CCTV footage shows How Bengaluru Cafe Blast accused repeatedly changes hotels in Kolkata dgtl
Bengaluru Cafe Blast
পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, কে বলবে! কাঁথিতে ধৃত দুই জঙ্গির সিসি ক্যামেরার ছবি কলকাতার নানা হোটেলে
বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণকাণ্ডের ঠিক ১৩ দিন পরে অর্থাৎ, ১৩ মার্চ ধর্মতলার কাছে লেনিন সরণির একটি হোটেল ঢোকেন মুসাফির এবং আবদুল। রেজিস্টার খাতা অনুযায়ী সময় তখন বিকাল ৫টা বেজে ৪০ মিনিট।
সারমিন বেগম
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
বেঙ্গালুরু ক্যাফে বিস্ফোরণকাণ্ডে দুই সন্দেহভাজন মুসাফির হুসেন শাজ়িব এবং আবদুল মাঠিন আহমেদকে এ রাজ্য থেকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। শুক্রবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তদের।
০২১৩
গত ১ মার্চ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বোমা বিস্ফোরণ হয়। আহত হন ১০ জন। এনআইএ সূত্রে খবর, সেই বিস্ফোরণকাণ্ডের পর পরই দুই অভিযুক্ত মুসাফির এবং আবদুল চেন্নাই পালিয়ে যান। বেশ কয়েক দিন চেন্নাইয়ে লুকিয়ে থেকে কলকাতায় পৌঁছন ১০ মার্চের পর। এর পর কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হোটেলে তাঁরা গা-ঢাকা দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
০৩১৩
ইতিমধ্যেই কলকাতার বেশ কয়েকটি হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। এর মধ্যে কলকাতার তিনটি হোটেলের সিসি ক্যামেরায় ঢুকতে-বেরোতে দেখা গিয়েছে অভিযুক্তদের। সেই সব ভিডিয়ো আনন্দবাজার অনলাইনের হাতেও এসেছে। কলকাতার যে তিন হোটেলে মুসাফির এবং আবদুল ছিলেন, তার প্রত্যেকটিই জনবহুল এলাকায়। পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। মনে করা হচ্ছে ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকতেই ওই হোটেলগুলি বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা।
০৪১৩
বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণকাণ্ডের ঠিক ১৩ দিন পরে অর্থাৎ, ১৩ মার্চ ধর্মতলার কাছে লেনিন সরণির একটি হোটেলে ঢোকেন মুসাফির এবং আবদুল। রেজিস্টার খাতা অনুযায়ী সময় তখন বিকাল ৫টা বেজে ৪০ মিনিট। অভিযুক্তদের পরনে ছিল সাধারণ টিশার্ট এবং জিন্স। মাথায় টুপি, পিঠে ব্যাগ।
০৫১৩
লেনিন সরণির এই হোটেলটির সাজসজ্জা খুব আহামরি নয়। ভাড়া কম। অভিযুক্তেরা যে ঘরে ছিলেন সেটির ভাড়া ৭৫০ টাকা। এই হোটেলে সিসি ক্যামেরা নেই। তবে ওয়েবক্যামে অভিযুক্তদের ছবি তুলে রেখেছিলেন হোটেলের ম্যানেজার। সেই ছবি দেখেই তাঁদের চিহ্নিত করা গিয়েছে।
০৬১৩
ওই হোটেলের ম্যানেজারের দাবি, রিসেপশনে নিজেদের পর্যটক হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন মুসাফির এবং আবদুল। নাম বলেছিলেন, ইয়ুশা শাহনওয়াজ পটেল এবং অনমোল কুলকার্নি। একই নামের দু’টি ভুয়ো আধার কার্ডও জমা দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, বাড়ি কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রে হলেও দার্জিলিঙে ঘুরতে এসেছিলেন তাঁরা। এক দিন কলকাতায় কাটিয়ে চেন্নাই চলে যাবেন। এর পরের দিন দুপুর ১২টা নাগাদ টাকা মিটিয়ে তাঁরা হোটেল ছেড়ে দেন বলে ম্যানেজারের দাবি।
০৭১৩
এর পর ২১ মার্চ খিদিরপুরের একটি গেস্ট হাউসে ঢুকতে দেখা যায় মুসাফির এবং আবদুলকে। যদিও ১৪ থেকে ২০ তারিখ অবধি তাঁরা কোথায় ছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লেনিন সরণির হোটেল থেকে খিদিরপুরের গেস্ট হাউসটি অনেক পরিচ্ছন্ন। সিসি ক্যামেরা অনুযায়ী, বেলা ১টার কিছু পরে একটি অটো করে এসে গেস্ট হাউসের সামনে দাঁড়ান তাঁরা। অটোচালকই তাঁদের ভিতরে নিয়ে যান। ওই দিনও তাঁদের পরনে ছিল সাধারণ পোশাক।
০৮১৩
খিদিরপুরের গেস্ট হাউসের নীচে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে। মূলত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা গেস্ট হাউসটি ব্যবহার করেন। উপরতলার ছ’টি ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। তবে ওই গেস্ট হাউসের রেজিস্টার খাতায় অভিযুক্তদের নাম নেয়।
০৯১৩
ম্যানেজারের দাবি, ফোটোকপি করার মেশিন খারাপ থাকার কারণে তাঁদের পরিচয়পত্র জমা নেওয়া হয়নি। ফলে রেজিস্টারেও নাম তোলা হয়নি। অভিযুক্তেরাও পরে পরিচয়পত্র জমা দেবেন বলে দেননি। তবে অন্য একটি খাতায় তিনি অভিযুক্তদের নাম লিখে রেখেছিলেন বলে ম্যানেজারের দাবি। তিনি জানিয়েছেন, ২২ মার্চ সকালে ওই গেস্ট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যান মুসাফিররা। পরে দেখা যায়, অন্য খাতার যে পাতায় দুই যুবকের নাম-ঠিকানা লেখা ছিল, সেটি কেউ ছিঁড়ে দিয়েছে। তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, ওখানেও নিজেদের ভুয়ো নাম-ঠিকানাই দিয়েছিলেন মুসাফির এবং আবদুল।
১০১৩
এর পর আবার তিন দিন কোনও অজানা জায়গায় গা-ঢাকা দেওয়ার পর ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ইকবালপুরের একটি ঝাঁ-চকচকে গেস্ট হাউসে ঘরভাড়া নিয়েছিলেন মুসাফির এবং আবদুল। থানা থেকে ওই গেস্ট হাউস ঢিলছোড়া দূরত্বে।
১১১৩
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ইকবালপুরের গেস্ট হাউসে ঢুকে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে যান মুসাফিররা। নিজেদের পর্যটক বলে পরিচয় দিয়ে ঘরভাড়া চান। রেজিস্টারের খাতায় ভুয়ো নাম এবং ঠিকানা লিখে হাজার টাকা প্রতি দিন হিসাবে ‘নন-এসি’ কামরা ভাড়া করেন। দু’টি ফোন নম্বরও লেখেন রেজিস্টারের খাতায়। সেই নম্বর দু’টি ৭৭ এবং ৭৪ দিয়ে শুরু। যদিও পরে নম্বরগুলিতে ফোন করে দেখা যায় যে, সেগুলি ‘সুইচড অফ’। ওই গেস্ট হাউসের ম্যানেজার জানিয়েছেন, আপাতত এনআইএ আধিকারিকেরাও একটি ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন সেখানে।
১২১৩
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ইকবালপুরের হোটেলে ঢোকার সময়েও মুসাফিররা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। হাবেভাবে সন্দেহ হওয়ার জো নেই। মুসাফির যখন খাতায় নাম-ঠিকানা লিখছিলেন, তখন এ দিক-ও দিক তাকিয়ে দেখছিলেন আবদুল। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিন দিন হোটেলে থাকলেও এক দিনও হোটেলে খাবার খাননি তাঁরা। বাইরে থেকে খেয়ে আসতেন। এর পর ২৮ মার্চ তাঁরা ওই গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে যান।
১৩১৩
এর পরেই অভিযুক্তেরা দিঘা চলে যান বলে মনে করছে এনআইএ। দিঘাতেও সারা বছর ভিড় থিক থিক করে। দিঘায় মুসাফিররা একটি হোটেলেই ছিলেন না সেখানেও বার বার হোটেল পাল্টেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁরা কী ভাবে দিঘা পৌঁছলেন, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।