David Dhawan became director under the influence of another Bengali director dgtl
David Dhawan
David Dhawan: ঋত্বিক ঘটকের এক বিশেষ ছবি দেখে ফিল্ম তৈরির অনুপ্রেরণা পান ডেভিড ধাওয়ান!
পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের মতো ছবি বানাতে না পারলেও, ভাল মানের ছবি বানিয়ে ভারতীয় দর্শকদের উপহার দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন ডেভিড।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২২ ১০:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বলিউডে এমন কয়েক জন পরিচালক রয়েছেন, যাঁরা বাণিজ্যিক ও কমেডি ঘরানার ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক তৈরি করেছেন। বলিপাড়ার এই পরিচালকদের তালিকায় ডেভিড ধাওয়ানের নাম শীর্ষে।
০২১৯
ভারতীয় হিন্দি ছবিকে বিনোদন জগতের এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে সফল হয়েছেন ডেভিড। আশির দশকে হিন্দি ছবির সম্পাদনার মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু করলেও আজ ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সফল পরিচালক তিনি।
০৩১৯
১৯৮৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল মহেশ ভট্ট পরিচালিত ‘সারাংশ’ ছবিটি। এই ছবির সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডেভিড। এমনকি, অনুপম খের এই ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় প্রথম অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি শুধু ভারতীয় সিনেমাজগতেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও সমাদৃত হয়েছে। সম্পাদনার জন্য বাহবাও পেয়েছিলেন ডেভিড।
০৪১৯
ডেভিড ধাওয়ান ওরফে রাজিন্দর ধাওয়ানের জন্ম ত্রিপুরার আগরতলায়। তাঁর বাবা ইউকো ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন। বদলির চাকরির সূত্রেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেত ধাওয়ান পরিবার। ডেভিডের দাদা অনিল অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা জাগে ডেভিডের।
০৫১৯
চাকরিসূত্রে ডেভিডের বাবা কানপুরে বদলি হলে স্কুলজীবনের পড়াশোনা সেখানে থেকেই শেষ করেন ডেভিড। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর অভিনয় বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হন এফটিআইআই (ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া)-তে। কলেজে ভর্তি হয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে ডেভিড রাখেন তিনি।
০৬১৯
সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় রাকেশ বেদি, সতীশ শাহ, সুরেশ ওবেরয়ের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে। তাঁদের অভিনয় দক্ষতা দেখে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ডেভিড। আর অভিনয় নয়, ছবি নির্মাণ ও সম্পাদনা নিয়েই পড়াশোনা করবেন বলে ঠিক করেন তিনি।
০৭১৯
ডেভিড যে কলেজে পড়তেন, সেখানে প্রতি দিন নিয়ম করে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে বিকেল ৫টা থেকে একটি করে ছবি দেখানো হত। সেই প্রেক্ষাগৃহেই এক দিন বিকেলবেলায় একটি ছবি দেখতে যান ডেভিড। ঘটনাচক্রে, সেদিন প্রেক্ষাগৃহে একটি বাংলা ছবি দেখানো হচ্ছিল।
০৮১৯
