Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ana Montes

‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’, ১৭ বছর ধরে অন্য দেশে তথ্য ফাঁস! টেরও পাননি গোয়েন্দারা

আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কর্মরত ছিলেন মন্টেস। অভিযোগ, বছরের পর বছর তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য দেশে ফাঁস করে দিয়েছেন, ডেকে এনেছেন নিজের দেশের বিপদ।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৪২
Share: Save:
০১ ২০
আনা বেলেন মন্টেস। দীর্ঘ ২০ বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি আমেরিকার কারাগার থেকে বেরিয়েছেন এই গুপ্তচর। অবশেষে মিলেছে মুক্তি।

আনা বেলেন মন্টেস। দীর্ঘ ২০ বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি আমেরিকার কারাগার থেকে বেরিয়েছেন এই গুপ্তচর। অবশেষে মিলেছে মুক্তি।

০২ ২০
আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা ডিআইএ-তে কর্মরত ছিলেন মন্টেস। অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে তিনি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য দেশে ফাঁস করে দিয়েছেন।

আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা ডিআইএ-তে কর্মরত ছিলেন মন্টেস। অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে তিনি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য দেশে ফাঁস করে দিয়েছেন।

০৩ ২০
অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই গুপ্তচরবৃত্তি করতেন মন্টেস। ফলে তাঁকে সহজে ধরা যায়নি। আমেরিকার দুঁদে গোয়েন্দারাও টের পাননি প্রতারণা।

অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই গুপ্তচরবৃত্তি করতেন মন্টেস। ফলে তাঁকে সহজে ধরা যায়নি। আমেরিকার দুঁদে গোয়েন্দারাও টের পাননি প্রতারণা।

০৪ ২০
আমেরিকার নাগরিক। আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেই চাকরি করতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মন্টেস আমেরিকার ছিলেন না। গোপনে তিনি আসলে কাজ করতেন কিউবার হয়ে। নেপথ্যে রয়েছে গূঢ় কারণ।

আমেরিকার নাগরিক। আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেই চাকরি করতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মন্টেস আমেরিকার ছিলেন না। গোপনে তিনি আসলে কাজ করতেন কিউবার হয়ে। নেপথ্যে রয়েছে গূঢ় কারণ।

০৫ ২০
লাতিন আমেরিকার বামপন্থী আন্দোলনকে সমর্থন করতেন মন্টেস। মনেপ্রাণে তিনি বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। মতাদর্শগত কারণেই আমেরিকায় থেকেও কিউবাকে সাহায্য করে এসেছেন মন্টেস।

লাতিন আমেরিকার বামপন্থী আন্দোলনকে সমর্থন করতেন মন্টেস। মনেপ্রাণে তিনি বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। মতাদর্শগত কারণেই আমেরিকায় থেকেও কিউবাকে সাহায্য করে এসেছেন মন্টেস।

০৬ ২০
পশ্চিম জার্মানিতে জন্ম মন্টেসের। তিনি বাবার কাজের সূত্রে আমেরিকায় আসেন। তাঁর বাবা আমেরিকার সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মন্টেসের ভাই এবং বোন, দু’জনেই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-তে কর্মরত ছিলেন।

পশ্চিম জার্মানিতে জন্ম মন্টেসের। তিনি বাবার কাজের সূত্রে আমেরিকায় আসেন। তাঁর বাবা আমেরিকার সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মন্টেসের ভাই এবং বোন, দু’জনেই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-তে কর্মরত ছিলেন।

০৭ ২০
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডিআইএ-তে মন্টেসের চাকরি জীবন শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। এখানে কাজের সূত্রেই কিউবা যেতে হয় তাঁকে। তবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেও কিউবায় তাঁর যাতায়াত ছিল।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডিআইএ-তে মন্টেসের চাকরি জীবন শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। এখানে কাজের সূত্রেই কিউবা যেতে হয় তাঁকে। তবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেও কিউবায় তাঁর যাতায়াত ছিল।

০৮ ২০
কর্মক্ষেত্রে ক্রমাগত উন্নতি হয় মন্টেসের। স্বল্প সময়ে কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিউবা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মন্টেস হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম।

কর্মক্ষেত্রে ক্রমাগত উন্নতি হয় মন্টেসের। স্বল্প সময়ে কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিউবা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মন্টেস হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম।

০৯ ২০
অভিযোগ, আমেরিকায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই কিউবার বামপন্থী সরকারের হয়ে কাজ করছিলেন মন্টেস। আশির দশকেই তাঁকে গুপ্তচর হিসাবে নিয়োগ করেছিল কিউবা।

অভিযোগ, আমেরিকায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই কিউবার বামপন্থী সরকারের হয়ে কাজ করছিলেন মন্টেস। আশির দশকেই তাঁকে গুপ্তচর হিসাবে নিয়োগ করেছিল কিউবা।

১০ ২০
শুধু তাই নয়, মন্টেসকে গুপ্তচরবৃত্তিতে রীতিমতো প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন কিউবা সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরাই নাকি ডিআইএ-তে তাঁকে চাকরি পেতে সাহায্য করেছিলেন।

শুধু তাই নয়, মন্টেসকে গুপ্তচরবৃত্তিতে রীতিমতো প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন কিউবা সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরাই নাকি ডিআইএ-তে তাঁকে চাকরি পেতে সাহায্য করেছিলেন।

১১ ২০
মন্টেস ধরা পড়ে যাওয়ার পর তদন্তে আমেরিকার গোয়েন্দারা জানতে পারেন, কিউবায় গোপন তথ্য পাচারের জন্য জলে সহজে দ্রাব্য কাগজ ব্যবহার করতেন তিনি। যাতে সেই কাগজ দ্রুত ধ্বংস করে ফেলা যায়।

মন্টেস ধরা পড়ে যাওয়ার পর তদন্তে আমেরিকার গোয়েন্দারা জানতে পারেন, কিউবায় গোপন তথ্য পাচারের জন্য জলে সহজে দ্রাব্য কাগজ ব্যবহার করতেন তিনি। যাতে সেই কাগজ দ্রুত ধ্বংস করে ফেলা যায়।

১২ ২০
তদন্তে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্য কিউবায় ফাঁস করে দিয়েছেন মন্টেস। এমনকি, এই দ্বীপরাষ্ট্রে আমেরিকার হয়ে যাঁরা গুপ্তচরবৃত্তি করতেন, তাঁদের পরিচয়ও গোপন রাখেননি তিনি।

তদন্তে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্য কিউবায় ফাঁস করে দিয়েছেন মন্টেস। এমনকি, এই দ্বীপরাষ্ট্রে আমেরিকার হয়ে যাঁরা গুপ্তচরবৃত্তি করতেন, তাঁদের পরিচয়ও গোপন রাখেননি তিনি।

১৩ ২০
আমেরিকার সেনা ছাউনিতে কিউবার গেরিলা যোদ্ধাদের একাধিক হামলার নেপথ্যে ছিল মন্টেসের হাত, অনেক পরে তা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তাঁর কারণেই মৃত্যু হয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেনা আধিকারিকের।

আমেরিকার সেনা ছাউনিতে কিউবার গেরিলা যোদ্ধাদের একাধিক হামলার নেপথ্যে ছিল মন্টেসের হাত, অনেক পরে তা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তাঁর কারণেই মৃত্যু হয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেনা আধিকারিকের।

১৪ ২০
২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিজের অফিস থেকে গ্রেফতার হন মন্টেস। এফবিআই তাঁকে গ্রেফতার করে। শোনা যায়, মন্টেসকে কিউবার গুপ্তচর হিসাবে চিহ্নিত করার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর বোন লুসির।

২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিজের অফিস থেকে গ্রেফতার হন মন্টেস। এফবিআই তাঁকে গ্রেফতার করে। শোনা যায়, মন্টেসকে কিউবার গুপ্তচর হিসাবে চিহ্নিত করার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর বোন লুসির।

১৫ ২০
বিচারপ্রক্রিয়ায় মন্টেসের মৃত্যুদণ্ড হতে পারত। কিন্তু তাঁকে ২৫ বছর কারাবাসের নির্দেশ দেন আমেরিকার আদালতের বিচারপতি। সাজা লাঘবের কারণ হিসাবে উঠে আসে তাঁর স্বীকারোক্তি।

বিচারপ্রক্রিয়ায় মন্টেসের মৃত্যুদণ্ড হতে পারত। কিন্তু তাঁকে ২৫ বছর কারাবাসের নির্দেশ দেন আমেরিকার আদালতের বিচারপতি। সাজা লাঘবের কারণ হিসাবে উঠে আসে তাঁর স্বীকারোক্তি।

১৬ ২০
ধরা পড়ে যাওয়ার পর কিউবার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন মন্টেস। ভুল তথ্য দিয়ে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেননি। সেই কারণেই তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।

ধরা পড়ে যাওয়ার পর কিউবার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন মন্টেস। ভুল তথ্য দিয়ে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেননি। সেই কারণেই তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।

১৭ ২০
মন্টেসের আইনজীবী আদালতে জানান, কিউবার বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করতেন তাঁর মক্কেল। কিউবার প্রতি আমেরিকার বঞ্চনাও মেনে নিতে পারেননি তিনি। মন্টেস নিজে আদালতে দাবি করেন, আমেরিকার হাত থেকে তিনি কিউবাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন।

মন্টেসের আইনজীবী আদালতে জানান, কিউবার বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করতেন তাঁর মক্কেল। কিউবার প্রতি আমেরিকার বঞ্চনাও মেনে নিতে পারেননি তিনি। মন্টেস নিজে আদালতে দাবি করেন, আমেরিকার হাত থেকে তিনি কিউবাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন।

১৮ ২০
তদন্তে আমেরিকার গোয়েন্দারা জানতে পারেন, কিউবার হয়ে যে দীর্ঘ ১৭ বছর কাজ করেছেন মন্টেস, তাতে তিনি কোনও পারিশ্রমিক নেননি। কিউবা সরকারকে বিনা পারিশ্রমিকে পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন এই আমেরিকান নারী।

তদন্তে আমেরিকার গোয়েন্দারা জানতে পারেন, কিউবার হয়ে যে দীর্ঘ ১৭ বছর কাজ করেছেন মন্টেস, তাতে তিনি কোনও পারিশ্রমিক নেননি। কিউবা সরকারকে বিনা পারিশ্রমিকে পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন এই আমেরিকান নারী।

১৯ ২০
২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি, ২০ বছর জেল খাটার পর মুক্তি পেয়েছেন মন্টেস। তবে জেলের বাইরে আগামী ৫ বছর তাঁর গতিবিধি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নজর রাখা হবে। বিনা অনুমতিতে কোনও কাজই তিনি করতে পারবেন না।

২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি, ২০ বছর জেল খাটার পর মুক্তি পেয়েছেন মন্টেস। তবে জেলের বাইরে আগামী ৫ বছর তাঁর গতিবিধি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নজর রাখা হবে। বিনা অনুমতিতে কোনও কাজই তিনি করতে পারবেন না।

২০ ২০
যখন জেলে গিয়েছিলেন, মন্টেস ছিলেন ৪৫ বছরের মধ্যযৌবনা নারী। আর জেল থেকে বেরোলেন ৬৬ বছরের বৃদ্ধা মন্টেস। মতাদর্শ তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই করে তুলেছিল ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। দুর্ধর্ষ এই নারীর কীর্তি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমেরিকার প্রশাসনিক ইতিহাসে।

যখন জেলে গিয়েছিলেন, মন্টেস ছিলেন ৪৫ বছরের মধ্যযৌবনা নারী। আর জেল থেকে বেরোলেন ৬৬ বছরের বৃদ্ধা মন্টেস। মতাদর্শ তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই করে তুলেছিল ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। দুর্ধর্ষ এই নারীর কীর্তি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমেরিকার প্রশাসনিক ইতিহাসে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy