All you need to know about Toran Singh AKA Titu Singh who claims to be solved his murder case after reincarnation dgtl
Titu Singh
মৃত্যুর বছরেই জন্ম, চিনতে পেরেছিলেন পূর্বজন্মের স্ত্রী! নিজের খুনিদেরও নাকি চিনিয়ে দেন ‘জাতিস্মর’
১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের আগরা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিড় গ্রামে টিটুর জন্ম। সেখানকার এক হাসপাতালে জন্ম হয় তাঁর।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
‘জাতিস্মর’, এই শব্দ শুনলেই বাঙালির মনে পড়বে সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র মুকুল ধর কিংবা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’-এর কুশল হাজরার কথা। সৃজিতের ছবিতে জাতিস্মরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ‘সোনার কেল্লা’য় কুশল চক্রবর্তী।
০২২২
জন্ম-মৃত্যু মানুষের হাতে থাকে না বেশির ভাগ সময়েই। জন্ম-মৃত্যু নিয়ে অনেক লোকগাথা প্রচলিত রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, দেশ-বিদেশে প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায় কেউ তার আগের জন্মের সমস্ত ঘটনা অনর্গল বলে দিচ্ছেন। কেউ বা বলে দিচ্ছেন তিনি কখন কী ভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁদেরই ‘জাতিস্মর’ বলা হয়।
০৩২২
কেউ এই সব কথা সত্যি বলে ধরে নেন। অনেক ধর্মে পুনর্জন্মে বিশ্বাসী লোকজনকে দেখতে পাওয়া যায়। যদিও এই পুনর্জন্মের কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও অবধি পাওয়া যায়নি।
০৪২২
লোকগাথা অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধও নাকি তাঁর আগের জন্মের কথা বলতে পারতেন, যেগুলি ‘জাতকের গল্প’ নামে পরিচিত।
০৫২২
বিগত জন্মের এমন এক ঘটনার সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর নামও জড়িয়ে রয়েছে। মহাত্মা গান্ধীকে শান্তা দেবী নামে এক মহিলা তাঁর পুনর্জন্মের কথা বলেছিলেন। গান্ধী তা বিশ্বাস করেন এবং সে বিষয়ে তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠন করেন।
০৬২২
তবে পূর্বজন্মে হওয়া খুনের কথা এবং খুনিদের চিহ্নিত করে ভারতে আলোড়ন তুলেছিলেন এক ‘জাতিস্মর’। তাঁর নাম তোরন সিংহ ওরফে টিটু সিংহ।
০৭২২
১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের আগরা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিড় গ্রামের এক হাসপাতালে টিটুর জন্ম।
০৮২২
তবে টিটুর বেড়ে ওঠা আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো ছিল না। ছোট থেকেই মেজাজ তুঙ্গে থাকত টিটুর। কারণে-অকারণে জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলত সে। নিজের সঙ্গে একনাগাড়ে কথা বলে যেত। কারও সঙ্গে বিশেষ মেলামেশা করতে পছন্দ করত না সে।
০৯২২
টিটুর বয়স যখন পাঁচ (১৯৮৮ সাল), তখন সে দাবি করতে শুরু করে যে তার বাবা-মা আসল বাবা-মা নয়। সেই পরিবারের কেউই নাকি তার আপন নয়। প্রথম প্রথম টিটুর পরিবার সেই সব কথা খুব একটা আমল দেয়নি।
১০২২
পরিবারের টনক নড়ে যখন পাঁচ বছর বয়সি টিটু বলতে শুরু করে যে, তার নাম সুরেশ বর্মা। বাড়ি আগরায়। টিটু এ-ও বলতে শুরু করে যে, তার স্ত্রীর নাম উমা বর্মা। দুই সন্তানও রয়েছে তাঁর।
১১২২
ছোট্ট টিটুর দাবি ছিল, সুরেশকে ১৯৮৩ সালের ২৮ অগস্ট অর্থাৎ, টিটুর জন্মের মাস চারেক আগে খুন করা হয়। বাবা মহাবীর প্রসাদ ও মা শান্তিকে টিটু নাকি জানিয়েছিল, ১৯৮৩ সালের ২৮ অগস্টের রাতে সুরেশ গাড়ি চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির সামনে পৌঁছনোর পরেই তাঁর মাথায় গুলি করে পালায় আততায়ীরা। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
১২২২
টিটু নাকি বলতে থাকে, ‘‘আমার পরিবারকে বলুন যাতে আমার সন্তান এবং স্ত্রীর যত্ন নেয়। আমি এখানে খাবার খাচ্ছি। কিন্তু ওরা কী অবস্থায় রয়েছে আমি জানি না।’’
১৩২২
বার বার টিটুর সেই সব কথায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে মহাবীরের পরিবার। টিটুর কথা মতো আগরার সেই জায়গায় গিয়ে সুরেশ বর্মার খোঁজখবর করতে গিয়ে থ হয়ে যান টিটুর দাদা অশোক সিংহ!
১৪২২
দেখেন টিটু যেমনটা বলেছিল, তেমনটা হুবহু মিলে যাচ্ছে। এমনকি, সুরেশের বাড়ির বাইরে যে গাছটি ছিল, তা-ও টিটুর বর্ণনার সঙ্গে নাকি মিলে যায়।
১৫২২
অশোক খোঁজ লাগিয়ে জানতে পারেন, সত্যিই খুন হয়েছিলেন সুরেশ। তাঁর স্ত্রী-সন্তান-সহ পুরো পরিবার এখনও ওই বাড়িতেই থাকেন।
১৬২২
এর পর সুরেশের পরিবারকে সব কথা জানান অশোক। তাঁরাও অশোকের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান। বাড়ি ফিরে টিটু এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে আবার সুরেশের বাড়ি যান অশোক।
১৭২২
সুরেশের বাবা-মাকে দেখেই তাঁদের জড়িয়ে ধরে টিটু। জড়িয়ে ধরে উমা এবং তাঁর সন্তানদেরও। তাঁদের সকলের খোঁজখবর নেওয়াও শুরু করে। সুরেশের প্রিয় গাড়ির খোঁজও নাকি করেছিল সে।
১৮২২
এর পর টিটুকে সুরেশ সংক্রান্ত একের পর এক প্রশ্ন করে সুরেশের পরিবার। টিটু নাকি সে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তরও দেয়।
১৯২২
উমা এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা নাকি বিশ্বাসও করে নিয়েছিলেন যে, সুরেশই আবার টিটু হয়ে জন্ম নিয়েছে। তবে উমা নাকি দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন যে, ‘স্বামী’কে আর আগের মতো করে ফিরে পাবেন না তিনি।
২০২২
আগরা গিয়ে টিটু নাকি সুরেশের খুনিদেরও চিনিয়ে দিয়েছিল। জানিয়েছিল, সুরেশের ব্যবসার শত্রুরাই তাঁকে খুন করেছে। এর পর আবার বিড় গ্রামে ফিরে গিয়েছিল টিটু।
২১২২
সেই সময় টিটুর খবর দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলেছিল। তবে সে খবরের সত্য-মিথ্যা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। অনেকেই মনে করেন যে, টিটু ‘জাতিস্মর’ ছিল না। তার গল্প ছিল নিছকই মনগড়া বা কাকতালীয়।
২২২২
এখন টিটুর কোথায় আছেন, কী করেন, তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। অনেকে বলেন তিনি এক জন অধ্যাপক। বারাণসীতে থাকেন। আবার অনেকে বলেন তিনি মারা গিয়েছেন। অনেকের দাবি তিনি ব্যবসায়ী। যদি তিনি বেঁচে থাকেন, তা হলে এখন তাঁর বয়স হবে ৪০-৪১। তবে ভারতীয়দের কাছে রহস্য হয়েই থেকে গিয়েছেন টিটু।