এ বার আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ, অভিযুক্ত, অভিযুক্তের ‘বন্ধু’, হাসপাতালের চার চিকিৎসক পড়ুয়ার পলিগ্রাফ পরীক্ষা করাতে পারবে সিবিআই।
০৩২৫
কিন্তু কী এই পলিগ্রাফ পরীক্ষা? কী ভাবেই বা এই পরীক্ষা তদন্তে সাহায্য করে?
০৪২৫
পলিগ্রাফ পরীক্ষাকে ‘লাই ডিটেক্টর’ পরীক্ষাও বলে থাকেন কেউ কেউ। অর্থাৎ, অভিযুক্ত মিথ্যা বলছেন কি না, তা যাচাইয়ের পরীক্ষা।
০৫২৫
পলিগ্রাফ পরীক্ষা সাধারণত জিজ্ঞাসাবাদের সময় বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে করা হয়।
০৬২৫
‘কার্ডিও-কাফ’ বা সংবেদনশীল ইলেক্ট্রোডের মতো কয়েকটি যন্ত্র তারের মাধ্যমে অভিযুক্তের শরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সেই সময় অভিযুক্তের রক্তচাপ, নাড়ির গতি ইত্যাদি স্বাভাবিক আছে কি না, তা মেপে নেওয়া হয়।
০৭২৫
তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির যদি জ্বর বা অন্যান্য অসুখ থাকে, তা হলে সেই সময় পলিগ্রাফ পরীক্ষা হয় না। অভিযুক্তের শারীরিক প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলে তবেই ওই পরীক্ষা করা হয়।
০৮২৫
পলিগ্রাফ পরীক্ষায় অভিযুক্তকে তদন্ত সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা। অভিযুক্ত কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তাঁর হৃৎস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাসে পরিবর্তন বা রক্তচাপের হ্রাস-বৃদ্ধির উপর একটি বৈদ্যুতিন স্ক্রিনের মাধ্যমে নজর রাখেন চিকিৎসক এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।
০৯২৫
এমনকি, উত্তর দেওয়ার সময় অভিযুক্তের ঘাম হচ্ছে কি না, তার উপরও নজর রাখা হয়।
১০২৫
প্রতিটি প্রশ্ন শোনার পর এবং উত্তর দেওয়ার সময় অভিযুক্তের শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়াগুলি একটি গ্রাফ বা লেখচিত্রের মধ্যে ধরা পড়ে।
১১২৫
পরে এই লেখচিত্র বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করা হয় যে, অভিযুক্ত মিথ্যা কথা বলছেন না সত্যি।
১২২৫
উনিশ শতকে ইটালির অপরাধ বিশেষজ্ঞ সিজ়ার লোমব্রোসো প্রথম পলিগ্রাফের অনুরূপ একটি পরীক্ষা করেন। তিনি অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের রক্তচাপের পরিবর্তন মাপার জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।
১৩২৫
পরবর্তী কালে আমেরিকার মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম মার্স্ট্রন ১৯১৪ সালে এবং ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ অফিসার জন লারসন ১৯২১ সালে এই নিয়ে আরও পরীক্ষা করেছিলেন।
১৪২৫
যদিও পলিগ্রাফ পরীক্ষা বৈজ্ঞানিক ভাবে একশো শতাংশ সঠিক ফলাফল দেয় বলে প্রমাণিত হয়নি।
১৫২৫
চিকিৎসকদের মধ্যেও এই পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই পরীক্ষা নিয়ে একাধিক বার বিতর্কও তৈরি হয়েছে। যেমন, আরুষি তলোয়ার মামলায় হয়েছিল।
১৬২৫
এমনকি পুণের শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ডের সময়ও এই পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে পলিগ্রাফ পরীক্ষায় বসেছিলেন শ্রদ্ধা-খুনে অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা!
১৭২৫
কী কী প্রশ্ন আসতে পারে, পরীক্ষার আগেই সেই নিয়ে তৈরি ছিলেন তিনি। কী ভাবে তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাবেন, সম্ভবত তারও মহড়া দিয়েছিলেন।
১৮২৫
যদিও সম্প্রতি ভারতে তদন্তকারী সংস্থাগুলির কাছে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের একটি বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে পলিগ্রাফ এবং নার্কো অ্যানালিসিস পরীক্ষা।
১৯২৫
পলিগ্রাফ পরীক্ষার ফলাফলকে কোনও ভাবেই ‘স্বীকারোক্তি’ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। এই পরীক্ষায় তদন্তে সুবিধা হয় মাত্র। তবে পরীক্ষা চলাকালীন নতুন কোনও তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এলে তা-ও তাঁরা আদালতে জমা দিতে পারেন।
২০২৫
উল্লেখ্য, যাঁর বা যাঁদের পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়, তাঁদের সম্মতি ছাড়া ওই পরীক্ষা করা যায় না।
২১২৫
আরজি করের চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সেই পলিগ্রাফ প্রক্রিয়ার জন্যই বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই। শুক্রবার সেই অনুমতি মিলেছে।
২২২৫
শুক্রবার শিয়ালদহের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল আরজি কর-কাণ্ডের অভিযুক্তকে। তাঁকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। কড়া নিরাপত্তার মাঝে বিচারকের কক্ষে তাঁর শুনানি হয়েছে। সেখানে সাংবাদিক বা বাইরের কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না। অভিযুক্তের তরফে জামিনের আবেদন করা হলেও তা মঞ্জুর করা হয়নি। এই আবহে আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত-সহ সাত জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানোর অনুমতি দিয়েছে আদালত।
২৩২৫
সিবিআই মনে করছে, ঘটনার পর হাসপাতাল এবং সেমিনার রুমে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বয়ানের মাধ্যমে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন ধৃত। মনে করা হচ্ছে, সে জন্যই তাঁর পলিগ্রাফ টেস্ট করাতে চাইছে সিবিআই।
২৪২৫
সিবিআই সূত্রে খবর, আরজি কর হাসপাতালে প্রবেশের কারণ এবং সময় নিয়েও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন ধৃত। সেমিনার হলে প্রবেশের কারণ নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। যদিও সিবিআইয়ের হাতে ঘটনার রাতের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। তাতে অভিযুক্তকে চারতলায় আসতে এবং যেতে দেখা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এ সব কারণেও পলিগ্রাফ পরীক্ষা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
২৫২৫
অন্য দিকে, শনিবারও সিজিও দফতরে হাজিরা দিয়েছেন সন্দীপ। এই নিয়ে নবম বার সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন সন্দীপ। তাঁরও পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানোর অনুমতি পেয়েছে সিবিআই।