Advertisement
১৭ মার্চ ২০২৫
Panama Canal Row

যুদ্ধ লাগার আগেই সরে পড়ার তাল, পানামার ঘোলা জলে পকেট ভরাচ্ছেন হং কংয়ের চিনা ‘মিরজাফর’!

পানামা খাল কব্জা করতে সৈন্য অভিযান চালাতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পানামা খালের দু’টি বন্দর আমেরিকার সংস্থা ‘ব্ল্যাকরক’-এর কাছে বিক্রি কথা ঘোষণা করেছেন চিনা বংশোদ্ভূত হং কংয়ের ধনকুবের লি কা-শিং।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৭
Share: Save:
০১ ২০
Panama Canal Row

পানামা খাল কব্জা করতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জন্য প্রয়োজনে সামরিক অভিযানের রাস্তায় হাঁটতেও পিছপা হবেন না তিনি। এই সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশ ইতিমধ্যেই ফৌজি সদর দফতর পেন্টাগনকে দিয়েছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। পানামা খালের উপরে ‘চিনা প্রভাব’ কমানোই এর উদ্দেশ্য বলে জানিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস। ট্রাম্পের আগ্রাসী মনোভাবে প্রমাদ গুনছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ২০
Panama Canal Row

পেন্টাগনকে দেওয়া ট্রাম্পের নির্দেশাবলীর খবর প্রকাশ্যে আসতেই মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আশঙ্কা করে ইতিমধ্যেই সেখান থেকে পাত্তারি গুটিয়েছেন হংকংয়ের ধনকুবের শিল্পপতি লি কা-শিং। পানামা খালে দু’টি বন্দর রয়েছে তাঁর। খুব দ্রুত সেগুলিকে মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা ‘ব্ল্যাকরক’-এর কাছে বিক্রির কথা ঘোষণা করেছে তাঁর কোম্পানি ‘সিকে হাচিসন হোল্ডিংস লিমিটেড’।

০৩ ২০
Panama Canal Row

লি-র এ-হেন পদক্ষেপে বেজায় চটেছে ড্রাগন। জন্মসূত্রে তিনি চিনা নাগরিক। আর তাই ধনকুবের ব্যবসায়ীটিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছে বেজিঙের শি জিনপিং সরকার। এ ব্যাপারে ‘হংকং অ্যান্ড ম্যাকাও অ্যাফেয়ার্স অফিস’কে (এইচকেএমএও) কাজে লাগিয়েছে তাঁর প্রশাসন। এর জন্য এই সংস্থার ওয়েবসাইটে ‘বোকা এবং বৃদ্ধ হয়ো না’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে।

০৪ ২০
Panama Canal Row

চলতি বছরের ১৩ মার্চ প্রকাশিত ওই প্রবন্ধে লি-কে তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার খোলা হুমকি দেয় চিনা সংস্থা এইচকেএমএও। বেজিং যে পানামা খালের বন্দর বিক্রিকে আর পাঁচটা সাধারণ বাণিজ্যিক চুক্তির মতো করে দেখছে না, রচনায় শব্দচয়নে তা স্পষ্ট। ড্রাগনের যুক্তি, এই ধরনের পদক্ষেপের জন্যই আগ্রাসী মনোভাব দেখানোর সাহস পাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

০৫ ২০
Panama Canal Row

এইচকেএমএও-র ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধটির লেখক হিসাবে ওয়াং জুনসির নাম রয়েছে। তবে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, পরিচয় গোপন রাখতে ছদ্মনামে লেখাটি প্রকাশ করেছে হংকং ও ম্যাকাওর চিনা সংস্থা। ওয়াং সেখানে লিখেছেন, ‘‘পানামা খালের ‘আমেরিকিকরণ’ করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, মনে রাখতে হবে এর আসল উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। কিন্তু এক বার এটিকে কব্জা করতে পারলে ওয়াশিংটন অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পানামা খালকে ব্যবহার করবে।’’

০৬ ২০
Panama Canal Row

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এ ব্যাপারে চিনের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ, পানামা খাল দখলের পর বেজিঙের পণ্যবাহী জাহাজের সেখানে ঢোকার উপর নিধেষাজ্ঞা চাপাতে পারেন ট্রাম্প। উপরন্তু ড্রাগনের বড় রকমের করের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহের ব্যাপারে বড় রকমের ঝুঁকি থাকছে ছোট-বড় সমস্ত চিনা সংস্থার।

০৭ ২০
Panama Canal Row

হং কংয়ের ধনকুবের লি-র হাতে শুধুমাত্র পানামা খালের দু’টি বন্দর রয়েছে, তা ভাবলে ভুল হবে। মোট ৪৩টি আন্তর্জাতিক বন্দরের মালিকানা রয়েছে তাঁর সংস্থার। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবগুলিই বিক্রি করার কথা ঘোষণা করেছেন লি। অন্য দিকে মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা ‘ব্ল্যাকরক’ ঝোপ বুঝে কোপ মারতে তৎপর। বিশ্লেষকদের অনুমান, সস্তায় বন্দরগুলি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

০৮ ২০
Panama Canal Row

ওয়াং লিখেছেন, ‘‘লি-র সমস্ত বন্দর ব্ল্যাকরক কিনে নিলে জাহাজে করে বিশ্ব জুড়ে চলা পণ্য পরিবহণের প্রায় ১১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে ওই মার্কিন সংস্থা। তখন দুনিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অপারেটর হয়ে উঠবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকরক যে ওয়াশিংটনের নীতি মনে চলবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাদের মূল উদ্দেশ্যই হল চিনা পণ্যবাহী জাহাজের ডকিঙের খরচ বৃদ্ধি এবং বেজিঙের শিপিং সংস্থাগুলির বাজারকে সঙ্কুচিত করা।’’

০৯ ২০
Panama Canal Row

বিশ্লেষকদের অবশ্য অনুমান, ড্রাগনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে মার্কিন সংস্থা ‘ব্ল্যাকরক’-এর কাছে ৪৩টি বন্দর বিক্রি করা মোটেই সহজ নয়। এতে মোট ১,৯০০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর সংস্থা ‘সিকে হাচিসন’-এর। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ন্ত্রণকারী আইন ব্যবহার করে গোটা বিষয়টিকে আটকে দিতে পারে চিন। তখন ধনকুবের লি-র পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থার থেকে টাকা পাওয়া বেশ কঠিন হবে।

১০ ২০
Panama Canal Row

সম্প্রতি এ ব্যাপারে একপ্রস্থ আলোচনা সেরেছে চিনা আইনসভা ‘ন্যাশনাল পিপল্স কংগ্রস’। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট তথা চেয়ারম্যান জিনপিঙের দল ‘চিনা কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিপিসি) মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা চলছে। ফলে আগামী দিনে এই ইস্যুতে লি-কে গ্রেফতার বা গুপ্তহত্যার ছকও কষতে পারে শি-র সরকার। এমনটাই দাবি করেছে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ।

১১ ২০
Panama Canal Row

১৯৯৭ সালে পানামা খালে প্রথম বার পা রাখে হংকংয়ের সংস্থা ‘সিকে হাচিসন’। কিছু দিনের মধ্যেই খালটির দু’প্রান্তের দু’টি বন্দরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে লি-র কোম্পানি। সেগুলি হল, বালবোয়া এবং ক্রিস্টোবাল। ২০২০ সালে হং কংয়ের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ওয়াশিংটন। এর পর থেকেই সেখানকার সংস্থাগুলিকে চিনা কোম্পানি হিসাবে বিবেচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

১২ ২০
Panama Canal Row

এ বছরের জানুয়ারিতে চিনা পণ্যবাহী জাহাজের মার্কিন বন্দরে ঢোকা বন্ধ করতে বিপুল কর বসানোর পরিকল্পনা করে আমেরিকার বাণিজ্য দফতর। বেজিঙের এক একটি জাহাজের থেকে ১৫ লক্ষ ডলার নেওয়ার কথা বলেছে তারা। এ ব্যাপারে আমজনতার মতামত জানতে চাওয়াও হয়েছে। আগামী ২৪ মার্চের পর বিষয়টিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওযা হবে বলে জানা গিয়েছে।

১৩ ২০
Panama Canal Row

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েই পানামা খালকে ফের আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত করার কথা খোলাখুলি ভাবে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এর তীব্র বিরোধিতা করে পানামা সরকার। ফলে পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। অন্য দিকে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো এর মধ্যেই চিনের বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধে নেমে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আর ঠিক তখনই তাদের হাতে থাকা সমস্ত বন্দর মার্কিন সংস্থার কাছে বিক্রির কথা জানিয়ে দেয় লি-র কোম্পানি।

১৪ ২০
Panama Canal Row

চিনা গবেষক ঝাউ মি-র দাবি, ঘোলা জলে মাছ ধরে পকেট ভরাতে চাইছে ‘সিকে হাচিসন’। ২৩টি দেশে ছড়িয়ে থাকা মোট ৪৩টি বন্দরের ৮০ শতাংশ শেয়ার মার্কিন সংস্থা ‘ব্ল্যাকরক’কে বিক্রির করছে লি-র এই কোম্পানি। এর জন্য ২,২৮০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছেন তিনি।

১৫ ২০
Panama Canal Row

গত ১০ ফেব্রুয়ারি চিনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। মার্চের ১০ তারিখ বেজিঙের সামগ্রীর উপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করে আমেরিকা। এর ঠিক দু’দিনের মাথায় ১২ মার্চ ড্রাগনভূমি থেকে আমদানি করা ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫ শতাংশ শুল্কের কথা ঘোষণা করে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া ২ এপ্রিল থেকে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

১৬ ২০
Panama Canal Row

ট্রাম্প ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করার কথা ঘোষণা করতেই ফুঁসে ওঠে চিন। ওয়াশিংটনকে রীতিমতো যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বসে বেজিং। পাল্টা জবাব দেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবও। মাত্র দু’তিন মাসের মধ্যে যে ভাবে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে, তাতে পানামাকে কেন্দ্র করে লড়াই বাধার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না বিশেষজ্ঞ মহল।

১৭ ২০
Panama Canal Row

আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে জাহাজ চলাচলের সময় কমানোর উদ্দেশ্যে ১৯০৪ সালের ৪ মে পানামা খাল খননের কাজ শুরু হয়। এতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯১৪ সালের ১৫ অগস্ট জাহাজ চলাচলের জন্য খালটিকে খুলে দেন কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিকে এর নিয়ন্ত্রণ ছিল ওয়াশিংটনের হাতেই।

১৮ ২০
Panama Canal Row

১৯৭৭ সালে পানামা সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাটিক নেতা জিমি কার্টার। সেখানে পানামা খালকে পানামা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেই মতো পরবর্তী দশকগুলিতে চলে তার প্রক্রিয়া। ১৯৯৯ সালে পুরোপুরি ভাবে খালটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় পানামা সরকারের হাতে।

১৯ ২০
Panama Canal Row

কিন্তু, ৪৮ বছর আগে পানামা সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া ওই চুক্তি মানতে নারাজ ট্রাম্প। তাঁর সাফ কথা এতে আমেরিকার ঘাড়ের কাছে এসে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে ড্রাগন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিষয়টি নিয়ে পানামা প্রশাসনের উপর চাপ বৃদ্ধি করে তাঁর সরকার। তার পরই চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে মধ্য আমেরিকার এই দেশ।

২০ ২০
Panama Canal Row

যদিও মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ট্রাম্প আগ্রাসী হতেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে বেজিঙের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে পানামা সরকার। সেখানকার বিদেশমন্ত্রী হাভিয়ের মার্টিনেজ় আচা বলেছেন, ‘‘শুধুমাত্র পানামার জনগণের হাতে এই খালের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তাদের হাতেই এই খালের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy