খুন, ধর্ষণের পাশাপাশি রাম রহিমের বিরুদ্ধে আরও একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রাম রহিমের পালিত কন্যা হানিপ্রীত ওরফে প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
ডেরা সাচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম প্যারোলে ৪০ দিনের জন্য জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু খুন, ধর্ষণে দোষী রাম রহিমের প্যারোলে মুক্তিতে খুশি নন অনেকেই। দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল রাম রহিমকে জেলে ঢোকানোর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখেছেন।
০২১৫
স্বাতীর দাবি, রাম রহিমের মতো অপরাধীকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার অর্থ হল, দেশ জুড়ে সমস্ত ‘নির্ভয়া’র নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেওয়া। রাম রহিমের মতো অপরাধীদের এখনই জেলে ভরারও সওয়াল করেছেন দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান।
০৩১৫
স্বাতী বলেছেন, ‘‘রাম রহিম একজন ধর্ষক এবং খুনি। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে কিন্তু হরিয়ানা সরকার যখনই চায়, তাকে প্যারোলে মুক্ত করে। ও জেল থেকে বেরিয়েই সৎসঙ্গের আয়োজন করছে এবং সেই অনুষ্ঠানে হরিয়ানা সরকারের ডেপুটি স্পিকার এবং মেয়রও যোগ দিচ্ছেন।’’
০৪১৫
স্বাতী আরও দাবি করেছেন যে, গুরমিতের সৎসঙ্গে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা সকলেই তাঁর ভক্ত। হরিয়ানা সরকারের কাছে গুরমিত প্যারোল বাতিল করে তাঁকে জেলে পাঠানোর আবেদন করেছেন স্বাতী।
০৫১৫
বস্তুত, গত কয়েক দিন ধরেই রাম রহিমের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে হরিয়ানার রাজনীতি সরগরম। মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর শুক্রবার দাবি করেন, ‘‘সরকার কাউকে মুক্তি দেয় না। মুক্তি দেয় আদালত। এর বেশি এ নিয়ে আর কিছু বলব না।’’
০৬১৫
খুন, ধর্ষণের পাশাপাশি রাম রহিমের বিরুদ্ধে আরও একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রাম রহিমের পালিত কন্যা হানিপ্রীতকে নিয়ে।
০৭১৫
রাম রহিম গ্রেফতার হওয়ার পরে ডেরা সমর্থকদের হিংসায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ইন্ধন দেওয়া এবং রাম রহিমকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন হানিপ্রীত ইনসান ওরফে প্রিয়ঙ্কা তানেজা।
০৮১৫
ধর্ষণ ও খুনের দায়ে ২০ বছরের জেল খাটছেন রাম রহিম। এ বার প্যারোলে বেরিয়ে এসে রাম রহিম বলেছেন, ‘‘আমাদের কন্যার নাম হানিপ্রীত। অনেকে তাঁকে ‘দিদি’ বলে ডাকেন। কিন্তু এতে একটা জটিলতাও হয়, কারণ সবাই তো দিদি। তাই আমরা এখন তাঁর নাম দিয়েছি ‘রুহানি দিদি’। উচ্চারণ করতে যাতে সুবিধে হয়, তাই এই নামটাকেও একটু আধুনিক করে বলা যায়, ‘রুহদি’।’’
০৯১৫
এই ‘রুহদি’র কর্মকাণ্ডও কম চাঞ্চল্যকর নয়। ৪১ বছরের হানিপ্রীত সমাজমাধ্যমে নিজের পরিচয় দেন ‘পাপার দেবদূত’ বলে। খুন ও দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে জেলে যাওয়া ‘পাপা’ অর্থাৎ রাম রহিম আসলে নির্দোষ বলেই তাঁর দাবি। মাঝেমাঝে ‘পাপা’র ‘সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরও’ সঙ্গী হন তিনি।
১০১৫
১৯৯৯-এ হানিপ্রীত ওরফে রুহদি ওরফে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে বিয়ে হয় বিশ্বাস গুপ্তের। ১১ বছর সুখে দাম্পত্য করার পর আচমকাই দম্পতির জীবনে আবির্ভাব হয় রাম রহিমের। প্রিয়ঙ্কা যতই রাম রহিমের কাছাকাছি আসতে থাকেন, ততই দূরত্ব বাড়তে থাকে স্বামী বিশ্বাসের সঙ্গে।
১১১৫
বিয়ের এক দশক এক বছর পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন হানিপ্রীত। পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন রাম রহিমের সঙ্গে। নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন, রাম রহিমের পালিত কন্যা হিসেবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
১২১৫
বিশ্বাসের অভিযোগ ছিল, ২০১১-তে তিনি হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলেন হানিপ্রীতকে। কী হয়েছিল সে দিন? বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি রাম রহিমের গুহায় গিয়েছিলাম। আমি তখনই ওদের দু’জনকে যৌনতায় লিপ্ত হতে দেখে ফেলি। আমি যে জেনে ফেলেছি, সেটা জানার পর প্রিয়ঙ্কা (হানিপ্রীত) ও রাম রহিম দু’জনে মিলে আমাকে হুমকি দেন। বলা হয়, জানাজানি হলে আমার পরিবারকে খতম করে দেওয়া হবে। এর পরই আমি ডেরা ছেড়ে পালিয়ে আসি।’’
১৩১৫
কিন্তু হানিপ্রীত বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, বিশ্বাস হতাশায় এ সব বলছেন। কার্যত একই অভিযোগ বিশ্বাসের বাবা মহেন্দ্রও করেছিলেন। ১৯৭০ থেকে মহেন্দ্র ডেরায় যাতায়াত করেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তাঁরও ডেরায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
১৪১৫
২০০২-এ সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে গুলি করে খুন করা হয়। তাঁর সংবাদপত্র ‘পুরা সচ্’ প্রকাশ করেছিল একটি চিঠি। সেই চিঠিতে রাম রহিম কী ভাবে তাঁরই এক শিষ্যাকে যৌন নিগ্রহ করেছেন তার বর্ণনা ছিল। সেই ঘটনায় রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
১৫১৫
সেই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। শেষ পর্যন্ত বহু আইনি লড়াই পেরিয়ে দোষী সাব্যস্ত হন রাম রহিম। রাম রহিমকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁর পালিত কন্যা হানিপ্রীত ওরফে রুহদিকে।