Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Ashraf Marwan

মোসাদের গুপ্তচর ছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্টের জামাই! রহস্যজনক মৃত্যুতে শেষ হয় এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস

এই এজেন্টকে মোসাদ নাম দিয়েছিল ‘দি এঞ্জেল’। আর কেউ নন, তিনি ছিলেন মিশরের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দুল নাসেরের জামাই। তাঁর নাম অসরাফ মারবান।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ১২:৫৪
Share: Save:
০১ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইজ়রায়েল গঠনের পর থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়নি। যার ফলস্বরূপ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সাত বার যুদ্ধ হয়েছে ইজ়রায়েলের। সবতেই অবশ্য জয় পেয়েছে তাঁরা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র যাতে কোনও ভাবেই দেশকে বিপদে না ফেলতে পারে, তাই সেই দেশগুলিতে রয়েছেন ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রতিনিধিরা।

০২ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

১৯৭৩ সালে এমন একটি সময় এসেছিল, যখন মিশর আর সিরিয়ার যৌথ সেনাবাহিনীর আক্রমণ করার খবর এক দিন আগে পর্যন্ত জানতে পারেনি ইজ়রায়েল। আক্রমণের ঠিক আগে একটি ফোন পেয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর ছুটি বাতিল করে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়র। সেই ফোনে পাওয়া খবরের ওপর ভিত্তি করেই মিশর-সিরিয়ার যৌথ হামলা আটকে দিতে পেরেছিল ইজ়রায়েল। যদিও, সেই ঘটনার জেরেই শেষ জীবনে প্রকাশ্যে এসেছিল মোসাদের গুপ্তচরের নাম।

০৩ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

এই এজেন্টকে মোসাদ নাম দিয়েছিল ‘দি এঞ্জেল’। আর কেউ নন, তিনি ছিলেন মিশরের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দুল নাসেরের জামাই। তাঁর নাম অসরাফ মারবান। বছরের পর বছর মিশর থেকে গোপন তথ্য মোসাদকে দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসেনি। তাঁর তথ্যের উপর ভিত্তি করেই মিশর তথা পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির একের পর এক কৌশল ভেস্তে দিয়েছিল মোসাদ।

০৪ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

১৯৭০ সাল। লন্ডন শহরের এক টেলিফোন বুথ থেকে এক মিশরীয় যুবক ফোন করেন ইজ়রায়েলের দূতাবাসে। ফোনটি ধরেন দূতাবাসের এক কর্মী। ফোন ধরামাত্রই ওই যুবক নিজের পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীর কোনও বড় আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে চান। ভিন্‌দেশি এক যুবক সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় সংবাদটি জানানো হয় মোসাদের দফতরে।

০৫ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

ইজ়রায়েলি দূতাবাসের কাছে মোসাদের তরফে ওই যুবকের নাম জানতে চাওয়া হয়। দূতাবাস থেকে জানানো হয়, যিনি ফোন করেছেন তাঁর নাম বলা হয়েছে, অশরাফ মারবান। নামটির সঙ্গে পরিচিত ছিল মোসাদ। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত হয়, এই সংবাদ পৌঁছনো হবে মোসাদের প্রধানের কাছে।

০৬ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

সেই সময় মোসাদের প্রধান ছিলেন জাবি জামির। দ্রুতই তাঁকে জানানো হয়, অশরাফ মারবান ফোন করে কথা বলতে চাইছেন সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে। নামটি শুনে প্রথমে তাঁর বিশ্বাস হয়নি। কারণ এই মারবানকেই দীর্ঘ সময় ধরে খুঁজছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই মারবানের সঙ্গে ফোনে কথা শুরু করেন মোসাদ প্রধান। লন্ডনেই সাক্ষাতের সময় ঠিক হয় দু’জনের।

০৭ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

শ্বশুর জামাল আব্দুল নাসেরের মৃত্যুর পর মারবান মিশরের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় কাজ করছিলেন। তাই মিশরের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারের বহু তথ্যই ছিল তাঁর নখদর্পণে। লন্ডনে প্রধান সাক্ষাতেই জাবি জামিরকে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন মারবান। সেই সব তথ্য কেবল ইজ়রায়েলের সুরক্ষার জন্যই নয়, পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতির জন্যও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। প্রথম বৈঠকেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের জামাইকে নিজেদের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করে মোসাদ।

০৮ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দুল নাসেরের মেয়ে মোনা নাসেরের সঙ্গে প্রেম ছিল অশরাফ মারবানের। আব্দুল নাসের এই প্রেমের একেবারেই পক্ষে ছিলেন না। তাঁর যুক্তি ছিল, ক্ষমতার লোভেই মেয়েকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন মারবান। কারণ, বংশমর্যাদায় নাসের পরিবারের ধারেকাছে ছিলেন না মারবান। তাঁর পিতা মিশর সেনাবাহিনীর জেনারেল ছিলেন। আর কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনায়ারের ডিগ্রি ছাড়া কিছুই ছিল না তাঁর। সেখানেই অশরাফের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল মোনার।

