গোটা দুনিয়া যখন একটি যুদ্ধের সাক্ষী থাকছে সেই সময় বিশ্বের অন্য দুই বৃহৎ শক্তির কূটনৈতিক সম্পর্ক তপ্ত হয়ে ওঠায় নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে। কারণ, পেলোসির তাইওয়ান সফরের দিনেই চিনের ফুজিয়ানের ব্যস্ত রাস্তায় নামানো হয়েছে ট্যাঙ্ক। ‘ইয়িন সুরা’ নামে একটি টুইটার হ্যান্ডল থেকে চিনা ট্যাঙ্কের ওই ভিডিয়ো ক্লিপ পোস্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের দিনেই তাইওয়ান সীমান্তে সেনা সমাবেশ করতে শুরু করেছে চিন।
আমেরিকা এবং চিন সম্পর্কে এই টানাপড়েন নতুন নয়। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল। তবে জো বাইডেনের আমলে আমেরিকার প্রতিনিধি হিসাবে ন্যান্সি পেলোসির এই তাইওয়ান সফর দুই দেশের কূটনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বলেই অনেকের ধারণা। যার জল সরাসরি সঙ্ঘাতের দিকে গড়াতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এখনও পর্যন্ত চিন বিশ্বাস করে ‘লড়াই ছাড়াই জয়’ নীতিতে। তবে ভবিষ্যতে বেজিং এই নীতি থেকে সরে আসতে পারে বলেও অনেকের মত। তবে এর উল্টো মতও রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, চিন ক্ষমতাশালী হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমেরিকার মতো ‘পুলিশগিরি’ করতে রাজি নয় তারা। ঘটনাচক্রে ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধের পর চিন আর কোনও যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগরে তাইওয়ান-সহ বিভিন্ন এলাকায় চিনের ‘খবরদারি’ নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলেছে আমেরিকা।
তাইওয়ান নিয়ে আমেরিকা এবং চিনের স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাস বহু পুরনো। কিন্তু তাতে নতুন রঙের পোচ দিয়েছে গত মে মাসে টোকিয়োয় ‘কোয়াড’ বৈঠকে বাইডেনের করা মন্তব্য। সেখানে বাইডেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘আমেরিকা তাইওয়ানের পক্ষ নেবে।’’ আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ইউক্রেনে আমেরিকা সেনা পাঠায়নি। কিন্তু তাইওয়ানে কি আমেরিকা তা পাঠাবে? বাইডেন উত্তর দেন, ‘‘হ্যাঁ। প্রয়োজনে আমরা তা-ও করব। চিনের সে কথা মাথায় রাখা উচিত।” বস্তুত তাইওয়ান নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা এতটা খোলাখুলি আগে কখনও বলেনি আমেরিকা।
তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চিন এবং আমেরিকার মধ্যে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, চিনের চমকপ্রদ অস্ত্রের ভান্ডারে কী কী রয়েছে। সামরিক খাতে খরচের হিসাবে চিন আমেরিকার থেকে অনেকটা পিছিয়ে। কিন্তু কূটনীতিবিদদের একাংশের মত, ড্রাগনের দেশের অনেক খবরই চিনের পাঁচিল পেরোতে পারে না। ফলে খাতায়কলমে চিনের সামরিক খরচ কম মনে হলেও তা হয়তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৪০ সালের মধ্যে চিনা নৌবহরের আকার আরও ৪০ শতাংশ বাড়বে। চিনের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে জলসীমা। সে কারণেই নৌবহরের আয়তন বৃদ্ধিতে বিশেষ জোর দিয়েছে বেজিং। ছোট-বড় নানা আকারের নৌবহর রয়েছে চিনের হাতে। রয়েছে আকাশ এবং জলে চলতে পারে এমন উভচর বিমান। রয়েছে নানা শ্রেণির ডুবোজাহাজ এবং বিমান নামার জন্য বিশেষ ধরনের যুদ্ধজাহাজ।
মনে করা হয় ‘রেলগান’ নামক একটি অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়েছে চিন। যা আসলে দু’টি রেললাইনের উপর বসানো একটি দৈত্যাকার বন্দুক। তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে সেই বন্দুক থেকে বুলেট ছোড়া হয়, যার আকার একটি গোলার মতো। ওই বুলেট শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে দৌড়য়। চিনের হাতে ‘রেলগান’ বসানো যুদ্ধজাহাজ রয়েছে বলেই সমরবিদদের একটা বড় অংশের মত।
এ ছাড়াও চিনের আরও ভয়ঙ্কর অস্ত্র হল সাইবার হানা। ইতিমধ্যেই চিনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে বার বার সাইবার হানার অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ। গত জুলাই মাসে ওই সাইবার হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়ার অন্তত ৩০ হাজার সংস্থা। সেখান থেকে নানা তথ্য চুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকা এবং চিনের সরাসরি সঙ্ঘাতের ঘটলে তাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে চিনা হ্যাকাররা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy