Cheetahs at Kuno National Park: Villagers fear land acquisition, human-animal conflict dgtl
Cheetah
যদি ঘাড়ে এসে পড়ে থাবা, কী হবে তা জানি, বাবা! চিতা ঢোকায় এখন ভয়ে কাঁটা কুনোর গ্রামবাসীরা
মোদী সরকারের চিতা প্রকল্প ‘রিইন্ট্রোডাকশন’ বা পুনঃপ্রবর্তনে হেলদোল নেই কুনো ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের। বরং তাঁদের ভবিষ্যৎ ঘিরে ওই বাসিন্দাদের মনের কোণায় দানা বেঁধেছে শঙ্কার কালো মেঘ।
সংবাদ সংস্থা
ভোপালশেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
দেশের মাটিতে সাত দশক পর আবারও পায়ের ছাপ চিতার। শনিবার ভারতে আট চিতার আগমনে দেশজুড়ে উচ্ছ্বাসের ছবি ধরা পড়েছে। কিন্তু চিতাদের আগমনে তাঁদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। চিতার পায়ের ছাপে তাঁদের জীবনে কি আদৌ কোনও পরিবর্তন হবে? না কি আবারও ভিটেমাটি ছাড়া হতে হবে! আপাতত এই আশঙ্কাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে মধ্যপ্রদেশের শেওপুর জেলার গ্রামবাসীদের মনে।
০২২৫
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে ১৭ সেপ্টেম্বর নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা বিশেষ বিমানে করে দেশে আনার পর মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর ন্যাশনাল পার্কে তাদের ছাড়া হয়েছে। তার পর থেকেই শঙ্কায় ভুগছেন গ্রামবাসীরা।
০৩২৫
প্রায় সাত দশক পর দেশে ফিরল চিতা। যদিও এই প্রথম ভারতে আফ্রিকান চিতা আনা হল। অতীতে যে চিতার বাস ছিল দেশে, তা ছিল এশীয়।
০৪২৫
কিন্তু মোদী সরকারের চিতা প্রকল্প ‘রিইন্ট্রোডাকশন’ বা পুনর্প্রবর্তনে হেলদোল নেই কুনো ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের। বরং তাঁদের ভবিষ্যৎ ঘিরে ওই বাসিন্দাদের মনের কোণে দানা বেঁধেছে শঙ্কার কালো মেঘ।
০৫২৫
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে শেওপুর-শিবপুরী রাস্তায় চা বিক্রেতা রাধেশ্যাম যাদব আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন— আবারও গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হতে পারে তাঁর পরিবারকে।
০৬২৫
তাঁর কথায়, ‘‘পার্কের জন্য চার-পাঁচটা গ্রাম যদি উচ্ছেদ করা হয়, তা হলে আমার ছোট এই খাবারের দোকানটার কী হবে? গত ১৫ বছর ধরে কুনো পার্কের জন্য ২৫টি গ্রাম উচ্ছেদ হয়েছে। এর ফলে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’’ ফলে চিতার আগমনে আবার উচ্ছেদ করা হবে কি না, এই আশঙ্কায় দিন গুজরান করছেন তিনি।
০৭২৫
কুনো পার্কের কাছে একটি জলাধার চিন্তা বাড়িয়েছে রামকুমার গুর্জর নামে এক কৃষকের। তিনি বলেছেন, ‘‘ন্যাশনাল পার্কের জন্য অতীতে গ্রামবাসীদের সরানো হয়েছিল। এখন কাটিলা এলাকায় কুনো নদীতে জলাধার করা হচ্ছে। এর ফলে কমপক্ষে ৫০টি গ্রামে ক্ষতি হবে।’’
০৮২৫
অনেকে আবার চিতার হামলার ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন। যদি পার্ক থেকে কোনও ভাবে বেরিয়ে পড়ে চিতা! ধর্মেন্দ্রকুমার ওঝা নামে ওই বাসিন্দার আশঙ্কা, গ্রামে ঢুকে পড়তে পারে চিতা— যদি ঘাড়ে এসে পড়ে থাবা কী হবে তা জানি, বাবা!
০৯২৫
একটি পোশাকের দোকান চালান ধর্মেন্দ্র। তাঁর সাফ কথা, ‘‘এই প্রকল্প (চিতা পুনর্প্রবর্তন প্রকল্প) থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা কী পাবেন? বাইরের লোকেরা এখানে হোটেল ও রেস্তরাঁর জন্য জমি কিনছেন। গ্রামগুলিকে সরালে আবারও ধাক্কা খাবে ব্যবসা।’’
১০২৫
তবে উল্টো ছবিও রয়েছে। কোনও কোনও বাসিন্দার আশা, চিতা আসার ফলে এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। চা বিক্রেতা সুরত সিংহ যাদব যেমন বলেছেন, ‘‘জমির দাম বাড়ছে। যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁরা চড়া দর হাঁকাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের ফলে সাময়িক ত্বরান্বিত হয়েছে ব্যবসা। তবে আগামী দিনে কী হবে, বলতে পারব না।’’
১১২৫
চিতা আসার ফলে কুনো ন্যাশনাল পার্কে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারে। ফলে পর্যটন ব্যবসা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হোটেল-রেস্তরাঁয় কাজ পেতে পারেন স্থানীয়রা। এমনই আশা করছেন রামকুমার গুর্জর নামের এক বাসিন্দা।
১২২৫
কর্মসংস্থান, পর্যটন ব্যবসায় লাভের আশা অনেকে করলেও চিতার ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে বেশির ভাগ গ্রামবাসীকে।
১৩২৫
কুনো ন্যাশনাল পার্ক থেকে দু’কিমি দূরে টিকতোলি গ্রামের বাসিন্দা কৈলাসের গলাতেও আতঙ্কের সুর শোনা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘জানি না, এতে কী লাভ হবে। কিন্তু আমরা ভীত, কারণ চিতাদের আনা হয়েছে। কোথায় যাব আমরা?’’
১৪২৫
শেওপুরের বাসিন্দা কমল জানিয়েছেন, গ্রামে জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। টেলিফোন নেটওয়ার্কও নেই। কর্মসংস্থানও তথৈবচ অবস্থায় রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য এক মাত্র ভরসা কৃষিকাজ। কিন্তু চিতার আগমনে সেই ভরসার জায়গায় আঁচড় লাগবে কি না, এই অনিশ্চয়তায় অস্থির তাঁদের মন।
১৫২৫
যদিও প্রশাসনের দাবি, চিতা ফেরার ফলে ওই এলাকায় পর্যটনক্ষেত্রের চেহারা পাল্টে যাবে। যার সুফল পাবেন স্থানীয়রা। কিন্তু সেই সুফল পেতে যে আরও বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে, তা বুঝেছেন বাসিন্দারা।
১৬২৫
শিবপুরী ও শেওপুরের মধ্যবর্তী গ্রাম কাকরার বাসিন্দারাও চিতার ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বসিত নন। চিতার আগমনে তাঁদের ভবিষ্যৎ আরও আঁধারে ডুব দেবে কি না, এখন এই সংশয়ই তৈরি হয়েছে।
১৭২৫
দারিদ্রের সঙ্গে রোজ লড়তে লড়তে দিন গুজরান করছেন কুনো ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া একাধিক গ্রাম। কয়েকটি গ্রামে অপুষ্টিতে ভোগার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এই দুর্দিনে চিতা সুদিন ফেরাবে না বলেই ধারণা বেশির ভাগ গ্রামবাসীর।
১৮২৫
শেওপুরের বাগচা গ্রামের বাসিন্দা গুট্টু যেমন বলেছেন, চিতা আসুক বা সিংহ, আমরা জন্মভিটে ছাড়ব না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জেদ গুট্টুর মতো গ্রামের অন্য বাসিন্দারা বজায় রাখতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে।
১৯২৫
চিতার আগমনে আবারও উচ্ছেদের ভয় তাড়া করেছে বাগচা গ্রামের বাসিন্দাদের। অধিবাসীরা ভিটে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, ক্ষতিপূরণের জন্যও লড়ছেন। গুট্টুর ছেলে-সহ অন্তত ৭০টি নাম ক্ষতিপূরণের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ।
২০২৫
প্রসঙ্গত, অতীতে কুনো ন্যাশনাল পার্কের জন্য অতীতেও ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে এলাকার গ্রামবাসীদের। ১৯৮১ সালে কুনো-পালপুর অভয়ারণ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
২১২৫
সেখানে গুজরাতের গির থেকে সিংহ আনার কথা ছিল। এ জন্য ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ২৪টি গ্রাম উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সিংহদের দেখা পাওয়া যায়নি।
২২২৫
২০১৮ সালে কুনো-পালপুর ন্যাশনাল পার্কের তকমা পায়। সেই জাতীয় উদ্যানেই এ বার চিতা নিয়ে আসা হল। নামিবিয়া থেকে আগত ওই আট চিতার দিকে নজর গোটা দেশের।
২৩২৫
প্রসঙ্গত, সাত দশক আগে ভারতে আস্তানা ছিল এশীয় চিতাদের। কিন্তু, শিকার ও নিরাপদ বাসস্থানের অভাবে ভারত থেকে ক্রমশ কমতে থাকে চিতা। যা এক সময় দেশ থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২৪২৫
১৯৪৭ সালে অধুনা ছত্তীসগঢ়ের অন্তর্গত সুরগুজার কোরিয়া অঞ্চলের রাজা রামানুজ প্রতাপ সিংহ দেও তিনটি চিতা শিকার করেছিলেন। শিকার ও শিকারির সেই ছবিই এ দেশে চিতার শেষ অস্তিত্বের প্রমাণ। ১৯৫২ সালে চিতাকে সরকারি ভাবে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। সেই হিসাবে ৭৫ বছর পরে আবারও ভারতের মাটিতে চিতা পা রাখল।
২৫২৫
কিন্তু আফ্রিকান চিতা ভারতীয় পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারবে কি না, এ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। পাশাপাশি চিতার ফেরায় যে ভাবে এক রাশ দুশ্চিন্তা গ্রাস করল কুনো পার্ক লাগোয়া গ্রামবাসীদের, তা এই পর্বে উদ্বেগ বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে।