CBI to probe irregulerities in Aam Aadmi Party's mohalla clinic scheme, what is the Actual Allegation dgtl
AAP’s Mohalla Clinic
‘অশরীরী’ রোগী, ভুয়ো স্বাস্থ্যপরীক্ষা! দিল্লির আপ সরকারের ‘মহল্লা ক্লিনিক’ কি দুর্নীতির কারখানা?
দিল্লির এই প্রকল্প বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলের মুখেও শোনা গিয়েছিল আপের এই উদ্যোগের সুনাম।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
নাম ‘মহল্লা ক্লিনিক’। নামেই স্পষ্ট পরিচয়। ‘মহল্লা’ মানে পাড়া। সেই পাড়ার মধ্যে, বা়ড়ির নাগালে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা। তা-ও আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
০২২৪
দিল্লিতে সরকার গঠন করার পর এই মহল্লা ক্লিনিকই ছিল আম আদমি পার্টির প্রথম ওভার বাউন্ডারি। উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল।
০৩২৪
তার পর থেকে এখনও সেই স্বাস্থ্য পরিষেবা চলছে। সোম থেকে শনি সকাল ৮টায় পরিষেবা শুরু হয়। চলে দুপুর ২টো পর্যন্ত। মহল্লা ক্লিনিকে মহিলাদের জন্যও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। তবে সম্প্রতি বার বার প্রশ্ন উঠছে এই মহল্লা ক্লিনিকের পরিষেবার স্বচ্ছতা নিয়ে।
০৪২৪
অভিযোগ, বাড়ির দোরগোড়ায় চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার আড়ালে নাকি চলছে হাজার হাজার কোটির টাকার খেলা! ভূতুড়ে রোগী থেকে ভুয়ো স্বাস্থ্যপরীক্ষা— অনেক কিছুই সেই খেলার অঙ্গ।
০৫২৪
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে যখন দিল্লির আবগারী নীতিতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কিছুটা চাপে আপ সরকার, ঠিক তখনই তাদের সবচেয়ে গর্বের জায়গা স্বাস্থ্য পরিষেবাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এই অভিযোগ।
০৬২৪
অথচ দিল্লির এই মহল্লা ক্লিনিক প্রকল্প বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখেও শোনা গিয়েছিল আপের এই উদ্যোগের সুনাম। আপ সরকারও দিল্লির উন্নয়নের বিস্তারিত খতিয়ান যখন দিয়ে থাকে, তার মধ্যে সবার আগে রাখে এই স্বাস্থ্য পরিষেবাকেই। যার অন্যতম অঙ্গ মহল্লা ক্লিনিক।
০৭২৪
সম্প্রতি সেই মহল্লা ক্লিনিক নিয়ে দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে বড় দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা। যিনি ঘনিষ্ঠ মহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছের লোক বলে পরিচিত।
০৮২৪
সাক্সেনার অভিযোগ, মহল্লা ক্লিনিকের আড়ালে স্বাস্থ্যখাতে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল নয়ছয় করছে কেজরী সরকার। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছেন তিনি।
০৯২৪
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যখাতে দিল্লির সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে যে অর্থ পায় সেই জোগানকেই কাজে লাগানো হয়েছিল জনকল্যাণমূলক এই প্রকল্পে। সাক্সেনার অভিযোগ, সেই অর্থ মহল্লা ক্লিনিকের নামে ঘুরপথে পৌঁছে যাচ্ছে কিছু বেসরকারি সংস্থার লাভের খাতায়। আর তা জেনেশুনেই হতে দিচ্ছে দিল্লি সরকার।
১০২৪
কী ভাবে হচ্ছে এই দুর্নীতি? লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অফিস থেকে মহল্লা ক্লিনিকের তিন মাসের নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের সেই নথিতে দেখা গিয়েছে, অজস্র ভুয়ো রোগীর নামে একের পর এক স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়েছে। আর সেই সমস্ত পরীক্ষা বাবদ অর্থ গিয়েছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে।
