কৃত্রিম মেধাযুক্ত অত্যাধুনিক চিনা সামরিক ড্রোনকে নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে ওই ড্রোন ১০টি নিশানায় মাইক্রোওয়েভ ছুড়ে হামলা করতে পারবে বলে জানা গিয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
প্রথমে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। তার পর মহাশূন্য থেকে হামলা চালাতে সক্ষম ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। একের পর এক অত্যাধুনিক হাতিয়ারকে সামনে রেখে গোটা দুনিয়াকে চমকাচ্ছে চিন! এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল ‘কৃত্রিম মেধা’র ড্রোন, যা দেখে ভুরু কুঁচকেছে আমেরিকা। কয়েক গুণ চিন্তা বেড়েছে নয়াদিল্লিরও।
০২১৮
বেজিংয়ের অতি শক্তিশালী ওই মানববিহীন উড়ুক্কু যানকে নিয়ে সম্প্রতি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’। সেখানে বলা হয়েছে, এক সেকেন্ডের কম সময়ে অন্তত ১০টি নিশানায় হামলা চালাতে পারবে ওই ড্রোন।
০৩১৮
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটির মতো ‘বুদ্ধিমান এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ সমৃদ্ধ ওই চিনা ড্রোনটির নকশা তৈরি করেছে ‘চেংদু এয়ারক্রাফ্ট ডিজ়াইন ইনস্টিটিউট’। তবে ইতিমধ্যেই এই হাতিয়ারের ব্যবহার পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) শুরু করেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
০৪১৮
সূত্রের খবর, লালফৌজের নতুন ‘কিলার’ ড্রোনে ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ বা এলএলএম প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে চেংদু যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। ‘জে-২০’ স্টেলথ ফাইটার জেট তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই যাদের খ্যাতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এলএলএম প্রযুক্তিকে ওপেন এআই (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যেতে পারে।
০৫১৮
তবে এলএলএমকে শুধুমাত্র যুদ্ধে ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে তৈরি করেছেন বেজিংয়ের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। নতুন জেনারেটিভ এআই দ্বারা চালিত তাদের ড্রোন শত্রু রাডার ও রেডিয়ো যোগাযোগ ব্যবস্থাকে চোখের নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারবে। এতে প্রতিপক্ষ যে একরকম পঙ্গু হয়ে পড়বে তা বলাই বাহুল্য।
০৬১৮
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, নতুন এই ড্রোন ঠিকমতো কাজ করলে এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক যুদ্ধ করার ক্ষমতা পাবে পিএলএ। অর্থাৎ মানববিহীন উড়ুক্কু যান থেকে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিভ ওয়েভ ছুড়তে পারবে তারা, যা দিয়ে রাডার ও রেডিয়ো যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হবে।
০৭১৮
ড্রোনটির দ্বিতীয় সুবিধা হল, কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি থাকায় যুদ্ধের সময়ে এটি নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কোনও বিষয়ে বুঝতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যেখানে এক থেকে দু’সেকেন্ড সময় লাগে, তা ০.১ সেকেন্ডে করতে সক্ষম এই হাতিয়ার।
০৮১৮
এ ব্যাপারে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ লিখেছে, ‘‘এলএলএম যুক্ত ড্রোন ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সংজ্ঞাকে পাল্টে দেবে। একবার শত্রুর রাডার এবং রেডিয়ো যোগাযোগ ধ্বংস হয়ে গেলে সহজেই যুদ্ধবিমান দিয়ে তাঁদের উপর আক্রমণ শানাতে পারবে চিনা লালফৌজ।’’
০৯১৮
নতুন মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলিকে তাই ‘যুগান্তকারী সামরিক আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও এয়ারশোয়ে এই ড্রোনকে প্রকাশ্যে আনেনি লালফৌজ। বেজিং অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই সামরিক ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধা ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
১০১৮
সমর বিশেষজ্ঞদের কথায়, নতুন এই ড্রোনের সাহায্যে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ জিনপিংয়ের ফৌজের কাছে অনেকটাই সহজ হবে। কারণ, তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে এটি রাডারকে জ্যামও করতে পারবে। ফলে চুপিসারে শত্রুসেনার গতিবিধির ছবি তুলে পাঠাতে তেমন সমস্যা হবে না এই ড্রোনের।
১১১৮
পশ্চিমি দেশগুলির অবশ্য বেজিংয়ের নতুন মানববিহীন উড়ুক্কু যানটির ক্ষমতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ‘জার্নাল অফ ডিটেকশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’-এর গবেষকেরা বলেছেন, ‘‘ড্রোনে একই সঙ্গে উন্নত এআই এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করা মোটেই সহজ নয়। এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত অন্য উদ্বেগের জায়গা রয়েছে।’’
১২১৮
তা ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হোক বা পশ্চিম এশিয়ায় ইজ়রায়েলের সঙ্গে হামাস-হিজ়বুল্লা-ইরানের লড়াই— কোনও জায়গাতেই চিনা ড্রোন ব্যবহার হয়নি। অন্য দিকে ইরান, তুর্কি, আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইজ়রায়েলের মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলি সংঘর্ষের মোড় ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
১৩১৮
এ বছরের ১২ নভেম্বর থেকে গুয়াংডং প্রদেশে চলা ‘ঝুহাই এয়ার শো’য়ে প্রথম বারের জন্য ষষ্ঠ প্রজন্মের নতুন যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে এনেছে পিপলস্ লিবারেশন আর্মি। এর পোশাকি নাম ‘শ্বেত সম্রাট’ (হোয়াইট এম্পারার)। লালফৌজ অবশ্য আদর করে একে ডাকে ‘বাইদি’ বলে।
১৪১৮
চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন এই যুদ্ধবিমান মহাকাশ থেকে আক্রমণ শানাতে সক্ষম। শ্বেত সম্রাটকে অদৃশ্য লেসার হাতিয়ারে সাজানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। একে ‘ইন্টিগ্রেটেড স্পেস এয়ার ফাইটার’ হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে ড্রাগনল্যান্ডের।
১৫১৮
ঝুহাই এয়ার শোয়ে ‘এইচকিউ-১৯’ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নামের একটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকেও দুনিয়ার সামনে এনেছে লালফৌজ। এর সঙ্গে ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের তৈরি ‘থাড’-এর (টার্মিনাল হাই অলটিচ্যুড এরিয়া ডিফেন্স) তুলনা টানা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে প্রথম বার এইচকিউ ১৯-এর পরীক্ষা করে পিএলএ।
১৬১৮
এইচকিউ-১৯ ছাড়াও ঝুহাই এয়ারশোয়ে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান ‘জে-৩৫এ’ উড়িয়েছে চিনা বায়ুসেনা। যার আকৃতির সঙ্গে আমেরিকার তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ফলে এই নিয়ে বেজিংকে ‘নকলনবিশ’ খোঁচা দিতে ছাড়েনি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম।
১৭১৮
পিএলএ বায়ুসেনার কাছে আরও একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে। তা হল, ‘জে-২০’। একে আড়ালে ‘শক্তিশালী ড্রাগন’ বলে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা। জে-২০ এবং জে ৩৫এ যুদ্ধবিমান যে ওয়াশিংটনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
১৮১৮
অস্ত্র প্রতিযোগিতায় আমেরিকাকে পিছনে ফেলতে বর্তমানে ষষ্ঠ প্রজন্মের বোমারু বিমান তৈরি করছে চিন, যার নাম ‘এইচ-২০’। তবে সেটি কবে প্রকাশ্যে আসবে তা স্পষ্ট নয়। বেজিং পর পর নতুন হাতিয়ার নিয়ে আসায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।