Bollywood lost actor Himanshu Malik's shocking story in the hindi film industry dgtl
Himanshu Malik
সেটে চা দিয়ে বেড়াতেন, প্রচারে থাকতে পরকীয়ায় জড়াতে বলা হয়েছিল ‘তুম বিন’-এর নায়ককে
দিল্লিতে পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বইয়ে চলে যান হিমাংশু। সেখানে মডেলিংজগতে নাম করতে শুরু করেন তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৪:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
নব্বইয়ের দশকের মডেল থেকে বড় পর্দায় অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা। ‘তুম বিন’ ছবি মুক্তি পাওয়ার পর হিমাংশু মালিক বলিপাড়ার ‘চকোলেট বয়’ হিসাবে প্রশংসা কুড়োতে শুরু করেন। দর্শকের প্রশংসার পাশাপাশি মহিলা অনুরাগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল হিমাংশুর। কিন্তু সাফল্যের স্বাদ বেশি দিন সইতে পারেননি অভিনেতা। অভিনয়জগৎ থেকে হঠাৎ ‘উধাও’ হয়ে যান।
০২২৪
১৯৭৩ সালের ২১ মে হরিয়ানায় জন্ম হিমাংশুর। তাঁর পরিবারের কেউই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন হিমাংশুর বাবা। ১৯৮৮ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। তার পর থেকে মায়ের কাছেই বড় হয়ে ওঠা হিমাংশুর।
০৩২৪
অভিনয়ের প্রতি ছোটবেলা থেকে কোনও আগ্রহ ছিল না হিমাংশুর। পড়াশোনা নিয়েই নিজের কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। দিল্লিতে একটি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে ভর্তি হন হিমাংশু। হিমাংশুর শরীরী গঠন মডেলিংয়ের জন্য উপযুক্ত বুঝে তাঁর বন্ধুরা মডেলিং পেশায় নামার জন্য জোর করতে থাকেন।
০৪২৪
বন্ধুদের কথায় কলেজে পড়াকালীন মডেলিং শুরু করেন হিমাংশু। পড়া শেষ করে চাকরি করার ইচ্ছাও ছিল তাঁর। কিন্তু মডেলিংজগতে নামার পর বিভিন্ন নামী সংস্থা থেকে কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে হিমাংশুর কাছে। মডেলিং ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পরিচিতি গড়ে ওঠে তাঁর। তাই এই পেশা নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন হিমাংশু।
০৫২৪
দিল্লিতে পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বইয়ে চলে যান হিমাংশু। সেখানে মডেলিংজগতে আরও নাম করতে শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতেও দেখা যায় তাঁকে। ১৯৯৬ সালে নুসরত ফতেহ আলি খানের ‘আফরিন আফরিন’ গানের ভিডিয়োতে হিমাংশুর অভিনয় নজর কাড়ে বলিপাড়ার একাংশের।
০৬২৪
১৯৯৬ সালে মীরা নায়ার পরিচালিত ‘কামসূত্র: আ টেল অফ লভ’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবির নায়ক হিসাবে হিমাংশুকে প্রথম পছন্দ করেছিলেন মীরা। মীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে মুম্বই থেকে দিল্লি ডেকে পাঠান হিমাংশুকে। কিন্তু হিমাংশুকে সামনাসামনি দেখার পর তাঁকে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মীরা।
০৭২৪
দিল্লি যাওয়ার আগে মীরাকে নিজের ছবি পাঠিয়েছিলেন হিমাংশু। সেই ছবি দেখে হিমাংশুকে পরিণত বয়সের মনে করেছিলেন মীরা। মীরার ছবির চরিত্রের সঙ্গে হিমাংশুর বয়স এবং শরীরী গঠনও মানিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হিমাংশুর সঙ্গে দেখা করার পর মীরা জানালেন যে, ছবি দেখে যা আন্দাজ করেছিলেন সে তুলনায় হিমাংশুর বয়স অনেকটাই কম।
০৮২৪
মীরা তাঁর ছবিতে যে চরিত্রে অভিনয়ের জন্য হিমাংশুকে পছন্দ করেছিলেন, শুধুমাত্র বয়সের তফাত থাকার জন্য সে চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হারান হিমাংশু। কিন্তু মীরার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হারাতে চাইছিলেন না হিমাংশু।
০৯২৪
হিমাংশুর কাছ থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলে মীরার কাছে আবার যান অভিনেতা। মীরা যেন তাঁর ছবিতে যে কোনও কাজের সঙ্গে হিমাংশুকে যুক্ত রাখেন, সে অনুরোধও জানান। হিমাংশুর অনুরোধ ফেরাতে পারেননি মীরা।
১০২৪
‘কামসূত্র: আ টেল অফ লভ’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান হিমাংশু। এমনকি প্রযোজনার কাজে মীরাকে সাহায্যও করতেন তিনি। কিন্তু হিমাংশুর কাজ এতটাই কম থাকত যে ছবির সেটে সকলকে চা দিয়ে বেড়াতেন তিনি।
১১২৪
নব্বইয়ের দশকেই বলিপাড়ার সঙ্গীত নির্মাতা গুলশন কুমার এবং ভূষণ কুমারের নজরে পড়েন হিমাংশু। বলিপাড়ার গায়ক সোনু নিগমের মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয়ের জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন তাঁরা।
১২২৪
মিউজ়িক ভিডিয়োতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে যান হিমাংশু। প্রথম বার অডিশন খারাপ হওয়ায় পরে আবার অডিশন দেবেন বলে গুলশনকে অনুরোধ করেন হিমাংশু। দ্বিতীয় অডিশন দিয়ে সকলের মন জিতে নেন হিমাংশু। সোনু নিগমের মিউজ়িক ভি়ডিয়োতে অভিনয় করেও প্রশংসা পান অভিনেতা।
১৩২৪
২০০০ সালে রামগোপাল বর্মা পরিচালিত ‘জঙ্গল’ ছবিতে ফারদিন খান এবং উর্মিলা মাতন্ডকরের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় হিমাংশুকে। কিন্তু সে চরিত্রটি দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি।
১৪২৪
২০০১ সালে অন্য দিকে মোড় নেয় হিমাংশুর কেরিয়ার। ওই বছর ‘তুম বিন’ ছবিটি হিট হওয়ার পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে পড়েন হিমাংশু। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বাঙালি অভিনেতা প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়ও।
১৫২৪
শুরুর দিকে প্রিয়াংশু যে চরিত্রে অভিনয় করছিলেন, সে চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল হিমাংশুকে। পাশাপাশি হিমাংশুকে যে চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়, সে চরিত্রের জন্য পছন্দ করা হয়েছিল প্রিয়াংশুকে। এই অবস্থায় শুটিংও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু শুটিং কিছু দূর এগিয়ে যাওয়ার পর দুই অভিনেতার চরিত্র বদল হয় এবং আবার নতুন করে সেই দৃশ্যগুলির শুটিং করা হয়।
১৬২৪
‘তুম বিন’ ছবিতে অভিনয়ের পর হিমাংশুর কাছে একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। কিন্তু হিমাংশু কখনও সেই ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতেন, কখনও আবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দাবি করতেন। এর ফলে একাধিক হিট ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হারিয়েছেন অভিনেতা।
১৭২৪
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে হিমাংশু বলেন, ‘‘ফিল্মপাড়ায় আমি বহিরাগত ছিলাম। কী ভাবে যোগাযোগ বাড়াতে হয় সে ধারণা ছিল না। ভুল পথে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। কিছুই বুঝতাম না। যা হয়ে গিয়েছে তা ভুলে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই ভাল বলে আমি মনে করি।’’
১৮২৪
হিমাংশু সাক্ষাৎকারে জানান যে, প্রচারে আসার জন্য নাকি তাঁকে পরকীয়া সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। অভিনেতা বলেন, ‘‘আমাকে এক পত্রিকার তরফে বলা হয়েছিল যে আমি যেন কোনও উঠতি নায়িকার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। এমনকি গোয়ার একটি হোটেলে দু’জনের জন্য রুম বুক করতেও রাজি ছিল তারা। প্রচারে থাকতে গেলে নাকি এ সব করতে হয় বলে জানিয়েছিলেন তারা।’’
১৯২৪
‘তুম বিন’ ছবিতে অভিনয়ের পর ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খোয়াইশ’ ছবিতে মল্লিকা শেরওয়াতের সঙ্গে অভিনয় করেন হিমাংশু। এই ছবিতে মল্লিকার সঙ্গে ১৭টি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ছবি মুক্তির পর সেই দৃশ্যগুলি নিয়ে আলোচনা হয়। মল্লিকাকে নিয়েও বলিপা়ড়ায় শোরগোল শুরু হয়। সব কিছুর আড়ালে ঢাকা পড়ে যান হিমাংশু।
২০২৪
‘এলওসি কার্গিল’, ‘রক্ত’, ‘রেন’, ‘রোগ’, ‘কোই আপ সা’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেলেও হিমাংশুর কেরিয়ারের রেখচিত্র ক্রমশ নিম্নমুখী হতে থাকে। ধীরে ধীরে হিমাংশুর কাজ পাওয়াও বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।
২১২৪
অভিনয়জগৎ থেকে হঠাৎ ‘উধাও’ হয়ে যান হিমাংশু। ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ নিয়ে আগ্রহ থাকায় হিমাচল প্রদেশের মানালিতে প্যারাগ্লাইডিং শেখানোর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন হিমাংশু। কিন্তু ব্যবসায় লাভ না হওয়ায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেন তিনি।
২২২৪
২০১৪ সালে নিজস্ব একটি প্রযোজনা সংস্থা খোলেন হিমাংশু। শর্ট ফিল্মে প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনার কাজও করেছেন তিনি। ২০২২ সালে ‘চিত্রকূট’ নামে একটি ছবি পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেন হিমাংশু। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও সেই ছবিটি রয়েছে। কিন্তু তাতেও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি হিমাংশুর।
২৩২৪
হিমাংশু এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও দিন কারও জন্মদিনের পার্টিরও আয়োজন করিনি। প্রযোজনায় নামছি শুনে পরিবারের সকলে খুব হেসেছিল। মজা করে বলেছিল সেটে যেন অ্যাম্বুল্যান্স থাকে। জলের বোতলের যেন অভাব না হয়। আমার কাজ দেখে লোকজনের শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে হাসিঠাট্টা করেছিল আমার পরিবার। কিন্তু আমাকে সকলে খুব সহায়তা করেছেন।’’
২৪২৪
হিমাংশু জানান, ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি সেখানে পারিশ্রমিকের পরিমাণও নজরকাড়া ছিল। কিন্তু চিত্রনাট্যের মান পছন্দ না হওয়ায় কোনও দিনও ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে মুম্বইয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ‘তুম বিন’-এর নায়ক।