Cueva de los Tayos: legends says tons of gold and metal library is there inside this cave dgtl
Cueva de los Tayos
গভীর জঙ্গলে কৃত্রিম গুহা, স্বর্ণভান্ডার, ধাতব গ্রন্থাগার! এই গুহায় গিয়েছিলেন আর্মস্ট্রংও
১৯৭১ সালে এরিক ‘দ্য গোল্ড অফ দ্য গডস’ নামে একটি বই লেখেন। এই বইয়ে তিনি কুয়েভা দে লস টেয়োস সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য লেখেন যা রাতারাতি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
সংবাদ সংস্থা
লন্ডনশেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ইকুয়েডরের কুয়েভা দে লস টেয়োস গুহা। কৃত্রিম সুড়ঙ্গ, হারিয়ে যাওয়া সোনা, ভাস্কর্য এবং একটি ধাতব গ্রন্থাগারের সন্ধানে ১৯৭৬ সালে একটি বড় অভিযানে গুহায় প্রবেশ করেছিল অভিযাত্রীদের একটি দল। অভিযাত্রীদের এই দলের মধ্যে ছিলেন চাঁদে প্রথম পা রাখা নভোচর নিল আর্মস্ট্রংও। মনে করা হয় এই গুহাগুলির আশেপাশে এক সময় এক সভ্যতা তৈরি হয়েছিল। উল্কাপাতের ফলে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। গুহাগুলির ভিতরেই থেকে যায় সেই সভ্যতার অমূল্য ধাতব ভান্ডার।
০২১৮
দক্ষিণ-পূর্ব ইকুয়েডরের সান্তিয়াগো ডি মেন্ডেজ শহর থেকে প্রায় ২৩ মাইল (প্রায় ৩৭ কিমি) দক্ষিণ-পূর্বে একটি বৃষ্টিঅরণ্যে কুয়েভা দে লস টেয়োস গুহাগুলি রয়েছে। পেরুর সীমান্ত থেকে এই গুহাগুলির দূরত্ব খুব বেশি নয়।
০৩১৮
গুহাগুলির কাছাকাছি শুয়ের উপজাতির বাস। প্রথমে নৌকায় চেপে ও পরে পায়ে হেঁটে এই গুহায় পৌঁছনো যায়। ম্যাকাস শহর থেকে হেলিকপ্টারে করেও এই গুহাগুলিতে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
০৪১৮
আগে এই গুহা কোনও বিলুপ্ত সভ্যতার অংশ বলে মনে করা হলেও, বর্তমানে এই গুহা শুয়ের উপজাতির আধ্যাত্মিক এবং আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের কেন্দ্র। দীর্ঘ দিন ধরেই শুয়েররা এখানে পূজার্চনা করে আসছেন।
০৫১৮
এই গুহায় বাস বহু বিষাক্ত পোকামাকড়ের। বিষাক্ত ট্যারেন্টুলা মাকড়সাদেরও এই গুহায় দেখা যায়। এই গুহাগুলিতে টেয়োস নামের এক নিশাচর পাখির বাস। এই পাখির নামেই গুহাগুলির নাম দেওয়া হয়েছে কুয়েভা দে লস টেয়োস। শুয়ের উপজাতির মানুষদের অন্যতম পছন্দের খাবার টেয়োস।
০৬১৮
বিগত বহু দশক ধরে শুয়েররাই এই গুহাগুলির ‘মালিক’। ১৯৫০ এবং ৬০-এর দশক থেকে সোনা পাওয়ার লোভে এই গুহাগুলির আশেপাশে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
০৭১৮
সুইস লেখক এরিক ভন ডেনিকেন ১৯৬৮ সালে ‘চ্যারিয়টস অফ দ্য গডস’ নামে একটি বই লেখেন। সেই বইয়ে তিনি মহাকাশ নিয়ে বিভিন্ন মনগড়া তত্ত্ব লিখেছিলেন। এই লেখা নিয়ে অনেক বিতর্কও তৈরি হয়।
০৮১৮
এর ঠিক তিন বছর পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে এরিক ‘দ্য গোল্ড অফ দ্য গডস’ নামে আরও একটি বই লেখেন। এই বইয়ে তিনি কুয়েভা দে লস টেয়োস সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য লেখেন যা রাতারাতি বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
০৯১৮
