রয়টার্সের রিপোর্টে দাবি, চিনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ক্রমশ কমছে চিনা মুদ্রা ইউয়ানের মূল্য। ঘরে এবং বাইরে ইউয়ানকে বাঁচাতে তাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন শি জিনপিং।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
পাকিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কা, অর্থনৈতিক সঙ্কটের গ্রাসে ধুঁকছে একাধিক দেশ। এই পরিস্থিতিতে সঙ্কটের সিঁদুরে মেঘ দেখা গিয়েছে চিনেও। অর্থনীতি সামলাতে নাকি হিমশিম খাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
০২১৯
চিনের প্রাচীরের ওপারে কী হয়, তার সিকি ভাগ হয়তো প্রকাশ্যে আসে। অনেকটাই থেকে যায় না-জানা। সম্প্রতি চিনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আভাস মিলেছে রয়টার্সের একটি রিপোর্টে।
০৩১৯
রয়টার্সের ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চিনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ক্রমশ কমছে চিনা মুদ্রা ইউয়ানের মূল্য। অভ্যন্তরীণ বাজারে এবং বহির্বিশ্বে ইউয়ানকে বাঁচাতে তাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন জিনপিং।
০৪১৯
বর্তমানে ডলারের নিরিখে চিনা মুদ্রার মূল্য ৭.২৫। অর্থাৎ, এক ডলারের মূল্য ৭.২৫ চিনা ইউয়ানের সমান। এই পরিসংখ্যান খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না বেজিং।
০৫১৯
৭.২৫-কে অর্থনৈতিক মানদণ্ডের মাপকাঠি মনে করেন চিনারা। ইউয়ানের মূল্য যদি ডলারের সাপেক্ষে এর চেয়ে নীচে নেমে যায়, তবে তাকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিস্থিতি বলে মনে করা হয়।
০৬১৯
রয়টার্সের রিপোর্ট বলছে, অর্থনীতি সামলাতে ইউয়ানের মূল্য হ্রাস আটকানোর চেষ্টা করছে বেজিং। তা করতে গিয়ে বিদেশে ডলার বিক্রি করে দিচ্ছে তারা। ডলার বিক্রি করেই চিনা মুদ্রার মানদণ্ড সঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
০৭১৯
গত নভেম্বরে চিনের অভ্যন্তরীন বাজারে ইউয়ানের মূল্য হয়েছিল ৭.৩২৮০ এবং বিদেশে তা হয়েছিল ৭.৩৭৪৬। ২০০৮ সালের বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর এমন পরিসংখ্যান আর কখনও দেখা যায়নি চিনে।
০৮১৯
রয়টার্সের রিপোর্টে দাবি, চিনের রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ডলার বিক্রি করছে। সাধারণত, এই ব্যাঙ্কগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানেই কাজ করে। তবে কখনও কখনও নিজে থেকে বা গ্রাহকদের হয়েও পদক্ষেপ করতে পারে ব্যাঙ্কগুলি।
০৯১৯
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির অধিকারী চিন। অর্থনীতির নিরিখে আমেরিকার পরেই তার স্থান। চিনের পর তালিকায় জাপান এবং জার্মানি রয়েছে।
১০১৯
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে ইতিমধ্যেই চিনা মুদ্রার মূল্য ডলারের সাপেক্ষে চার শতাংশ কমে গিয়েছে। এখনই হাল না ধরলে আগামী দিনে এত বড় অর্থনীতি সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
১১১৯
বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিনের অর্থনৈতিক দুরবস্থার নেপথ্যে দায়ী করোনা অতিমারি। এই পর্বেই দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, বাণিজ্যিক লেনদেন কমেছে। মূল্যবৃদ্ধির ছায়াও গ্রাস করেছে।
১২১৯
অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি চিনের সাধারণ মানুষকে জিনপিং সরকারের প্রতি বিরূপ করে তুলেছে। অতিমারি পরবর্তী সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে সাংহাই, ইয়ুহানের রাস্তায়।
১৩১৯
অতিমারি ঠেকাতে সরকারের বেশ কিছু নীতি জনবিরোধী হয়ে উঠেছিল বলে দাবি। তারই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বর্তমান অর্থনীতিতে।
১৪১৯
ডলার বিক্রি করার মাধ্যমে চিন তাদের সংগ্রহে ডলারের সংখ্যা হ্রাস করে নিজেদের মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চাইছে। এর মাধ্যমে ইউয়ানের মূল্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশা বেজিংয়ের।
১৫১৯
বিশ্বের বাজারে বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে ইউয়ানের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে চায় বেজিং। ইউয়ানের ব্যবহার যত বৃদ্ধি পাবে, ডলারের প্রয়োজনীয়তা ততই কমবে। প্রয়োজনীয়তা কমলে পড়বে ডলারের দামও।
১৬১৯
চিনের এই পদক্ষেপকে অর্থনীতিগত ভাবে আমেরিকাকে কোণঠাসা করার চাল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারকে পিছু হঠিয়ে ইউয়ানের প্রচলন করাও বেজিংয়ের উদ্দেশ্য হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে রয়টার্সের রিপোর্টে।
১৭১৯
আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজার্ভ গত কয়েক মাস ধরে সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করেই চলেছে। চিনের অর্থনীতিকে টলিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে সেই সুদের হারও অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
১৮১৯
শুধু চিন নয়, সম্প্রতি অনেক দেশের মধ্যেই ডলার বর্জন করে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। ভারতও বেশ কিছু দেশের সঙ্গে টাকার মাধ্যমেই লেনদেন শুরু করেছে।
১৯১৯
ডলার বর্জনের প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যেও। আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যধিক মাত্রায় ডলার-নির্ভরশীলতা হ্রাস করাই এর উদ্দেশ্য। এতে আগামী দিনে ডলার তথা আমেরিকার অর্থনীতি সমস্যায় পড়তে পারে।