তাঁর কথায়, ‘‘শেষ রক্তবিন্দু থাকতে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে দেব না।’’
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মেট্রোর কাজের জন্য ভাঙতে হবে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক এই মর্মেই মাস তিনেক আগে রাজ্যকে চিঠি দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। এ বার সেই প্রসঙ্গে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী বললেন তিনি?
০২২০
দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে বিশেষ সমস্যার কারণে পরিকাঠামোর অর্ধেক অব্যবহৃত রয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে রেল কর্তৃপক্ষ সমস্যার অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন সেখানকার ‘স্কাইওয়াক’কে।
০৩২০
কিন্তু মঙ্গলবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তিনি ওই স্কাইওয়াক ভাঙতে দেবেন না কোনও মতেই। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ রক্তবিন্দু থাকতে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে দেব না।’’
০৪২০
মাস তিনেক আগে রেলের তরফে দক্ষিণেশ্বর সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয় রেল। সেখানে তারা জানায়, প্রান্তিক স্টেশন দক্ষিণেশ্বরের পিছন দিকে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় যাত্রা শেষে ট্রেন ঘোরানোর জন্য ক্রসওভার নেই।
০৫২০
ইংরেজি ‘এক্স’ আকৃতির ওই ক্রসওভার না থাকায় দক্ষিণেশ্বরে আপ এবং ডাউন ট্রেন একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। ক্রসওভার তৈরির জন্য এই পরিসর কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে রেল জানিয়েছে, দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের পিছনে মন্দিরে যাওয়ার স্কাইওয়াক।
০৬২০
ওই সমস্যা মিটিয়ে ট্রেন চলাচল মসৃণ করতে স্টেশনের পিছনে ৯০ মিটার অংশে লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়াতে চাইছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যা পেলে আদর্শ ক্রসওভার তৈরি করা যাবে। কিন্তু মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, স্কাইওয়াক ভাঙা যাবে না।
০৭২০
মঙ্গলবার এ নিয়ে নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘এদের ঔদ্ধত্য দেখে আমি অবাক হয়ে যাই! হাত দিচ্ছে কোথায়? হাত দিচ্ছে দক্ষিণেশ্বরে! ক’দিন বাদে বলবে কালীঘাটটা দিয়ে দাও!”
০৮২০
তিনি আরও বলেন, “শুনব না। যদি আমাকে বলে নাখোদা মসজিদ ভেঙে দাও আমি থোড়াই শুনব? এগুলো আমি মানতে বাধ্য নই। মানব না। যদি ওদের কোনও রকম জট হয় সেই জট আমি দূর করব। দরকারে আমার সঙ্গে বসুন। আমি অন্য রুট দেখিয়ে দেব। রুট বদলাতে সাহায্য করব। এমন আগেও অনেক করেছি।’’
০৯২০
তাঁর আমলের রেল মন্ত্রকের কথাও মঙ্গলবার তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ দিন রেল মন্ত্রক সামলেছি। কোনও সমস্যা হলে কী ভাবে তার সমাধান করতে হয়, তা আমি জানি। বাংলায় মেট্রো জ়োন আমি তৈরি করেছিলাম।“
১০২০
“দিল্লির মেট্রোর সমস্যা আমি দূর করেছিলাম। আমি না থাকলে দিল্লি মেট্রোই হত না। জট ছিল। আমি ডেকে সমাধান করেছিলাম। এখনও করতে পারি। তবে শুধু ম্যাপ নিয়ে বসলে হবে না। সরেজমিনে সার্ভে করতে হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
১১২০
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সারা ভারতে এই ধরনেরই সমস্যা হয়েছিল ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর’ বানানোর সময়। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে ম্যাপ দেখিয়ে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পের জন্য এত জমি চাই, আমি সরেজমিনে সার্ভে করিয়েছিলাম। আর ১৫ হাজার একর মানুষের জমি বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম।’’
১২২০
“ফলে সমস্যার সমাধান করতে চাইলে আমি সহযোগিতার হাত সব সময় বাড়িয়ে রেখেছি। আগামী দিনেও সহযোগিতা করব। কিন্তু আমাদের বুকের উপর বসে আমাদের দীর্ঘ দিনের যে হেরিটেজ, তা ওরা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে, সেটা আমি হতে দেব না।’’
১৩২০
মমতা এ প্রসঙ্গে জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো রুট নিয়েও মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক হৃদয়ের মণিমুক্ত। পুলিশের হৃদয়ের মণিকোঠায় আলিপুর বডিগার্ড লাইন্স। এর কোনওটাই আমি ভাঙতে দেব না। দরকারে রুট বদলাতে সাহায্য করব।’’
১৪২০
দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক প্রসঙ্গে মমতা ধর্মের প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে এরা বলে আমি দুর্গাপুজো করতে দিই না। সরস্বতী পুজো করতে দিই না। অথচ আমার বাংলায় দুর্গাপুজো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর তকমা পেয়েছে।’’
১৫২০
মমতা জানিয়েছেন, দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে হলে ভারতীয় রেল এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলার ঐতিহ্যের কথা ভাবতে হবে।
১৬২০
মমতার কথায়, ‘‘দক্ষিণেশ্বর আজকের নয়। সেখানে হাত দিতে হলে বিবেকানন্দের কথা মনে করতে হবে রামৃষ্ণের কথা মনে করতে হবে। ভবতারিণী মায়ের কথা মনে করতে হবে। দক্ষিণেশ্বর বেলুড়ের কোটি কোটি ভক্ত আছে। তাঁদের কথা মনে করতে হবে।’’
১৭২০
এর পরেই মমতা দৃঢ় স্বরে আরও এক বার বলেন, ‘‘কিছুতেই করতে দেব না।’’ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করেছিলেন মমতা নিজে।
১৮২০
কালীপুজোর ঠিক আগেই ৫ নভেম্বের রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পার্কিংয়ের এলাকায় বাঁধা মঞ্চ থেকে মমতা উদ্বোধন করেছিলেন এই স্কাইওয়াক। সেই স্কাইওয়াক ভাঙা নিয়ে ভারতীয় রেলের প্রস্তাব প্রসঙ্গে মমতা তাঁর কালীঘাটের স্কাইওয়াক প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন।
১৯২০
মঙ্গলবার মমতা বলেছেন, ‘‘আমিও তো কালীঘাটে স্কাইওয়াক তৈরি করছি। কোথাও কি কোনও সমস্যা হয়েছে? বাধা ছিল। ওখানকার হকারেরা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে একটা অসুবিধা হচ্ছিল। আমি ওঁদের বসার ব্যবস্থা অন্যত্র করে দিয়েছি। এখন ওখানে স্কাইওয়াকের কাজ চলছে। স্কাইওয়াক হয়ে গেলে তার দু’পাশে ওঁদের বসার ব্যবস্থা করে দেব।’’
২০২০
অর্থাৎ মমতার বক্তব্য সদিচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শুধু একটু বুদ্ধি খরচ করতে হয়।’’