‘দ্য গোল্ড অফ দ্য গডস’-এ, জ্যানোস জুয়ান মরিকজ নামে এক অভিযাত্রীর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছিলেন এরিক। এই বইয়ে তিনি লেখেন, জ্যানোস ১৯৬৯ সালে এই গুহাগুলিতে প্রবেশ করেন। গুহার ভিতরে জ্যানোস সোনার ভান্ডার, অদ্ভুত শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য এবং ধাতব পাতে সংরক্ষিত বিভিন্ন তথ্য লেখা একটি ‘ধাতব গ্রন্থাগার’ খুঁজে পান বলেও এরিক এই বইয়ে উল্লেখ করেন।
১০১৮
এরিক এই বইয়ে জ্যানোসের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে এ-ও দাবি করেন যে, এই গুহাগুলি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি এবং উন্নত সভ্যতার মানুষেরা এই গুহাগুলি তৈরি করেছিলেন। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় সেই সভ্যতা।
১১১৮
এরিকের বই পড়ে সোনা এবং ধাতব গ্রন্থাগার খুঁজে পেতে কুয়েভা দে লস টেয়োস গুহাগুলিতে যাওয়ার হিড়িক বেড়ে যায়।
১২১৮
এরিকের লেখা বই কুয়েভা দে লস টেয়োসের প্রথম বড় অভিযানকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৯৭৬ সালের এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন স্কটিশ স্থপতি স্ট্যান হল। খুব দ্রুত এই অভিযান পৃথিবীর অন্যতম বড় গুহা অভিযানে পরিণত হয়।
১৩১৮
এই অভিযানে গিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে ব্রিটিশ এবং ইকুয়েডরের সরকারি আধিকারিক, স্থানীয় বিজ্ঞানী, ব্রিটেনের বিশেষ বাহিনী এবং মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রং।
১৪১৮
হাতে তৈরি ম্যাপ এবং স্থানীয়দের সাহায্যে এই গুহাগুলিতে পৌঁছয় অভিযাত্রীদের দল। প্রাণী এবং উদ্ভিদবিদরা এই গুহায় গিয়ে বহু নতুন জিনিসের সন্ধান পান। বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারও হয় এই গুহায়। তবে ধাতব গ্রন্থাগার তো দূর অস্ত্, এক কুচো সোনাও তাঁরা খুঁজে পাননি।
১৫১৮
এই গুহাগুলি পরীক্ষা করে অভিযাত্রী এবং বিজ্ঞানীদের দল এমন কিছু তথ্য পাননি যার সাহায্যে এটা প্রমাণ করা যায় যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম ভাবে এই গুহাগুলি তৈরি করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়েই এই গুহা তৈরি হয়েছিল।
১৬১৮
এই অভিযানের পর থেকে এই গুহাগুলিতে আরও অনেকগুলি অনুসন্ধান অভিযান চালানো হয়েছিল। কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের তরফে এই গুহাগুলিকে নিয়ে বেশ কিছু তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনও বারেই সোনা বা অন্যান্য ধাতব পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৭১৮
বহু ব্যর্থ অভিযানের পর বেশির ভাগ মানুষই এরিকের লেখাগুলিকে কল্পনাপ্রসূত বলেই ধরে নেন। যদিও এক অংশের মতে গুহার এমন কিছু বিশেষ দরজা রয়েছে যা এখনও মানুষের নাগালের বাইরে। আর এই সব দরজা টপকালেই সেই ধাতব ভান্ডারে পৌঁছে যাওয়া যাবে। কিন্তু এই সব দরজার নাগাল আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
১৮১৮
বর্তমানে এই গুহাগুলিকে ঘিরে অভিযানের পরিমাণ কমে এলেও শুয়ের উপজাতির মানুষ এখনও এই গুহাগুলিকে ব্যবহার করেন। গুহায় প্রবেশের জন্য এই উপজাতি লতাপাতা দিয়ে তৈরি মই ব্যবহার করে।