বিশ্ব ঢাকা পড়বে বরফের চাদরে, ফিরবে তুষার যুগ! ‘পোলার ভর্টেক্স’ নিয়ে কেন চিন্তায় বিজ্ঞানীরা?
আবহবিদেরা অবশ্য এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকে। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, পোলার ভর্টেক্সের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ এমনটা মোটেও নয় যে পৃথিবী শীতল হচ্ছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
২০১৯ সালের জানুয়ারির শেষ। তুষারঝড়ে বিধ্বস্ত আমেরিকা। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছিল ২২ জনের।
০২১৭
আমেরিকার বহু প্রদেশ বরফের চাদরে ঢাকা পড়েছিল। ডাকোটা, মিনেসোটা, ইলিনয়, আইয়োয়া, ইন্ডিয়ানা, মিশিগান, নিউ হ্যাম্পশায়ার, উইসকনসিন, নিউ ইয়র্ক এবং পেনসিলভ্যানিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল হিমাঙ্কের অনেক নীচে। এমনকি উষ্ণ টেক্সাসেও ঠান্ডা হাওয়া বইছিল হু হু করে।
০৩১৭
এর পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি। আমেরিকার সতর্কতা জারি করে ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)।
০৪১৭
সতর্কতা ছিল সুমেরুর উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রায় হঠাৎ বদল নিয়ে। আর এর জন্য ২০২৩-এর শেষের দিকে সুমেরুর প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস শৈত্যপ্রবাহ রূপে আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। প্রবল ঠান্ডা পড়বে।
০৫১৭
এর নেপথ্যে রয়েছে ‘পোলার ভর্টেক্স’। বাংলায় যাতে বলে মেরু ঘুর্ণাবর্ত। এটি দুই মেরুকে ঘিরে থাকা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিম্নচাপ এবং ঠান্ডা হাওয়া। এটি গ্রীষ্মে দুর্বল এবং শীতে শক্তিশালী হয়। সুমেরুর হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া দক্ষিণমুখী হওয়ার ফলেই এই বিপজ্জনক পোলার ভর্টেক্স বা মেরু ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়।
০৬১৭
‘ভর্টেক্স’ শব্দের অর্থ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ যা মেরু অঞ্চলে ঠান্ডা হাওয়া চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করে।
০৭১৭
উত্তর গোলার্ধে শীতের সময় মেরু আবর্ত আরও প্রসারিত হয় এবং দক্ষিণের দিকে দ্রুত গতিতে ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত পাঠায়। শীতে এমনটা প্রায় রোজ হতে থাকলে আমেরিকায় মেরু বাতাসের প্রকোপ বাড়ে।
০৮১৭
২০১৯ সালের আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ‘পোলার ভর্টেক্স’-এর প্রকোপ দেখা গিয়েছিল আমেরিকায়। তার আগে ১৯৭৭, ১৯৮২, ১৯৮৫ এবং ১৯৮৯ সালেও এমন হিমশীতল সময়ের সাক্ষী থেকেছে আমেরিকা।
০৯১৭
তবে খুব শিগগিরই শেষ হয় মেরু ঘূর্ণাবর্তের খেল। যে সব এলাকায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নীচে নেমে গিয়েছিল, আচমকাই সে সব জায়গায় তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়। শীতের কামড় যেতে না যেতেই গরমে পড়ে।
১০১৭
এর মধ্যে উত্তর-পূর্ব আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলের রাজ্যগুলিতে ‘পোলার ভর্টেক্স’-এর প্রকোপ বেশি।
১১১৭
এই ‘পোলার ভর্টেক্স’-এর প্রকোপ নাকি এ বার আরও ঘন ঘন টের পাওয়া যাবে। আর এ ভাবে যদি চলতে থাকে, তা হলে ভবিষ্যতে আবার তুষার যুগ ফিরতে পারে পৃথিবীর বুকে। বরফে ঢেকে যেতে পারে পৃথিবী। শেষ হতে পারে মনুষ্য প্রজাতি। তেমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
১২১৭
আবহবিদেরা অবশ্য এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন বিশ্ব উষ্ণায়নকে। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, পোলার ভর্টেক্সের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ এমনটা মোটেও নয় যে পৃথিবী শীতল হচ্ছে।
১৩১৭
প্রকৃতপক্ষে এটি গ্রহের উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে, যা ঠান্ডার তারতম্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। একই সঙ্গে মেরুবায়ুকে স্থানচ্যুত করছে।
১৪১৭
দিনের পর দিন গরম বাড়ছে পৃথিবীতে। মেক্সিকান গরম হাওয়ার স্রোত কানাডিয়ান শীতল স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে উত্তর-দক্ষিণ ক্যারোলাইনা, ওয়াশিংটন ডিসি, পেনসিলভ্যানিয়া, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক ও মেইন-এর মতো রাজ্যগুলোতে প্রবল তুষারপাত ঘটাচ্ছে।
১৫১৭
সেই সঙ্গে উত্তর মেরুর ঠান্ডা বাতাসও ধেয়ে আসছে আমেরিকার ওই অংশগুলোতে। মেরু ঘূর্ণাবর্ত একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
১৬১৭
কিন্তু গরম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরম হাওয়ার স্রোতের কারণে তা নীচের দিকে নেমে আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপের দিকে এগিয়ে আসছে।
১৭১৭
আর সেই কারণেই অনেকে মনে করছেন, উষ্ণায়নের কারণে তাপমাত্রার তারতম্যে ব্যাঘাত ঘটলে মেরু ঘূর্ণাবর্তের প্রকোপ বাড়বে। ধীরে ধীরে আমেরিকা এবং ইউরোপ ছাড়িয়ে তা আরও এগিয়ে আসবে এবং একসময় আবার তুষারে ঢাকা পড়বে সারা পৃথিবী।