০৯ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে হয় গামালকে। বিয়ে হয় অশরাফ-মোনার। তার পরেই মিশর প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন মারবান। মোনা-অশরাফের একটি পুত্রসন্তানও হয়। ছেলের জন্মের পর অশরাফ আর মোনা লন্ডনে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু এক বছর পরেই মেয়ে ও নাতিকে কাছে রাখতে প্রেসিডেন্ট গামাল তাদের মিশর ফিরে আসতে বলেন। লন্ডনে থাকাকালীন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। সেই সুবাদে কায়রো চলে যাওয়ার পরেও পড়াশোনার কাজে লন্ডনে আসা যাওয়া লেগেই থাকত তাঁর।

১০ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

জানা যায়, পড়াশোনার নামে লন্ডনে যাতায়াতের সময়েই মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন মারবান। দুঁদে গুপ্তচরের মতোই বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও দিনও রেডিয়ো সিগন্যালিংয় ব্যবহার করতেন না তিনি। অল্প দিনেই মারবান এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন যে তাঁর সব রিপোর্ট পাঠানো হত তৎকালীন ইজ়রায়েল প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়রের টেবিলে।

১১ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

১৯৭৩ সালের ৫ অক্টোবর মারবানের দেওয়া বার্তাই সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছিল ইজ়রায়েলের। ওই দিন নিজের ‘হ্যান্ডলার’কে (মোসাদের ভাষায়) ফোন করে একটি শব্দ বলেন মারবান, ‘কেমিক্যাল’। এই ‘কেমিক্যাল’ শব্দের অর্থ ছিল সিরিয়া ও মিশর একযোগে আক্রমণ করবে ইসরায়েলকে। জানানো হয়, ৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় আক্রমণ শুরু হবে। ওই দিন ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের কারণে ইজ়রায়েল জুড়ে ছুটি থাকে। তাই ওই দিনটিকে হামলার দিন হিসেবে বাছা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে এই যুদ্ধে খানিকটা পিছিয়ে পড়লেও, পাল্টা প্রত্যাঘাতে মিশর ও সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয় ইজ়রায়েল।

১২ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

মোসাদকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে মিশরের ‘সিঁদ কাটতে’ সাহায্য করেছিলেন মারবান। মিশর-সিরিয়ার যৌথ আক্রমণে আগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে ‘দি এঞ্জেল’ যে মোসাদকে নির্ভরতা দিয়েছিল তা মেনেছিল ইজ়রায়েল। কিন্তু সেই সময় মারবানের দেওয়া তথ্য সত্ত্বেও কেন যুদ্ধের জন্য দেশকে তৈরি করা যায়নি, তার জন্য ১৯৭৩ সালের যুদ্ধ শেষের পরই চাকরি যায় মোসাদ প্রধান অ্যালি জিরার।

১৩ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

কোনও দিনই অশরাফ মারবানের নাম প্রকাশ্যে আসত না। কিন্তু ২০০২ সালে প্রাক্তন মোসাদ প্রধান অ্যালি জিরা তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনেন। সেই সময় নিজের পদ খোয়ানোর রাগের জবাব দিতে জিরা দাবি করেন, ‘‘অশরাফ মারবান ছিলেন ডাবল এজেন্ট। যিনি ভুল তথ্য দিয়ে ইজ়রায়েলের ক্ষতি করেছিলেন।’’ প্রমাণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, ‘‘১৯৭৩ সালে যুদ্ধের সময় মারবান জানিয়েছিল সন্ধ্যা ৬টায় হামলা হবে। কিন্তু মিশর ও সিরিয়া হামলা করেছিল দুপুর ২টোয়।’’

১৪ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

২০০৭ সালে লন্ডনে রহস্যজনক ভাবে মারা যান মারবান। লন্ডনের একটি বহুতল থেকে পড়ে মৃত্যু হয় মারবানের। এই মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা, না দুর্ঘটনা, তা এখনও খোলসা হয়নি। তাঁর মৃত্যু নিয়েও মিশর ও ইজ়রায়েলের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলেছিল সেই সময়।

১৫ ১৫
Ashraf Marwan was a spy of Mossad

জানা যায়, মোটা টাকার বিনিময়ে মিশরের সব তথ্য ইজ়রায়েলের কাছে পাচার করে দিতেন মারবান। তবে কত দিন তিনি এই কাজে যুক্ত ছিলেন তার কোনও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি কি শুধুই মোসাদের এজেন্ট ছিলেন? না কি মিশর এবং ইজ়রায়েল, দু’পক্ষের কাছেই ‘ডাবল এজেন্ট’-এর কাজ করেছিলেন, সেই রহস্য তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হয়ে গিয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE