সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কারের এক শতক অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু একে ঘিরে অজানা অধ্যায়ের শেষ নেই। সিন্ধু উপত্যকার কত গল্পও থেকে গিয়েছে অধরা। বর্তমান ভারত ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম অংশে গড়ে উঠেছিল সিন্ধুর নগরগুলি। পরিশীলিত প্রাচীন সভ্যতাটি বিশ্বের প্রথম নগর সভ্যতাগুলির একটি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সিন্ধু রহস্যের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে জটিল জট।
এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হওয়া লিপিগুলির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি আজ পর্যন্ত। ফলত এই প্রাচীন নগরসভ্যতার বিলুপ্তির কারণ এবং আরও এমন নানা তথ্য অজানাই থেকে গিয়েছে। সিন্ধুর লিপি একটি স্থায়ী রহস্য হিসাবে রয়ে গিয়েছে। সেই রহস্যের দোসর হয়েছে উত্তপ্ত বিতর্ক। এর সঙ্গে জড়িয়েছে গবেষকদের মৃত্যুর হুমকির অভিযোগও। এই লিপির পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে অনেক গবেষক প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন।
সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে আমরা যা জানি তা প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং মায়ার মতো সমসাময়িকদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যের ভান্ডারের তুলনায় সীমিত। এর মূল কারণ হল অব্যক্ত লিপি, যা মূলত মাটির ফলক এবং পাথরের শিলের মতো নিদর্শনগুলিতে পাওয়া গিয়েছে। সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার স্পষ্টতই সহজ হত যদি কোনও দ্বিভাষিক কিংবা বহুভাষিক প্রত্ন-নিদর্শন পাওয়া যেত।
সিন্ধু সভ্যতার আর এক জটিল রহস্য তার ইউনিকর্ন বা একশৃঙ্গ অশ্ব। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রধানত চৌকো শিলগুলোতে খোদাই করা রয়েছে অনেক জন্তু-জানোয়ারের মূর্তি। আশ্চর্যের এই যে, অন্য সকল জন্তুই বাস্তবের হলেও সেখানে রয়েছে এক কাল্পনিক জীব, ইউনিকর্ন। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোয় মোট পাওয়া শিলের প্রায় তিন-চতুর্থাংশেই রয়েছে এই ইউনিকর্ন।
১৭৯৯ সালে নীল নদের উপত্যকার রাশিদ বা রোসেটা শহরে ‘রোসেটা স্টোন’ আবিষ্কার হওয়ার পর জটিল দুর্বোধ্য হায়রোগ্লিফ্সও করায়ত্ত হয়েছে লিপি বিশারদদের। রোসেটা স্টোনে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় এবং দ্বিতীয় শতকের রাজা পঞ্চম টলেমির ডিক্রি খোদাই করা আছে তিনটি ভাষায়, মিশরীয় হায়রোগ্লিফ্স, প্রাচীন গ্রিক, আর মিশরীয় ডেমোটিক। এর মধ্যে প্রাচীন গ্রিক পড়তে পারেন গবেষকেরা। তাই পড়া সম্ভব হয়েছে হায়রোগ্লিফ্স।
সমস্ত প্রাচীন ভাষার বন্ধ দরজা খোলার জন্য অবশ্য এমন বহুভাষিক প্রত্নতাত্ত্বিক রসদ মেলে না। যেমনটা মেলেনি সিন্ধু লিপির ক্ষেত্রে। আমাদের কাছে স্বীকৃত সিন্ধু শাসকদের নাম সম্পর্কে কোনও সূত্র নেই যা থেকে লিপিটি পাঠোদ্ধার করা সম্ভব। যেমন ক্লিওপেট্রা এবং টলেমির নাম প্রাচীন মিশরীয় ভাষা বোঝাতে সাহায্য করেছিল।
তবে কিছু বিষয়ে বিশেষজ্ঞেরা মোটামুটি একমত। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে লিপিটি ডান থেকে বামে লেখা হত এবং অনেকে অনুমান করেন যে এটি ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হত। এমনকি এমন কিছু চিহ্নের ব্যাখ্যাও রয়েছে যার উপর একাধিক বিশেষজ্ঞ একমত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে এক জন ব্যক্তিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হত একটি মাথাবিহীন মূর্তি।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক রাজেশ পিএন রাও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিন্ধু লিপি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রাক্-ইতিহাস সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান করা যেতে পারে যদি আমরা লিপিটি সম্পূর্ণ রূপে পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy