ঝুহাই এয়ার শোয়ে ষষ্ঠ প্রজন্মের নতুন যুদ্ধবিমানকে প্রথম বার প্রকাশ্যে এনে শোরগোল ফেলে দিয়েছে চিন। বেজিংয়ের দাবি, এটি মহাশূন্য থেকে আক্রমণ শানাতে সক্ষম।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
এ বার আর মেঘের আড়ালে নয়, মহাশূন্য থেকে ছুটে আসবে অদৃশ্য মারণাস্ত্র। তেমনই অত্যাধুনিক বিমান তৈরি করে ফেলেছে চিন। সেই তুরুপের তাস এ বার সর্বসমক্ষে হাজির করল বেজিং। নতুন যুদ্ধবিমান দেখে চোখ কপালে উঠেছে আমেরিকার, চিন্তা বেড়েছে ভারতেরও।
০২১৯
চলতি বছরের ১২ নভেম্বর থেকে গুয়াংডং প্রদেশে চলা ‘ঝুহাই এয়ার শো’য়ে শক্তি প্রদর্শন করে চিনের পিপলস্ লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। সেখানে একাধিক নবনির্মিত অত্যাধুনিক হাতিয়ার নিয়ে কসরত দেখায় লালফৌজ। তবে এর মধ্যে সকলের নজর কেড়েছে ষষ্ঠ প্রজন্মের বিশেষ একটি যুদ্ধবিমান।
০৩১৯
বেজিংয়ের ওই যুদ্ধবিমানের পোশাকি নাম ‘শ্বেত সম্রাট’ (হোয়াইট এম্পারার)। লালফৌজ অবশ্য আদর করে একে ডাকে ‘বাইদি’ বলে, যা চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘ন্যান্টিয়ানমেন’ প্রকল্পের অংশ বলে জানা গিয়েছে।
০৪১৯
বেজিংয়ের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইদি নিয়ে সোজা মহাকাশে চলে যেতে পারবে পিএলএ। এর পর সেখান থেকে শত্রুর উপর নিখুঁত নিশানায় হামলা করা যাবে। একে ‘ইন্টিগ্রেটেড স্পেস এয়ার ফাইটার’ হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে ড্রাগনল্যান্ডের।
০৫১৯
এয়ার শোয়ে প্রথম বারের জন্য জনসমক্ষে আসা শ্বেত সম্রাটের মডেল তৈরি করেছে ‘এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অফ চায়না’ (এভিআইসি)। এটি চিনের মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। যুদ্ধবিমানটি দেখতে বিশ্বের অন্য যে কোনও ফাইটার জেটের থেকে একেবারে আলাদা। ফলত, একে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে বাড়ছে উৎসাহ।
০৬১৯
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, বাইদির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল এর ককপিট। গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, সুপারসনিক অর্থাৎ শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এই যুদ্ধবিমানের। শ্বেত সম্রাটের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও যৎসামান্য বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
০৭১৯
ঝুহাই এয়ার শোয়ে প্রকাশ্যে আসা ষষ্ঠ প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের ব্যাপক হারে নির্মাণকাজ শুরু করার নির্দেশ আদৌ চিনা প্রেসি়ডেন্ট শি জিনপিং দিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। অধিকাংশ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের দাবি, যে উড়ানটিকে দেখানো হয়েছে সেটি এর ‘প্রোটোটাইপ’ (খসড়া মডেল)। ভবিষ্যতে এতে আরও অনেক প্রযুক্তি শামিল করতে পারে বেজিং।
০৮১৯
চিনের এই অতি শক্তিশালী যুদ্ধবিমান বাইদির বিভিন্ন ধরনের ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্রের খবর, এর নকশায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আক্রমণ শানানোর দক্ষতা রয়েছে। বিমানটির ককপিট তৈরি হয়েছে ‘অ্যারোগনোমিক্স’ প্রযুক্তিতে। অত্যাধুনিক ‘অ্যাভিয়োনিক্স’ ব্যবস্থাও এতে রেখেছেন বেজিংয়ের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।
০৯১৯
বাইদি যুদ্ধবিমান নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ সংবাদপত্রে। সেখানে বলা হয়েছে, শ্বেত সম্রাটে রয়েছে লেসার হাতিয়ার। বিমান থেকে অনায়াসে ছোড়া যাবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ। খালি চোখে বা রাডারে এই দুই অস্ত্রের উপস্থিতি বুঝতে পারা অসম্ভব।
১০১৯
দ্বিতীয়ত, নবনির্মিত যুদ্ধবিমানটি ‘স্টেলথ’ পর্যায়ের হওয়ায় একে মহাশূন্যে খুঁজে পেতেও বেগ পেতে হবে। বাইদির সাহায্যে শত্রুর গুপ্তচর উপগ্রহকেও নিশানা করতে পারবে চিন। ফলে ভূপৃষ্ঠের যুদ্ধ মহাশূন্যে পৌঁছে যেতে পারে।
১১১৯
যদিও সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশ বেজিংয়ের নতুন যুদ্ধবিমানটির ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান। মহাশূন্য থেকে এটি আদৌ পৃথিবীর উপর আক্রমণ শানাতে পারবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। চিনের তরফ থেকে তেমন কোনও পরীক্ষামূলক ভিডিয়োও প্রকাশ করা হয়নি।
১২১৯
বর্তমানে বেজিং ছাড়া অন্য কোনও দেশের কাছে ষষ্ঠ প্রজন্মের এই ধরনের যুদ্ধবিমান নেই। তবে এই ব্যাপারে পিছিয়ে থাকতে নারাজ আমেরিকা। ২০১১ সাল থেকে ‘বি-২১ রাইডার’ নামের একটি বোমারু বিমান নির্মাণে হাত দিয়েছে ওয়াশিংটন, যা ষষ্ঠ প্রজন্মের বলে জানা গিয়েছে।
১৩১৯
এ ছাড়া ‘এসআর-৭২ ব্ল্যাকস্টার’ নামের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন প্রায় তৈরি করে ফেলেছে আমেরিকা। নির্মাণকারী সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’ জানিয়েছে, শব্দের চেয়ে ছ’গুণ গতিতে ছুটতে পারবে তাদের তৈরি ওই মানববিহীন উডুক্কু যান। ফলে মহাকাশে পৌঁছনোর আগেই চিনের শ্বেত সম্রাটকে ধ্বংস করতে পারবে ওই ড্রোন।
১৪১৯
সূত্রের খবর, ২০২৫ সালে ‘বি-২১ রাইডার’ ও ‘এসআর-৭২ ব্ল্যাকস্টার’-এর পরীক্ষা করবে আমেরিকার বায়ুসেনা। তবে এখনও এর দিনক্ষণ প্রকাশ্যে আসেনি। দু’টি হাতিয়ার নির্মাণের ক্ষেত্রেই গোপনীয়তা বজায় রাখছে ওয়াশিংটন।
১৫১৯
বর্তমানে পিএলএ বায়ুসেনার কাছে পঞ্চম প্রজন্মের দু’টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। সেগুলি হল, ‘জে-২০’ এবং ‘জে-৩৫’। এর মধ্যে ঝুহাই এয়ারশোয়ে দ্বিতীয়টির নতুন সংস্করণ প্রকাশ্যে এনেছে বেজিং। এর সঙ্গে আমেরিকার সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানের মিল রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
১৬১৯
লালফৌজের এই এয়ারশোর আর একটি আকর্ষণ হল নতুন ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। এর পোশাকি নাম ‘এইচকিউ-১৯’ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে বেজিং। যুদ্ধের সময়ে এর সাহায্যে একাধিক স্তরের আক্রমণ ঠেকানো যাবে বলে দাবি করেছে চিন।
১৭১৯
ড্রাগনল্যান্ডের এইচকিউ ১৯-এর সঙ্গে ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের তৈরি ‘থাড’-এর (টার্মিনাল হাই অলটিচ্যুড এরিয়া ডিফেন্স) তুলনা টানা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রথম বার এইচকিউ ১৯-এর পরীক্ষা করে পিএলএ। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, আমেরিকার থাডকে নকল করে এই হাতিয়ার তৈরি করেছে বেজিং। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা।
১৮১৯
অস্ত্র প্রতিযোগিতায় আমেরিকাকে পিছনে ফেলতে ষষ্ঠ প্রজন্মের বোমারু বিমান তৈরি করছে চিন, যার নাম ‘এইচ-২০’। তবে সেটি কবে প্রকাশ্যে আসবে তা স্পষ্ট নয়। বেজিং পর পর নতুন হাতিয়ার নিয়ে আসায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
১৯১৯
সমর বিশ্লেষকদের কথায়, ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে এই ধরনের কোনও যুদ্ধবিমান না থাকলেও চিন্তার বিশেষ কারণ নেই। পৃথিবীর নিম্নকক্ষে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে নয়াদিল্লির অস্ত্রাগারেও, যা দিয়ে অনায়াসেই মহাশূন্যে শ্বেত সম্রাটকে ধ্বংস করা যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।