China enters Oil Market in Sri Lanka causing setback for Indian Oil dgtl
Sri Lanka Oil Market
শ্রীলঙ্কার তেলের ব্যবসায় ভারতের ‘রাজত্বের’ দিন শেষ? ছড়ি ঘোরাতে এ বার আসরে চিন
শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির বাজারে অন্যতম পরিচিত নাম লঙ্কা আইওসি, যা ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের শাখা সংস্থা। এত দিন দ্বীপরাষ্ট্রে এই সংস্থারই আধিপত্য ছিল। এ বার বাজারে ঢুকছে চিনও।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৮:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
চিনের নামী তৈলশোধনকারী সংস্থা সিনোপেক শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির খুচরো ব্যবসা শুরু করতে চলেছে। আগামী মাস থেকে চিনা সংস্থার তেল বিক্রি শুরু হয়ে যাবে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে।
০২১৯
শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির বাজারে অন্যতম পরিচিত নাম লঙ্কা আইওসি (লঙ্কা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন)। এত দিন সেখানে এই সংস্থারই একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। এ বার তার প্রতিযোগী হিসাবে আসছে সিনোপেক।
০৩১৯
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনেরই একটি শাখা লঙ্কা আইওসি। শ্রীলঙ্কায় তেলের ব্যবসায় ভারতের এই আধিপত্যে ভাগ বসাতেই কি চিনের আগমন? ভারতের ব্যবসাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারবে চিনের সিনোপেক, তা অবশ্য এখনই স্পষ্ট নয়।
০৪১৯
তবে চিন আসছে শুনে আগেভাগেই কোমর বাঁধছে ইন্ডিয়ান অয়েল। তারা ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করে ফেলেছে। এত দিন সেখানে ইন্ডিয়ান অয়েলের ২৫০টি পেট্রল পাম্প ছিল। নতুন করে আগামী মাসের মধ্যেই আরও ৩০টি পেট্রল পাম্প খোলা হবে।
০৫১৯
২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কায় পা রাখে ইন্ডিয়ান অয়েল। সেই থেকে যাত্রা শুরু। কিছু দিনের মধ্যেই দেশের পেট্রল এবং ডিজেলের ব্যবসার ১৬ শতাংশে আধিপত্য কায়েম করেছিল তারা।
০৬১৯
এ ছাড়া, লুব্রিক্যান্ট, বিটুমিন, বাঙ্কারিংয়ের মতো সামুদ্রিক জ্বালানির বাজারেও ৩৫ শতাংশ অধিগ্রহণ করেছিল ভারতীয় শোধন সংস্থা। যাত্রা শুরুর মাত্র এক বছরের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় তারা জায়গা পাকা করে ফেলে।
০৭১৯
সম্প্রতি, তিনটি নতুন বিদেশি সংস্থাকে দেশে তেলের ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে কলম্বো। তার মধ্যে অন্যতম সিনোপেক। এ ছাড়া, আমেরিকার আরএম পার্কস এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনাইটেড পেট্রোলিয়ামও দ্বীপরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।
০৮১৯
শ্রীলঙ্কার জাতীয় তেল সংস্থা সিপেক্টো (সেলিয়ন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) পরিচালিত ১,২০০টি পেট্রোল পাম্পের মধ্যে ১৫০টির দায়িত্ব পাবে সিনোপেক। আগামী ২০ বছরের জন্য এই পেট্রল পাম্পের পরিচালনায় থাকবে চিনা সংস্থা।
০৯১৯
আমেরিকার সংস্থাও ১৫০টি পেট্রল পাম্পের দায়িত্ব পেতে চলেছে। তারা তিন থেকে চার মাস পর কাজ শুরু করবে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সংস্থার সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সরকারের চুক্তি এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি।
১০১৯
ভারত মহাসাগরের উপর শ্রীলঙ্কার বন্দর হামবানটোটা ইতিমধ্যেই ৯৯ বছরের জন্য লিজ় নিয়েছে চিন। ওই বন্দরে বাণিজ্যিক লেনদেন-সহ যাবতীয় কার্যকলাপে চিনের অনুমতি প্রয়োজন।
১১১৯
এই বন্দরেই ৪০০ কোটি ডলারের একটি তৈলশোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা করেছে কলম্বো। এই প্রকল্পের জন্য যে দু’টি সংস্থাকে প্রাথমিক ভাবে বাছাই করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সিনোপেক। অন্য সংস্থাটি হল সুইৎজ়ারল্যান্ডের ভিটোল।
১২১৯
হামবানটোটা বন্দরে চিনের আধিপত্যে এমনিতেই ভারত হতাশ। তার উপর ওই বন্দরে চিনের সংস্থা তৈলশোধনাগার খুললে ভারতের ব্যবসা অনেকটাই মার খাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩১৯
শ্রীলঙ্কার তেলের ব্যবসায় ভারতীয় সংস্থা একচেটিয়া রাজত্ব করছিল। কেন হঠাৎ অন্য দেশের সামনেও ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিল কলম্বো? ইন্ডিয়ান অয়েলের বাণিজ্যে কি তারা সন্তুষ্ট নয়?
১৪১৯
বস্তুত, গত বছর শ্রীলঙ্কা যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল, তারই প্রভাবে কলম্বো এখন বাজার সম্প্রসারণে মন দিয়েছে। আরও বেশি সংস্থার সামনে তারা শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যের দিগন্ত উন্মোচিত করে দিচ্ছে।
১৫১৯
শ্রীলঙ্কার সঙ্কটকালে সরকারের ভাঁড়ারে বৈদেশিক মুদ্রা ফুরিয়ে এসেছিল। বিদেশ থেকে তেল কেনার সামর্থ্য তাদের ছিল না। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, একমাত্র লঙ্কা আইওসি ছাড়া আর কোনও সংস্থা তেলের লেনদেন চালিয়ে যেতে পারেনি।
১৬১৯
ভারত সেই সময় শ্রীলঙ্কাকে তেল, খাবার এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর জন্য ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। কিন্তু এই সঙ্কটের পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে আর তৈরি না হয়, চিন, অস্ট্রেলিয়া কিংবা আমেরিকাকে ডেকে সেই বন্দোবস্তই করল কলম্বো।
১৭১৯
ভারতের উত্তর সীমান্ত জুড়ে চিন। উত্তর-পশ্চিমের পাকিস্তানেও তাদের অবাধ যাতায়াত। দক্ষিণের সাগরে আধিপত্য বিস্তার করতে পারলেই ভারতকে উপর এবং নীচ থেকে সাঁড়াশি চাপে ফেলার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে। সেই চেষ্টায় অনেক দিন ধরেই লেগে আছে শি জিনপিংয়ের দেশ।
১৮১৯
ভারতকে চাপে ফেলতে এবং সমু্দ্রে আধিপত্য কায়েম করতে চিনের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি এখনও পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। সেখানে ক্রমে প্রভাব বিস্তার করছে চিন। সিনোপেকের হাত ধরে তেমনই একটি ধাপ সম্পূর্ণ হবে।
১৯১৯
শ্রীলঙ্কায় সিনোপেককে পাঠিয়ে ভারতের তেলের ব্যবসায় ভাগ বসাচ্ছে বেজিং। এর মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে ছড়ি ঘোরানোর বার্তাও কি লুকিয়ে? চিন এবং শ্রীলঙ্কার এই ‘আঁতাঁত’ নিঃসন্দেহে দিল্লির চিন্তা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিল।