All you need to know about serial killer Jeffrey Dahmer dgtl
Jeffrey Dahmer
Crime: খুন, মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক... মৃতের খুলিও সংরক্ষণ করে রাখত এই সিরিয়াল কিলার!
‘মিলওয়াউকি ক্যানিবাল’ অথবা ‘মিলওয়াউকি মনস্টার’ ওরফে জেফরি। শহর জুড়ে নৃশংস ভাবে একের পর এক খুন করত এই সমকামী সিরিয়াল কিলার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
১৯৭৮ থেকে ১৯৯১। আমেরিকার উইসকনসিন শহরের অন্ধকার যুগ। এই ১৩ বছরে শহরে হয়েছিল একের পর এক খুন। খুনের পদ্ধতিও এক। গলা টিপে খুন করে মৃতদেহের বিভিন্ন অংশ ঘরে সংগ্রহ করে রাখত উইসকনসিন শহরের ‘সিরিয়াল কিলার’ জেফরি ডাহমার।
০২২১
টাকার বিনিময়ে নগ্ন ছবি তোলার প্রস্তাব দিয়ে অথবা একসঙ্গে মদ্যপান করার প্রস্তাব দিয়ে নিজের বাড়িতে ‘শিকার’দের আমন্ত্রণ জানাত জেফরি। আর তার পরেই শুরু হত অত্যাচার। তাঁদের মাত্রাতিরিক্ত মাদক খাওয়ানোর পর চলত যৌন নিপীড়ন। তার পর খুন। খুনের পর মৃত ব্যক্তির মাথার খুলি সামনে রেখে স্বমেহন করত জেফরি।
০৩২১
সে নিজের নামের চেয়েও বেশি পরিচিত ছিল ‘মিলওয়াউকি ক্যানিবাল’ এবং ‘মিলওয়াউকি মনস্টার’ বলে। জেফরির চেহারা এতই ভয়ানক ছিল যে, তাকে দানবের সঙ্গে তুলনা করা হত।
০৪২১
১৯৬০ সালে উইসকনসিনের মিলওয়াউকিতে জন্ম জেফরির। তার বাবা লিওনেল এক জন রসায়নবিদ ছিলেন। উইসকনসিনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করতেন লিওনেল।
০৫২১
জেফরির মা জয়েস পেশায় টেলিটাইপ মেশিন ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। বিয়ের পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগতেন তিনি। মায়ের মানসিক অবসাদ জয়েসকে এমন ভাবে ঘিরে ধরেছিল যে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।
০৬২১
প্রায়ই লিওনেল ও জয়েসের মধ্যে অশান্তি লাগত। পারিবারিক অশান্তির জেরে জেফরিকে কেউই সময় দিতে পারতেন না। এর প্রভাব পড়ত জেফরির পড়াশোনার উপর। পরীক্ষায় ভাল ফলাফলও করতে পারেনি জেফরি। স্কুলেও কম বন্ধু ছিল তার।
০৭২১
জেফরির যখন ছ’বছর বয়স তখন সপরিবারে তারা মিলওয়াউকি ছেড়ে ওহিয়োতে চলে আসে। ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে জয়েস আর এক পুত্রসম্তানের জন্ম দেন। একই সময় লিওনেল তাঁর ডিগ্রি পেয়ে চাকরি পান। কোন জিনিসের উপর কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করলে তা সংরক্ষিত থাকবে, পেশার খাতিরে এই বিষয়ে সবকিছুই জানতেন লিওনেল।
০৮২১
এক দিন লিওনেলকে বাড়ির তলা থেকে মৃত জন্তুর হাড় পরিষ্কার করতে দেখে জেফরি। পরিষ্কার করার সময় হাড়ের ঠোকাঠুকির আওয়াজ শুনে অদ্ভুত শিহরন জাগে জেফরির। তখন থেকেই তার আগ্রহ জাগে মৃত জন্তুদের উপর। এমনকি, মানুষের শরীরে হাড় কী ভাবে লেগে থাকে তা নিয়েও আগ্রহ জন্মায় জেফরির।
০৯২১
জ্যান্ত পশুদের ধরে চামড়ার উপর দিয়ে জেফরি পরীক্ষা করত হাড়ের সংযোগস্থলগুলি কোথায় রয়েছে। কাঠবিড়াল, কুকুরের মতো ছোট আকারের জন্তু মারতেও শুরু করে জেফরি। বাড়ির কাছে একটি পরিত্যক্ত কুঁড়েঘরে সেই সব মৃতদেহ জমিয়ে রাখত সে।
১০২১
এক বার বন্ধুর সঙ্গে মজা করতে সে একটি কুকুরের মাথা কেটে লাঠির সঙ্গে আটকে কুঁড়েঘরের সামনে রেখে দিয়েছিল। যা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল তার বন্ধু। কিন্তু এ ভাবে পশু হত্যা করেও থামেনি জেফরি। দেহের হাড় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কী ভাবে সংরক্ষণ করা যায়, বাবার কাছ থেকে তা-ও শিখে ফেলেছিল সে। এর পর মরা জন্তুদের হাড় কেটে অ্যাসিড-সহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে কুঁড়েঘরের মধ্যে সংগ্রহ করে রাখত।
১১২১
স্কুলে পড়াশোনা চলাকালীন তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ায় জেফরি মদ্যপান করা শুরু করে। সহপাঠীর জানায়, এই মদ আসলে তার ওষুধ। সেই সময়ই জেফরি বুঝতে পারে, মহিলাদের প্রতি নয়, সে আকর্ষণ অনুভব করে পুরুষদের প্রতি।
১২২১
প্রাতর্ভ্রমণ করার সময় এক জনকে পছন্দও হয় তার। তাকে আক্রমণ করতে ঝোপের আড়ালে বেসবল ব্যাট নিয়ে লুকিয়ে পড়ে জেফরি। হাতের নাগালে এলেই ব্যাট দিয়ে আঘাত করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু, সৌভাগ্যবশত সে দিন হাঁটতে না আসায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
১৩২১
শারীরিক চাহিদা মেটাতে পুরুষদের উপর এটাই তার প্রথম আক্রমণ। কোনও দিনই কোনও স্থায়ী চাকরি ছিল না জেফরির। ফলে বার বার পেশা বদলাতে হত তাকে। যেতে হত শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে খুঁজে বেড়াত শিকার।
১৪২১
তার প্রথম খুন ১৯৭৮ সালে। ওহায়ো যাওয়ার পথে স্টিভেন মার্ক হিকস নামে এক জনের সঙ্গে পরিচয় হয় জেফরির। ‘রক কনসার্ট’-এ যাবেন শুনে জেফরি নিজের গাড়িতেই উঠতে বলে স্টিভেনকে। বাড়িতে একসঙ্গে মদ্যপান করার আমন্ত্রণও জানায়। বাড়িতে এলে ডাম্বেল দিয়ে তাঁকে বার বার আঘাত করে মেরে ফেলে জেফরি। তার পর স্টিভেনের মৃতদেহের বুকের উপর দাঁড়িয়ে স্বমেহন করে জেফরি। মৃতদেহ টুকরো করে কেটে মাংসগুলি অ্যাসিডে পচিয়ে সেই তরল বাথরুমের ড্রেনে ফেলে দেয়। হাড়গুলোও ভেঙে গুঁড়ো করে বাড়ির পিছনের জঙ্গলে পুঁতে ফেলে জেফরি।
১৫২১
ইতিমধ্যে জেফরির বাবা লিওনেল আবার বিয়ে করেন। জেফরির সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। বাবার অনুরোধে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় জেফরি। কিন্তু মদ্যপানে আসক্তি থাকায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
১৬২১
কিন্তু চাকরি ছাড়ার সময় তাকে একটি বিমানের টিকিট দেওয়া হয় যাতে সে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে ঘুরতে যেতে পারে। জেফরি ফ্লোরিডায় ঘুরতে গিয়ে সেখানকার একটি দোকানে চাকরিও পেয়ে যায়। কিন্তু বেতনের অধিকাংশ পরিমাণ মদের পিছনে খরচ করায় জেফরির বাবা তাকে আবার বাড়ি ফিরে আসতে বলেন। জেফরির স্বভাব পরিবর্তনের আশায় তাকে উইসকনসিনে দিদার বাড়িতে পাঠানো হয়।
১৭২১
উইসকনসিনে আসার পর জেফরি সমকামীদের জন্য বিশেষ বার, বইয়ের দোকানে যাতায়াত শুরু করে। সমকামীদের একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয় সে। এই জায়গাগুলিতে গিয়ে অপরিচিতদের সঙ্গে ভাব জমাত জেফরি। তার পর তাঁদের দিদার বাড়িতে নিয়ে আসত।
১৮২১
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জেফরি প্রস্তাব দিত তার ছবি তুলে দেওয়ার। টাকার বিনিময়ে নগ্ন অবস্থায় ছবি তুলে দেওয়ার প্রলোভনে পা দিয়ে সেই অপরিচিতেরা তার বাড়িতে যেতেন। মদের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে তাঁদের খাইয়ে দিত জেফরি। এর পর নিজের ইচ্ছা মতো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত তাঁদের সঙ্গে।
১৯২১
পরে নগ্ন অবস্থায় তাঁদের খুন করত। খুলি ফুটো করে শরীরের ভিতর এমন রাসায়নিক পদার্থ ঢালত যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ঠিক মতো সংরক্ষিত থাকে। এর পর তার ইচ্ছা মতো মৃতদেহ থেকে তার পছন্দ মতো অংশ কেটে নিত।
২০২১
কখনও কোনও পুরুষের যৌনাঙ্গ, কখনও বা তাদের খুলি, চামড়া, কখনও বা বুকের কিছু অংশ— নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিত জেফরি। বহু বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তার। কিন্তু প্যারোলে ছাড়া পেয়ে সে আবার একই ভাবে খুন করেছে।
২১২১
হেফাজতে থাকাকালীন তার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ‘পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যা ছিল জেফরির। পরে সহবন্দিদের হাতেই খুন হতে হয় জেফরিকে। অ্যান্ডারসন নামে এক সহবন্দি জেফরির মাথায় ধাতব বার দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে। অ্যান্ডারসন জানায়, ভগবান তাকে আদেশ দিয়েছিল যেন সে জেফরিকে খুন করে। জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা পরেই মারা যায় সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমার। ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হয় এক অন্ধকার অধ্যায়ের।