British conjoined twins’ violet and daisy Hilton became Hollywood star dgtl
Conjoined Twins Hilton Sisters
আয় করতেন কোটি কোটি টাকা, দেউলিয়াও হয়ে যান! মৃত বোনের দেহ নিয়েই বেঁচে ছিলেন যমজ তারকা
যে ধাত্রীর হাতে তাঁদের জন্ম হয়েছিল, সেই মেরি হিলটন তাঁদের দত্তক নেন। তিনি বোঝেন, এই দুই বোনকে দিয়ে ভবিষ্যতে প্রচুর রোজগার করা যাবে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
প্রেমিক মরিস ল্যামবার্টের হাত ধরে নিউ ইয়র্কে বিয়ে নথিভুক্ত করার দফতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভায়োলেট হিলটন। দু’জনে বিয়ে করার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অনুমতি খারিজ করেছিল দফতর। জানিয়েছিল, বহুগামিতায় তারা সায় দিতে পারবে না।
০২২১
কেন এই কথা বলেছিল নিউ ইয়র্কের বিয়ে রেজিস্ট্রির দফতর? দফতরে ভায়োলেটের সঙ্গে ছিলেন তাঁর যমজ বোন ডেইজ়ি। একসঙ্গে শুধু জন্মগ্রহণই করেননি তাঁরা, তাঁদের শরীরও এক। তাই বিয়ে রেজিস্ট্রির দফতরে উঠেছিল বহুগামিতার প্রসঙ্গ।
০৩২১
পরের দিন অনেক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল সেই খবর। সেখানে এক আইনজীবীর উদ্ধৃতি ছিল, ‘‘তিন জনের মধুচন্দ্রিমা মোটেই ঠিক নয়।’’ ১৯৩৪ সালে শিরোনামে এসেছিল হিল্টন-বোনদের খবর। ভডভিলে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন তারকা। প্রতি সপ্তাহে রোজগার ছিল পাঁচ থেকে ৬৫ হাজার ডলার। বর্তমান ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার লক্ষ টাকা থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা।
০৪২১
১৯০৮ সালে ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে জন্মেছিলেন ভায়োলেট এবং ডেইজ়ি। তাঁদের মা কেট স্কিনার ছিলেন অবিবাহিতা। তাঁর ধারণা হয়েছিল, বিয়ের আগে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন বলেই ঈশ্বর ‘পাপ’ দিয়েছেন।
০৫২১
চিকিৎসক জানান, দুই বোনের শরীরেই পৃথক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ জুড়ে রয়েছে।
০৬২১
যে ধাত্রীর হাতে তাঁদের জন্ম হয়েছিল, সেই মেরি হিলটন তাঁদের দত্তক নেন। তিনি বোঝেন, এই দুই বোনকে দিয়ে ভবিষ্যতে প্রচুর রোজগার করা যাবে। তিনি কোটিপতি হয়ে যাবেন।
০৭২১
ধাত্রী মেরি তাঁদের ছবি তুলে সকলকে দেখাতে শুরু করেন। তাঁর একটি পানশালা ছিল। সেখানেই বসিয়ে রাখতেন যমজ বোনকে। ক্রেতারা এসে জামা তুলে তাঁদের শরীরের জোড়া অংশ দেখতেন।
০৮২১
দুই বোনের যখন দু’বছর বয়স, তখন থেকে তাঁদের সার্কাস, মেলায় নিয়ে গিয়ে প্রদর্শনী করাতেন মেরি। কেঁদে উঠলে মারতেন বেল্ট দিয়ে। পাঁচ বছর বয়সে তাঁদের দিয়ে মঞ্চে অনুষ্ঠান করাতে শুরু করেন মেরি।
০৯২১
ভায়োলেট ভায়োলিন বাজাতেন। অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করতেন ডেইজ়ি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ঘুরে অনুষ্ঠান করতেন তাঁরা। ১৯১৬ সালে আমেরিকা সফর শুরু হয় তাঁদের। মেরির হাত থেকে ক্ষমতা যায় তাঁর জামাই মায়েরের হাতে। মেরির থেকেও অত্যাচারী ছিলেন তিনি।
১০২১
দুই বোনকে ঘরের বাইরে বেরোতে দিতেন না মায়ের। তিনি বলতেন, বাইরে লোকে দুই বোনকে দেখে নিলে আর টিকিট কেটে দেখতে আসবেন না। হিল্টন বোনেদের বয়স যখন ১১ বছর, তখন মারা যান মেরি। দুই বোন কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন মেরির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে।
১১২১
পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন ভায়োলেট এবং ডেইজি। লাভ হয়নি। ধরে ফেলেন মায়ের। ফরমান দেন, রাতেও এক ঘরে তাঁর সঙ্গে শুতে হবে দুই কিশোরীকে। এ ভাবে অত্যাচার বাড়তেই থাকে।
১২২১
এক দিন দুই বোনকে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন এক অনুরাগী। মায়ের সেই তোড়া ছিঁড়ে ফেলে দেন। ক্ষোভে, অভিমানে কেঁদে ফেলেন দুই বোন। দু’জনে ঝাঁপিয়ে পড়েন মায়েরের উপর। তাঁর জামা টেনে ছিঁড়ে দেন। মারতে থাকেন। ভয় পেয়ে যান মায়ের। তিনি স্থির করেন, দুই বোনকে কিছুটা স্বাধীনতা দেবেন।
১৩২১
এর পর দুই বোনই প্রেমে পড়েন এক বিবাহিত পুরুষের। নাম বিল অলিভার। সেই প্রেমিকের জন্য প্রায়ই লড়াই হত ভায়োলেট আর জেইজ়ির। কথাও বন্ধ থাকত দিনের পর দিন। অলিভারের স্ত্রী বেজায় রেগে মামলা করেন দুই বোনের বিরুদ্ধে।
১৪২১
কিন্তু দুই বোনের ঝামেলা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তাঁদের বন্ধু জাদুকর হ্যারি হুডিনির তত্ত্ব মেনেই পরস্পরের থেকে মানসিক ভাবে পৃথক হতে থাকেন দুই বোন। ভায়োলেট একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, যখন তাঁর বোন কোনও পুরুষের সঙ্গে সময় কাটাতেন, তখন তিনি উল্টো দিকে ঘুরে গল্পের বই পড়তেন বা আপেল খেতেন।
১৫২১
ক্রমেই পুরুষেরা দুই বোনের থেকে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। কারণ, একই সঙ্গে দুই বোনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে কেউই আগ্রহী হতেন না। মরিস ল্যামবার্ট সব ‘অসুবিধা’ অস্বীকার করেই ভায়োলেটকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন রাজি হয়নি।
১৬২১
১৯৩১ সালে দুই বোন মামলা করে মায়েরের থেকে মুক্তি পান। সঙ্গে পান বিপুল অঙ্কের টাকা। এর পর তাঁরা ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। মানুষের নজর টানতে সমকামী অভিনেতা জিম মুরকে প্রকাশ্যে ‘মিথ্যে’ বিয়ে করেন ভায়োলেট। পরে জানান, বিয়ে ছিল ‘মিথ্যে’।
১৭২১
তাতে বেজায় চটে যান অনুগামীরা। এর পর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। মন্দা দেখা দেয় ব্যবসায়। অনুষ্ঠান বন্ধ হয়। ১৯৪১ সালে ডেইজ়িও বিয়ে করেন এক জনকে। পরে জানতে পারেন, তাঁর স্বামী সমকামী। ১০ দিন টিকেছিল বিয়ে।
১৮২১
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেউলিয়া হয়ে যান দুই বোন। তার পর বিভিন্ন পানশালায় ‘স্ট্রিপটিজ়’ করতেন। তাতেও চলেনি সংসার। ১৯৬১ সালে সব হারিয়ে নর্থ ক্যারোলাইনায় চলে যান দুই বোন। স্থানীয়দের মায়া হয় তাঁদের দেখে। গির্জার মালিকানাধীন একটি বাড়িতে তাঁদের থাকতে দেওয়া হয়। স্থানীয় বিপণিতে কাজ করতেন তাঁরা।
১৯২১
১৯৬৭ সালের বড়দিনে দুই বোনের জ্বর হয়। তার পর থেকে তাঁদের আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ১৯৬৮ সালের ৪ জানুয়ারি তাঁদের বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকেছিল পুলিশ। দেখে, দুই বোনের দেহ পড়ে রয়েছে।
২০২১
ডেইজ়ির দেহে পচন ধরেছিল। পুলিশের অনুমান, ডেইজ়ি আগেই মারা গিয়েছিলেন। তখনও বেঁচেছিলেন ভায়োলেট। মৃত যমজের দেহ নিয়ে তার পর অন্তত দু’দিন সেরেছিলেন প্রয়োজনীয় কাজ। বা হয়তো পড়ে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষা করেছিলেন। পরে তাঁরও মৃত্যু হয়।
২১২১
মৃত্যুর আগে দুই বোন জানিয়ে গিয়েছিলেন, কবরেও যেন তাঁদের আলাদা করা না হয়। শেষ ইচ্ছা রেখেছিলেন নর্থ ক্যারোলাইনাবাসী। বিরাট কফিনে সমাধিস্থ করা হয়েছিল দুই বোনকে।