১১২৪
দেখা গিয়েছে এই রোগীদের নামে যে মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত করা হয়েছে, তার সবক’টিই ভুয়ো। আবার একই নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে একাধিক রোগীর ক্ষেত্রে।
১২২৪
একটি অনুসন্ধান রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ৩০৯২ জন রোগীর মোবাইল নম্বর হিসাবে একটিই নম্বর নথিভুক্ত করা হয়েছে—৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯।
১৩২৪
আবার ৯৯৯ জন রোগীর মোবাইল নম্বর অন্তত ১৫ বার ব্যবহার করা হয়েছে।
১৪২৪
১১ হাজার ৬৫৭ জন রোগীর মোবাইল নম্বরের জায়গায় লেখা রয়েছে স্রেফ শূন্য। আবার ৮ হাজার ২৫১ জন রোগীর নামে কোনও মোবাইল নম্বরই লেখা হয়নি।
১৫২৪
রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ৪০০ জন্য রোগীর মোবাইল নম্বরের জায়গায় কোনও একটি সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৬২৪
অথচ এই রোগীদের নামেই হাজার হাজার টাকার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর নথি জমা দেওয়া হয়েছে।
১৭২৪
লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দফতর থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মূলত দিল্লির সরকারি হাসপাতাল এবং মহল্লা ক্লিনিকে যে সমস্ত রোগী চিকিৎসা করাতে এসেছেন, তাঁদের নামেই করানো হয়েছে এই স্বাস্থ্যপরীক্ষা।
১৮২৪
রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই স্বাস্থ্যপরীক্ষাগুলি আসলে ভুয়ো। অর্থাৎ বিল তৈরি হলেও আদপে এগুলো করানোই হয়নি। রোগীদের নাম ব্যবহার করে ওই স্বাস্থ্যপরীক্ষার রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে আর্থিক নয়ছয়ের জন্য।
১৯২৪
আর যে সমস্ত বেসরকারি সংস্থায় ওই পরীক্ষাগুলি করানো হয়েছে, তাদের নাম ‘রেফার’ করা হয়েছে মহল্লা ক্লিনিক থেকেই।
২০২৪
এই রিপোর্ট দিয়ে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলেছেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে হাজার হাজার কোটি টাকার তছরুপ করা হয়েছে মহল্লা ক্লিনিকের আড়ালে। ‘অশরীরী’ রোগী তৈরি করে সরকারি তহবিল লুট করা হয়েছে।’’
২১২৪
সাক্সেনার দাবি, ‘‘বেসরকারি কিছু সংস্থাকে অবৈধ ভাবে লাভের টাকা পাইয়ে দিতেই এই বিশাল দুর্নীতির ফাঁদ তৈরি করা হয়েছিল। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’
২২২৪
প্রসঙ্গত, এর আগেও মহল্লা ক্লিনিকের চিকিৎসকদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, ক্লিনিকে সরকারি চিকিৎসকেরা উপস্থিতি এড়িয়ে যাচ্ছেন নানা ফিকিরে। বদলে রোগীদের ওষুধ দিচ্ছেন, প্রেসক্রিপশন লিখছেন অচিকিৎসক কর্মীরা।
২৩২৪
সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বেশ কয়েকটি মহল্লা ক্লিনিক থেকে ২৬ জন কর্মীকে সরিয়ে দিয়েছিল দিল্লির আপ সরকার।
২৪২৪
অর্থ তছরুপের অভিযোগ নিয়ে কী বলছে আপ সরকার? সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য না করা হলেও দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বলেন, ‘‘এই অভিযোগ যদি সত্যিও হয়, তা হলে এর জন্য তো দায়ী দিল্লির স্বাস্থ্য সচিব। তাঁকে নিয়োগ করেছেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তা হলে শাস্তি হিসাবে তো তাঁকেই আগে সরানো উচিত।’’