বাংলার বিধানসভায় ফিকে হতে হতে মিলিয়ে গিয়েছিল ‘লাল গড়’। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচন, যাকে ২০২৪ সালের লোকসভার সেমিফাইনাল বলে মনে করা হচ্ছে, দেখা গেল তারও একই ‘ট্রেন্ড’।
০৪১৮
চার রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশ হতে দেখা গেল, যেখানে যেখানে দু’টি একটি লাল ঘাঁটি ছিল, সেগুলো ধুয়ে মুছে সাফ।
০৫১৮
রাজস্থানে সিপিএম দু’টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল গত বিধানসভা নির্বাচনে। সেই দু’টি এবং আরও একটি কেন্দ্রের লড়াইয়ে নজর রেখেছিলেন বামপন্থীরা।
০৬১৮
এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রই কৃষিপ্রধান এলাকা। একটি শিকর জেলার দাঁতারামগড়। রাজস্থানের কৃষক আন্দোলনের ভরকেন্দ্র। কৃষক নেতা আমরারামের নেতৃত্ব এই শিকরের কৃষকেরা নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন জিতে নিয়েছিলেন বিধানসভায়।
০৭১৮
অন্য দু’টি কেন্দ্র যথাক্রমে বিকানেরের দুঙ্গারগড় এবং হনুমানগড় জেলার ভদ্রা। এই দু’টি আসনেই ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতছিল সিপিএম। দুই কেন্দ্র থেকে দু’জন কৃষক নেতা বিধায়ক হয়ে গিয়েছিলেন রাজস্থান বিধানসভায়। রবিবার বিধানসভার গণনা শুরু হওয়ার পর তাই নজর ছিল এই তিন আসনে।
০৮১৮
সকালের দিকে লড়াইয়ে এগিয়েই ছিলেন বামেরা। গতবার সিপিএমের বিজিত আসন ভদ্রায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল আগের বারের বাম বিধায়ক বলওয়ন পুনিয়া এবং বিজেপির সঞ্জীব কুমারের মধ্যে। কখনও একশো কখনও দেড়শো ভোটের ফারাকে এগিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
০৯১৮
অন্য দিকে, গত বারের জেতা আরও একটি আসন দু্ঙ্গারগড়ে দুপুর পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন কৃষক নেতা গিরিধারিলাল।
১০১৮
তবে দাঁতারামগড়ে কৃষি আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে শুরু থেকেই দাঁত ফোটাতে পারেনি সিপিএম। এই বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে রাজস্থানের কৃষক আন্দোলনের নেতা আমরারামকে টিকিট দিয়েছিল সিপিআইএম। দেখা যায় কৃষক আন্দোলনের প্রভাব ভোটে পড়েনি।
১১১৮
কিন্তু দিন গড়াতেই দেখা যায় তিনটি আসনেই ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছেন বামপন্থীরা।
১২১৮
উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ে সিপিএম হালে পানি পায় না তেমন। এই বলয়ে সংখ্যালঘুই বলা চলে বামেদের। এর মধ্যে বাংলার বিধানসভাতেও গত বছর দু’য়েক ধরে ‘নেই’ হয়ে গিয়েছে বামেরা।
১৩১৮
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে মোট ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৭৬টিতে জিতেছিল বামেরা। ২০১১ সালে বাংলায় পালাবদল হয়। ১৭৬টি আসন থেকে ৪০-এ নেমে আসে বামেরা। পরের বছর আরও কমে হাতে পায় ২৬। ২০২১ সালে আর বাংলায় একটি আসনেও ভোট পায়নি বামেরা। প্রাপ্য ভোটের হারও নেমে আসে ৪.৭৩ শতাংশে।
১৪১৮
কেরল ছাড়া আপাতত দেশের আর কোনও রাজ্যে শাসকের ভূমিকায় নেই সিপিএম। ত্রিপুরায় রয়েছে প্রধান বিরোধীর ভূমিকায়।
১৫১৮
এ ছাড়া বাকি দেশের যে সমস্ত রাজ্যের সিপিএম এখনও বিধানসভায় কোনওমতে টিকে রয়েছে, সেগুলি হল অসম (১টি আসন), বিহার (২টি), হিমাচল প্রদেশ (১টি), মহারাষ্ট্র (১টি), ওড়িশা (১টি) এবং তামিলনাড়ু (২টি)।
১৬১৮
রাজস্থানেও ধোর বিধানসভা কেন্দ্রে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা জিতেছে সিপিএম। মাঝে রাজস্থানে সিপিএমের বিজিত আসনের সংখ্যা ৩-এ পৌঁছয় ২০০৮ সালে।
১৭১৮
আসলে রাজস্থানের কৃষিপ্রধান এলাকাগুলিতে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন কৃষি সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিসান সভার প্রভাব রয়েছে। এতটাই যে ২০১৭ সালে আমরারামের নেতৃত্বে কৃষকেরা নিজেদের প্রাপ্য বিদ্যুতের অধিকার সংক্রান্ত দাবি আদায় করে ছাড়ে।
১৮১৮
তবে বামেরা বলছে, এতে চিন্তার কিছু দেখছে না তারা। ২০১৩ সালেও রাজস্থানে শূন্য হয়ে গিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু পাঁচ বছর পর আবার দু’টি আসনে তারা জয়ী হয়। ফলে রাজস্থানে শূন্য হয়ে গেলেও আশাবাদী তারা।