২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বায়ুদূষণ রোধে চিনের প্রচেষ্টাগুলি অনিচ্ছাকৃত ভাবে উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করেছে, এমনই দাবি করলেন গবেষকেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ১৫:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেপথ্যে কি চিনের হাত? সম্প্রতি একদল গবেষকের গবেষণা প্রকাশ্যে আসার পর সেই প্রশ্নই মাথাচাড়া দিচ্ছে। শুধু প্রশান্ত মহাসাগর নয়, এর ফলে পৃথিবীর জলবায়ুরও পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
০২১৬
চিন সরকার অ্যারোসল নিঃসরণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছে। যা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা! প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট অংশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য চিনা নীতিকেই কাঠগড়ায় তুলছেন গবেষকেরা।
০৩১৬
অ্যারোসল কী? অ্যারোসল হল বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র কণা যা প্রায়শই জীবাশ্ম জ্বালানি, জৈববস্তু দহন, শিল্পপ্রক্রিয়া কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্টি হয়। বায়ুদূষণের জন্য এই অ্যারোসলকে দায়ী করেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
০৪১৬
চিনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক একটি সমীক্ষা চালান। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর চিনের অ্যারোসল নিঃসরণ কমানোর পদক্ষেপ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বায়ুদূষণ রোধ করতে বেজিংয়ের নেওয়া নীতিই বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটাতে পারে।
০৫১৬
২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বায়ুদূষণ রোধে চিনের প্রচেষ্টাগুলির ফলে ‘অনিচ্ছাকৃত ভাবে’ উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করেছে, এমনই দাবি করেছেন গবেষকেরা।
০৬১৬
গবেষকদের পর্যবেক্ষণ, বেরিং প্রণালী থেকে আলাস্কা উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় হাজার মাইল অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ বছরে ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে।
০৭১৬
এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ওই অঞ্চলের মাছের মৃত্যু, তিমির রহস্যজনক অন্তর্ধানের মতো বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।
০৮১৬
অ্যারোসল নিঃসরণ হ্রাসই তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ কি না, তা দেখতে গবেষকেরা দু’টি পন্থা অনুসরণ করেছিলেন। অ্যারোসল নিঃসরণ স্বাভাবিক রয়েছে এমন স্থানকে বেছে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে।
০৯১৬
গবেষকদের দাবি, যে সব অঞ্চলে নিঃসরণ স্বাভাবিক রয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রায় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। তবে অ্যারোসল নিঃসরণ হ্রাস করা হয়েছে এমন স্থানে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে গবেষণায়।
১০১৬
বাতাসে অ্যারোসল কণার উপস্থিতি মহাকাশ থেকে আগত বিভিন্ন রশ্মি বা সূর্যের আলোকে বাধা দেয়। রশ্মি বা সূর্যের আলো এই সব অ্যারোসল কণায় প্রতিফলিত হয়।
১১১৬
বিজ্ঞানীদের মতে, এই সব কণা বাতাসে আয়নার কাজ করে। প্রতিফলনের ফলে পৃথিবীতে বিভিন্ন মহাকাশীয় রশ্মি বা সূর্যের আলো প্রভাব ফেলতে পারে না।
১২১৬
বি়জ্ঞানীদের মতে, অ্যারোসল হ্রাসের কারণে সৃষ্ট ‘সমস্যা’ মূলত সমুদ্রের তাপমাত্রা এবং সামুদ্রিক জীবনের উপরই প্রভাব ফেলে। তবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়াতে যে খরার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার নেপথ্যেও এই কারণ থাকতে পারে।
১৩১৬
যদিও অ্যারোসল নির্গমন সীমিত না করলে তা ভবিষ্যতে বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা দাবি করে, বাতাসে অ্যারোসলের মাত্রা বৃদ্ধি বছরে বিশ্বব্যাপী ৮০ লক্ষ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটাতে পারে।
১৪১৬
সালফেট, নাইট্রেটের মতো ক্ষুদ্র অ্যারোসল কণা জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের সময় নির্গত হয় যার ফলে মানুষের মধ্যে হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদ্রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১৫১৬
তবে চিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, তাদের নতুন গবেষণায় শুধুমাত্র অ্যারোসল নির্গমন হ্রাসের কারণে কী কী ঝুঁকি হতে পারে তা বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরা হয়েছে।
১৬১৬
গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর অ্যারোসল হ্রাসের প্রভাবগুলি তুলে ধরেছেন। তাঁদের দাবি, চিনা নীতির পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলিকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।