Australia’s most decorated soldier loses defamation cases against three media houses who accused him of several war crimes dgtl
Ben Roberts-Smith
সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক যখন ধর্ষক এবং খুনি! কী ভাবে সব খোয়ালেন তিনি
‘দ্য এজ’, ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’, এবং ‘ক্যানবেরা টাইমস’-এ ২০১৮ সালে প্রকাশিত নিবন্ধগুলিতে অস্ট্রেলিয়ার ‘অভিজাত’ সেনা আধিকারিক বেনকে এক জন ধর্ষক এবং খুনি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
সিডনিশেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ১৩:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
আফগানিস্তানে গিয়ে হত্যালীলা চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছিল তিন সংবাদমাধ্যম। পাল্টা সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই মামলা হেরে মানসম্মান খোয়ালেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক বেন রবার্টস-স্মিথ।
০২২৩
বেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আফগানিস্তানে গিয়ে নিরস্ত্র বন্দিদের নির্বিচারে খুন করেছিলেন তিনি। এক প্রকার ‘হত্যালীলা’ চালিয়েছিলেন। এর পরই সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে আদালতের দ্বারস্থ হন বেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই মামলা তিনি হেরে গিয়েছেন।
০৩২৩
সিডনির ফেডারেল আদালতের বিচারকের রায়, সংবাদমাধ্যমে যা দাবি করা হয়েছিল, তা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য।
০৪২৩
আদালতে অনেক দিন ধরে বেন এবং সংবাদমাধ্যমগুলির মধ্যে এই মামলা চলছিল। সেই দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমগুলির পক্ষেই রায় দিল আদালত।
০৫২৩
‘দ্য এজ’, ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’, এবং ‘ক্যানবেরা টাইমস’-এ ২০১৮ সালে প্রকাশিত নিবন্ধগুলিতে অস্ট্রেলিয়ার ‘অভিজাত’ সেনা আধিকারিক বেনকে এক জন ধর্ষক এবং খুনি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। এ-ও দাবি করা হয়েছিল, খ্যাতি রক্ষার স্বার্থে দিনের পর দিন মিথ্যা বলে গিয়েছেন বেন।
০৬২৩
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল কোর্টের বিচারক অ্যান্টনি বেসাঙ্কো বেনের মানহানির মামলাকে নস্যাৎ করার পাশাপাশি এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন বেনকে কোনও রকম ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না সংবাদমাধ্যমগুলিকে। আর বিচারকের সেই রায়ে রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনী।
০৭২৩
বিচারক বেসাঙ্কোর পর্যবেক্ষণ, ‘দ্য এজ’, ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ এবং ‘দ্য ক্যানবেরা টাইমস’ বেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছিল, তার মধ্যে অনেকগুলি অভিযোগ সত্য।
০৮২৩
তবে সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকা বেশ কয়েকটি অভিযোগ সঠিক নয় বলেও বিচারক বেসাঙ্কোর পর্যবেক্ষণ।
০৯২৩
বিচারক বেসাঙ্কো জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১০২৩
সংবাদমাধ্যমগুলিতে দাবি করা হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ বাহিনীর প্রাক্তন আধিকারিক বেন আফগানিস্তানের এক জন সাধারণ নাগরিককে বিনা কারণে পাহাড় থেকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিলেন।
১১২৩
শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার পর বেনের নির্দেশে ওই ব্যক্তিকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। বিচারক বেসাঙ্কো জানিয়েছেন, সব সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখা গিয়েছে সংবাদপত্রের এই দাবি সত্য।
১২২৩
বেসাঙ্কো আরও জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমগুলির এই দাবিও সত্য যে, বেন আফগানিস্তানে এক জন নিরপরাধ বিকলাঙ্গ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
১৩২৩
ওই বিকলাঙ্গ ব্যক্তিকে খুনের পর বেন তাঁর কৃত্রিম পা অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যান এবং সেনা সদস্যদের মদ্যপান করার পাত্র হিসাবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। বিচারক বেসাঙ্কো জানিয়েছেন, এই অভিযোগও সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
১৪২৩
বেসাঙ্কোর রায়ের পর অস্ট্রেলিয়া জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। বেনের বীরত্বের জন্য তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ পদক, ‘ভিক্টোরিয়া ক্রস’-এ ভূষিত করা হয়েছিল। সাহসিকতা এবং সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আরও অনেক সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছিল বেনকে।
১৫২৩
কিন্তু আফগানিস্তানে থাকাকালীন বেন এবং তাঁর বাহিনী যুদ্ধাপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ উঠে আসার পর তাঁর পাহাড়প্রমাণ খ্যাতি কমতে শুরু করে।
১৬২৩
বৃহস্পতিবার আদালতের রায়ের পর, ‘দ্য এজ’ এবং ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’-এর মূল সংস্থা নাইন-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জেমস চেসেল মন্তব্য করেন, আদালতের এই রায় সেই সাংবাদিকতার জয়, যে সাংবাদিকতা মানুষের কথা বলে।
১৭২৩
উল্লেখযোগ্য যে, আদালতে রায় ঘোষণার সময় বেন অনুপস্থিত ছিলেন। রায়ের আগের দিন, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
১৮২৩
বেন নিজে অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর আইনজীবীরা সিডনির ফেডারেল কোর্টে রায় শোনার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এই মামলার রায় অস্ট্রেলিয়ার সরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে।
১৯২৩
নিক ম্যাকেঞ্জি এবং ক্রিস মাস্টার্স— এই দুই প্রবীণ সাংবাদিকই বেনের বিরুদ্ধে প্রথম চুপি চুপি তদন্ত শুরু করেন। আফগানিস্তানের অনেক পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন তাঁরা।
২০২৩
আদালতে বেনের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে এগিয়ে আসা মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘‘আজকের দিনটি বেনের হাতে খুন হওয়া নিরপরাধ আফগানদের বিচারের দিন।’’
২১২৩
অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আদালতের রায়ে যে শুধু বেনের ‘কীর্তি’ ফাঁস হয়েছে তা নয়, আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকা অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনী কী ভাবে নিরপরাধ মানুষদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল, তা-ও প্রকাশ্যে এসেছে।
২২২৩
বেনের বিরুদ্ধে যাঁরা সাক্ষী দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীরই সদস্য। কেউ কেউ তাঁদের পরিচয় গোপন করেও সাক্ষী দিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।
২৩২৩
বেন এই মামলা হেরে গেলেও সেনাবাহিনীতে থাকার সময় তাঁর অর্জিত পদকগুলির কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মনে করা হচ্ছে, বেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কারণে তাঁর সব পদক কেড়ে নেওয়া হতে পারে।