All you need to know about Waqf Amendment Bill dgtl
Waqf Amendment Bill
সংশোধিত ওয়াকফ বিল কী? এই বিল নিয়ে দেশ জুড়ে কেন এত হইচই?
লোকসভায় দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পরে বিলটি ভোটাভুটির মাধ্যমে পাশ করানো হয়েছে। রাজ্যসভায় এই বিল পেশ হবে বৃহস্পতিবার। আপাত ভাবে হিসাব বলছে লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও বিলটি পাশ করাতে বিশেষ কসরত করতে হবে না বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-কে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
দীর্ঘ বিতর্কপর্বের পর বুধবার গভীর রাতে লোকসভায় পাশ হল সংশোধিত ওয়াকফ বিল। এই নিয়ে বুধবার সারা দিন সরগরম ছিল লোকসভার অন্দর। বিলের বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তবে শেষমেশ রাতে বিলটি পাশ হয় লোকসভায়। বিলের পক্ষে ২৮৮ এবং বিপক্ষে ২৩২ জন সাংসদ ভোট দিয়েছেন। ব্যবধান ৫৬। মোট ভোট পড়েছে ৫২০। সে সময় তেমন কোনও অশান্তি হয়নি অধিবেশনে।
০২২১
লোকসভায় দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পরে বিলটি ভোটাভুটির মাধ্যমে পাশ করানো হয়েছে। রাজ্যসভায় এই বিল পেশ হবে বৃহস্পতিবার। আপাত ভাবে হিসাব বলছে, লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও বিলটি পাশ করাতে বিশেষ কসরত করতে হবে না বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-কে।
০৩২১
লোকসভায় বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ২৪০, জেডিইউয়ের ১২ আর টিডিপির ১৬। এ ছাড়া লোকসভায় চিরাগ পাসোয়ানের দলের পাঁচ জন এবং শিন্ডেসেনার সাত জন সাংসদ রয়েছেন। লোকসভায় বিলটি পাশ করাতে ২৭২ জন সাংসদের সমর্থনের প্রয়োজন। শরিকদের সমর্থনে তার থেকে বেশি সমর্থন পেয়ে অনায়াসেই বিলটি লোকসভায় পাশ করাতে পেরেছে এনডিএ শিবির।
০৪২১
রাজ্যসভায় ১১৮ জন সাংসদের সমর্থন পেলে সংসদের উচ্চ কক্ষে বিলটি পাশ করাতে পারবে শাসক জোট। রাজ্যসভায় বিজেপির ৯৮ জন, জেডিইউ-এর চার জন, অজিত পওয়ারের এনসিপির তিন জন এবং টিডিপির দু’জন সাংসদ রয়েছেন।
০৫২১
বিজেপির আশা, অসম গণ পরিষদ এবং তামিল মানিলা কংগ্রেসের এক জন সাংসদের সমর্থন তারা পাবে। একই ভাবে মনোনীত ছ’জন সদস্যও বিলের পক্ষে ভোট দেবেন বলে আশা পদ্মশিবিরের।
০৬২১
তবে জোটের বড় শরিক বিজেপি এ ক্ষেত্রে শরিক দলগুলি, বিশেষত নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর টিডিপির উপর অনেকটাই নির্ভর করেছে। দু’দলই লোকসভায় সেই বিল সমর্থন করেছে। সমর্থন করেছে চিরাগ পাসোয়ানের দল লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-ও।
০৭২১
তবে এই বিলের বিরুদ্ধে এককাট্টা ছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ও। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি (শরদ), ডিএমকে, আরজেডির পাশাপাশি বুধবার লোকসভায় সংশোধিত ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করেছে ‘একদা হিন্দুত্ববাদী’ উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি)।
০৮২১
ওয়াকফ বিল নিয়ে জেপিসিতে বিতণ্ডার সময় উত্তেজনার মুহূর্তে কাচের বোতল ভেঙে আহত হয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারের বিতর্কে যোগ দিয়ে ওয়াকফ বিলকে সরাসরি ‘অসাংবিধানিক’ বললেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি এই বিলকে একেবারেই সমর্থন করছি না। এই বিল অসাংবিধানিক। তৃণমূলের তরফে আমরা এই বিলের বিরোধিতা করছি।’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপির আনা এই বিলে মুসলমানদের অধিকার খর্ব হচ্ছে।
০৯২১
কিন্তু কী এই সংশোধিত ওয়াকফ বিল? কেন তা নিয়ে এত হইচই? বর্তমান ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। অতীতে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
১০২১
নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।
১১২১
বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না সরকারের।
১২২১
নতুন বিলে তার বন্দোবস্ত রয়েছে। মূল আপত্তি এটা নিয়েই। এ ছাড়া রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব।
১৩২১
এর পাশাপাশি আপত্তি উঠেছে নতুন বিলে ওয়াকফ বোর্ডে দুই অমুসলিম সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বন্দোবস্ত নিয়েও।
১৪২১
১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। তার পর থেকেই বিজেপির তরফে বার বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার’ নিয়ে।
১৫২১
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে মুসলিম সংগঠনগুলির যুক্তি ছিল, ওয়াকফ বোর্ডের বিভিন্ন সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। জমিয়তে ইসলামি হিন্দ এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, গেরুয়াশিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি পাশ করাতে চাইছে সংশোধনী বিল।
১৬২১
যদিও কেন্দ্রের যুক্তি, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারাই নাকি এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন। তার পরেও থামেনি সমালোচনা।
১৭২১
বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ অগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী রিজিজু। বিলটি ‘অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
১৮২১
কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, ৪৪টি সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের উপর সরকারি কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র।
১৯২১
বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বাধীন ৩১ সদস্যের জেপিসি বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গত ৩০ ডিসেম্বর ১৪টি সংশোধনী-সহ বিলটি সংসদে পেশ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে।
২০২১
সরকারপক্ষের তরফে ২৩ এবং বিরোধীদের তরফে ৪৪টি সংশোধনী প্রস্তাব কমিটিতে জমা পড়েছিল। সরকারপক্ষের সাংসদদের আনা ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হলেও বিরোধীদের সব ক’টি সংশোধনী প্রস্তাবই জেপিসিতে খারিজ হয়ে যায়। এর পর বুধবার ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে উত্তাল হয় লোকসভা। গভীর রাতে লোকসভায় তা পাশও হয়।
২১২১
রাজ্যসভায় এই বিল পেশ হবে বৃহস্পতিবার। উল্লেখ্য, সংসদের দুই কক্ষে পাশ হলে আইনটির নতুন নাম হবে ‘ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’।