Black Victoria Memorial: Victoria Memorial once painted black to protect it from Japanese air force dgtl
Black Victoria Memorial
কালো রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল শ্বেতশুভ্র ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল! নেপথ্যে রয়েছে বড় ইতিহাস
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাদা মার্বেলে তৈরি গম্বুজওয়ালা ভবন এবং এর মাথায় থাকা ‘পরি’র জৌলুস কমলেও তা এখনও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে শহর কলকাতার বুকে। কিন্তু এক সময় এই ভিক্টোরিয়াকেই কালো রঙে ঢেকে দিয়েছিল তৎকালীন ইংরেজ সরকার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ময়দান চত্বর থেকে হাঁটা পথে খানিকটা এগিয়ে গেলেই ইংরেজ আমলের শ্বেতশুভ্র হর্ম্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ১৯২১ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশে তৈরি হয়েছিল এই প্রাসাদোপম ভবন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে বছরভর কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্কদের ভিড় লেগেই থাকে। সকাল থেকেই ভিক্টোরিয়া চত্বরে ভিড় জমান অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাও।
০২১৯
ভিক্টোরিয়ায় গেলেই নজরে পড়ে মুঠোফোন বার করে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত থাকা মানুষদের। অনেকে আবার সাদা ওই ইমারতকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত থাকেন।
০৩১৯
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাদা মার্বেলে তৈরি গম্বুজওয়ালা ভবন এবং এর মাথায় থাকা ‘পরি’র জৌলুস কমলেও তা এখনও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে শহর কলকাতার বুকে। কিন্তু এক সময় এই ভিক্টোরিয়াকেই কালো রঙে ঢেকে দিয়েছিল তৎকালীন ইংরেজ সরকার।
০৪১৯
চল্লিশের দশক। ব্রিটেনের গদিতে তখন ষষ্ঠ জর্জ। কলকাতাও ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের হাতে পরাধীন ভারতের রাজধানীর তকমা হারিয়েছে। কিন্তু তবুও গুরুত্ব কমেনি শহরের। বেশির ভাগ সরকারি কার্যালয় তখনও কলকাতায় রয়েছে।
০৫১৯
দেশ জুড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিবাদও সেই সময় জোরালো হতে শুরু করেছে। দেশে স্বাধীনতা আসব আসব করছে। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা ব্রিটিশ রাজের। তার মধ্যেই ১৯৩৯ থেকে বেজে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা।
০৬১৯
ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও কলকাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ তথা মিত্রপক্ষের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল।
০৭১৯
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন, আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চিনের মহাজোটের বিপক্ষে ছিল জার্মানি, জাপান এবং ইতালি। জাপানের বায়ুসেনা তখন অনেক দেশেরই ত্রাসে পরিণত হয়েছে।
০৮১৯
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে জাপানের বায়ুসেনা আমেরিকা এবং ব্রিটেনকে বিপদে ফেলতে কলকাতায় বোমাবর্ষণ শুরু করে। শীঘ্রই, যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয় কলকাতার আকাশ।
০৯১৯
সেই সময়ে মূলত হামলা চালানোর জন্য রাতকেই বেছে নিত জাপানের বিমানবাহিনী ।
১০১৯
জাপানি বায়ুসেনার আগ্রাসনে কলকাতা শহর ক্ষতবিক্ষত। জাপানের হামলা থেকে বাঁচতে এক অভিনব পন্থা বার করেছিলেন শহরের মানুষ।
১১১৯
কলকাতার রাস্তা, দোকান, বাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপত্যগুলি যাতে রাতের অন্ধকারে কোনও ভাবে জাপামি বোমারু বিমানের নজরে না পড়ে, তাই সেগুলি মোটা কালো কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে শুরু করেন।
১২১৯
কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে বাঁচানো। সাদা মাকরানা মার্বেলে তৈরি ১৮৪ ফুটের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল রাতের অন্ধকারে ঝকঝক করত। তার শোভা আরও বাড়ত পূর্ণিমার রাতে।
১৩১৯
তাই সেই ভবনকে রাতের অন্ধকারেও জাপানের বায়ুসেনার হাত থেকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। মাথায় হাত পড়ল ব্রিটিশরাজের। সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি এই ইমারতকে বাঁচাবেন কী করে!
১৪১৯
এর পরই অনেক ভেবে ভেবে ১৯৪৩ সালে ভিক্টোরিয়া নিয়ে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংরেজরা। ভিক্টোরিয়ার চারদিকে প্রথমে একটি বাঁশের কাঠামো বানানো হয়। তার পর মাটি এবং গোবরের কালো মিশ্রণ তৈরি করে তা লেপে দেওয়া হয় ভিক্টোরিয়ার গায়ে।
১৫১৯
উদ্দেশ্য ছিল ভিক্টোরিয়ার সাদা রূপ ঢেকে তাকে কালো ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে ফেলা। এর ফলে রাতের অন্ধকারে ভিক্টোরিয়ার ঝলমলে রূপ নষ্ট হয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে ভিক্টোরিয়া নজর এড়িয়ে যায় জাপানের বোমারু বিমানের।
১৬১৯
যে হেতু ব্রিটিশ সরকার জাপানিদের কাছে এই ছদ্মবেশের পরিকল্পনা ফাঁস করতে চায়নি, তাই তারা ভিক্টোরিয়ার আশপাশে যে কোনও ধরনের ফোটোগ্রাফি কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে জাপানি আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা পায় ভিক্টোরিয়ার ভবন এবং এর মাথায় থাকা পরি।
১৭১৯
পরে আবার জাপানি হামলার আতঙ্ক কাটলে ভিক্টোরিয়ার কালো প্রলেপ তুলে ফেলা হয়। ঘষেমেজে আবার স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনা হয় সাদা ইমারতের গৌরবকে।
১৮১৯
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ইন্দো-সারাসেনিক পুনরুত্থানপন্থী শৈলীতে নির্মিত। এই স্থাপত্যে ইউরোপীয় এবং মুঘল শৈলীর মিশ্রণ লক্ষ করা যায়।
১৯১৯
গঠনগত দিক থেকে তাজমহলের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কারণে, ভিক্টোরিয়াকে কখনও কখনও ‘রাজের তাজ’ও বলা হয়।