াণরত আর্যরা ‘নরক’ বলতে বসবাসের অযোগ্য কোনও অস্বাস্থ্যকর স্থানকেই বুঝিয়েছিলেন।
০৭২২
নরকের প্রথম বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় ‘শতপথ ব্রাহ্মণ’-এ। অনুমান, উপনিষদের কালেই পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা গড়ে উঠতে শুরু করে। এই সময়ে ভারতে কৃষি-ভিত্তিক সভ্যতা বিস্তৃত হচ্ছিল। যাযাবরবৃত্তি ছেড়ে নতুন সমাজ-জীবনে প্রবেশ ঘটছিল। সেই সমাজের উপযোগী নীতিবোধ গড়ে তুলতে পাপ ও পুণ্যের ধারণা একান্ত প্রয়োজন ছিল। আর তারই অনিবার্য ফল কর্মফলবাদ ও মৃত্যু-পরবর্তী দশায় শাস্তি বা পুরস্কারের তত্ত্ব।
০৮২২
বিবিধ শাস্ত্রগন্ধের দাবি নরকের সংখ্যা একাধিক। একেকটি দুষ্কর্মের কারণে পৃথক পৃথক নরকের বন্দোবস্ত রয়েছে বলে জানায় স্মৃতিশাস্ত্র এবং পুরাণগুলি।
০৯২২
‘অগ্নি পুরাণ’ মাত্র চারটি নরকের কথা বলে। কিন্তু কোনও কোনও মতে নরকের সংখ্যা সাত। আবার ‘মনুস্মৃতি’ ও ‘যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি’ ২১টি নরকের বর্ণনা দেয়। বোঝাই যায়, স্মৃতিশাস্ত্রগুলি প্রণয়ন, সম্পাদন ও সংযোজনের কালে সমাজে জটিলতা বেড়েছে, পাপ বা দুষ্কর্মও বিবিধ হয়য়ে উঠছিল। ‘ভাগবত পুরাণ’ ও ‘বিষ্ণু পুরাণ’ ২৮টি নরকের বর্ণনা রাখে। ‘দেবী ভাগবত’ এবং ‘ভাগবত পুরাণ’ অনুসারে প্রধান নরকগুলি এবং কোন কৃতকর্মের জন্য কোনটি নির্দিষ্ট, তার খোঁজ নেওয়া যেতে পারে।
১০২২
তমিস্রা: অন্ধকারাচ্ছন্ন এই নরকে অন্যের সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তান অপহরণের জন্য পাপীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে অন্ন-জল না দিয়ে যমদূতরা প্রহার করতে থাকে।
১১২২
অন্ধতমিস্রা: এখানে ঠগ ও প্রবঞ্চকদের স্থান হয়। প্রভূত প্রহার ও অন্যান্য নির্যাতন দ্বারা তাদের অন্ধ করে ফেলা হয়।
১২২২
রৌরব: স্বার্থপর, ঈর্ষাতুর ও মিথ্যাভাষীদের জন্য বরাদ্দ এই নরক। এখানে ‘রুরু’ নামক সর্প-জাতীয় দানবেরা পাপীদের উপরে অকথ্য নির্যাতন চালায়। ‘মহারৌরব’ নামে আরও একটি নরক আছে। যেখানে ররুরা পাপীদের মাংস খুবলে খায়।
১৩২২
কুম্ভীপাক: পশুপক্ষীর উপরে অন্যায় অত্যাচারের কারণে পাপীদের এখানে নিয়ে এসে বিশালাকার কুম্ভে ফুটন্ত তৈলে সিদ্ধ করা হয়। আবার দেবতা-বিরোধীদের এখানে শাস্তি প্রদানের কথাও কোনও কোনও পুরাণ থেকে জানা যায়।
১৪২২
কালসূত্র: ব্রহ্মহত্যার কারণে এই নরকবাস নির্দিষ্ট। এখানে তপ্ত তামার টাটে পাপীদের ফেলে রাখা হয়।
১৫২২
অসিপত্রকানন: বেদ-বিরোধীদের এখানে ঠাঁই হয়। এখানকার গাছের পাতাগুলি ধারালো তরবারির মতো। পাপীদের উপরে সেগুলি জোরে জোরে নিক্ষিপ্ত হয়।
১৬২২
শূকরমুখ: যে সব রাজকর্মচারী নির্দোষ ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়েছেন অথবা কোনও ব্রাহ্মণকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন, তাঁদের নিয়ে এসে যমদূতরা আখমাড়াই কলে পিষতে থাকে।
১৭২২
অন্ধকূপ: নামেই মালুম যে, এটি একটি অন্ধকার কূপ। অন্যের অনিষ্টকারীদের এখানে নিক্ষেপ করা হয়। এই কূপ নিশ্ছিদ্র অন্ধকার এবং এটি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গে পূর্ণ।
১৮২২
পুৎ বা পুন্নাম: অপুত্রক ব্যক্তিদের এখানে যেতে হয়। কারণ, পুত্র না থাকায়, তাদের পিণ্ডদানের কোনও ব্যবস্থা হয় না। তারা অতৃপ্ত অবস্থায় এখানে নরক যন্ত্রণা ভোগ করে।
১৯২২
অবীচি: জলশূন্য এই নরকে অসাধু ব্যবসায়ী এবং বিশ্বাসঘাতকদের স্থান হয়। ১০০ যোজন উঁচু পাহাড় থেকে তাদের যমদূতরা ঠেলে ফেলে দেয়। পাথরে পূর্ণ এই শুষ্ক নরকে তারা তৃষ্ণায় কাতরাতে থাকে।
২০২২
শূলপ্রোত: মূলত পশুপক্ষীর প্রতি নির্যাতনের কারণে এখানে পাপীদের শূলে চড়ানো হয়। যমদূতরা সেই অবস্থাতেই তাদের ত্রিশূল দিয়ে নিরন্তর খোঁচাতে থাকে।
২১২২
সূচিমুখ: সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিদের এখানে নিয়ে এসে যমদূতরা তাদের শরীরে সূচ প্রবেশ করিয়ে সেলাই করতে থাকে।
২২২২
এর বাইরেও রোধ, বিমোহন, অধোমুখ, বহ্নিজ্বালা প্রভৃতি নরকের বর্ণনা পুরাণগুলি রাখে। তবে সেগুলিকে অপ্রধান নরক হিসেবেই দেখা হয়।