ছবিটি দেখার সময় এক অদ্ভুত ঘোরে হারিয়ে যান ডেভিড। পরিচালকের কাজ দেখে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের পলক ফেলতে পারেননি ডেভিড। ছবি শুরু হয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে দেখতে ঢুকেছিলেন বলে পরিচালকের নাম পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন ডেভিড।
০৯১৯
ছবিটি শেষ হলে তাঁর বন্ধুদের কাছে থেকে জানতে পারেন ছবির নির্দেশকের নাম। পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। যে ছবিটি দেখানো হচ্ছিল, তার নাম ‘মেঘে ঢাকা তারা’। সেই মুহূর্তেই ডেভিড স্থির করেন, ঋত্বিক ঘটকের মতো ছবি বানাতে না পারলেও, ভাল মানের ছবি বানিয়ে ভারতীয় দর্শকদের উপহার দেবেন তিনি।
১০১৯
কলেজের পড়াশোনা শেষ করে তাই হিন্দি ছবিতে সম্পাদনার কাজ শুরু করেন তিনি। সম্পাদক হিসাবে সফল হলেও, তাঁর লক্ষ্য ছিল ছবি নির্দেশনা করা। শেষ পর্যন্ত অভিনেতা বন্ধু সঞ্জয় দত্তর সহায়তায় প্রথম ছবি নির্মাণের সুযোগ পান ডেভিড।
১১১৯
অভিনেতা গোবিন্দ ও সঞ্জয়কে নিয়ে তৈরি করেন তাঁর প্রথম ছবি ‘তাকতবর’। ১৮৮৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে সাড়া ফেলেনি।
১২১৯
ঠিক তার পরের বছরেই ডেভিড ধাওয়ান পরিচালিত ‘স্বর্গ’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে রাজেশ খন্না, গোবিন্দ ও জুহি চাওলাকে অভিনয় করতে দেখা যায়। সাবলীল অভিনয়ের সঙ্গে যথাযথ গানের ব্যবহারের ফলে ছবিটি বক্স অফিসে হিট হয়। সকলেই ডেভিডের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
১৩১৯
তার পরেই প্রকাশ্যে আসে ডেভিড-গোবিন্দ জুটি। এখনও পর্যন্ত ৪২টিরও বেশি ছবি পরিচালনা করেছেন ডেভিড। তার মধ্যে ১৮টি ছবিতে মুখ্য চরিত্র হিসাবে তিনি গোবিন্দকেই বেছে নিয়েছিলেন। এই ছবিগুলির প্রতিটিই ছিল কমেডি ঘরানার ছবি।
১৪১৯
এই ছবিগুলির বেশির ভাগই বক্স অফিসে সুপারহিট। ‘স্বর্গ’, ‘শোলা অউর শবনম’, ‘আঁখে’, ‘কুলি নম্বর ওয়ান’, ‘হিরো নম্বর ওয়ান’, ‘রাজাবাবু’, ‘সাজন চলে সসুরাল’, ‘দিওয়ানা মাস্তানা’, ‘বড়ে মিয়া ছোটে মিয়া’, ‘হাসিনা মান জায়েগি’, ‘জোড়ি নম্বর ওয়ান’, ‘পার্টনার’ প্রভৃতি।
১৫১৯
পরিচালক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, হিন্দি ছবির জগতে তাঁর পছন্দের পরিচালক ছিলেন মনমোহন দেশাই। তাঁর ছবি নির্মাণের ঘরানাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ডেভিড। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই সিনেমাপ্রেমীদের মনে তাঁর নিজস্ব ছবি নির্মাণের নির্দিষ্ট ছাপ তৈরি হয়ে যায়।
১৬১৯
গোবিন্দ ছাড়াও প্রায় সমস্ত বলি তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন ডেভিড। অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগণ, সলমন খানের সঙ্গে কাজ করে একের পর এক হিট ছবি বানিয়েছিলেন তিনি।
১৭১৯
ডেভিডের দুই ছেলে রোহিত ও বরুণ দু’জনেই বলিজগতের সঙ্গে যুক্ত। রোহিত ইতিমধ্যে দু’টি ছবির নির্দেশনাও করেছেন। ‘দেশি বয়েজ’ ও ‘ঢিসুম’ ছবি নির্দেশনা করলেও সাফল্য আসেনি ডেভিড-পুত্র রোহিতের কাছে।
১৮১৯
তবে, বরুণ বর্তমানে ভারতীয় সিনেমার একটি উদীয়মান নক্ষত্র। কর্ণ জোহর পরিচালিত ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জীবনের সূত্রপাত হলেও বাবার নির্দেশনায় ‘ম্যায় তেরা হিরো’, ‘জুড়য়া ২’ ও ‘কুলি নম্বর ওয়ান’-এর রিমেক ছবিতে অভিনয় করেছেন বরুণ।
১৯১৯
তবে, ডেভিড স্বীকার করেন, তিনি ছবি নির্মাণের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটকের থেকে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় ডেভিডের।