All you need to know about Munna Bajrangi, dreaded gangster of Uttar Pradesh who died in jail dgtl
Mirzapur Season 3
৪০টি খুন করে পুলিশের জালে! সহবন্দিকে ‘মোটা’ বলে জেলেই খুন হন বাস্তবের মুন্না ত্রিপাঠী
চার বছরের অপেক্ষার শেষে ওটিটির পর্দায় সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘মির্জ়াপুর’-এর তৃতীয় সিজ়ন। এ বার ‘মির্জ়াপুর’ থেকে বাদ পড়েছে পুরনো কিছু মুখ। তার মধ্যে অন্যতম মুন্না ত্রিপাঠী ওরফে মুন্না ভাইয়া।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
ক্ষমতা দখলের রাজনীতির সঙ্গে প্রতিশোধের মিশেল। মাদক আর বারুদের পোড়া গন্ধ মেশানো টান টান চিত্রনাট্যে প্রথম সিজ়নেই দর্শকদের বেঁধে ফেলেছিল ওয়েব সিরিজ় ‘মির্জ়াপুর’। দ্বিতীয় সিজ়নেও মুন্না ভাইয়া-গুড্ডু পণ্ডিতদের এই অ্যাকশন ক্রাইম থ্রিলার গোগ্রাসে গিলেছেন তাঁরা।
০২২৫
চার বছরের অপেক্ষার শেষে ওটিটির পর্দায় সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘মির্জ়াপুর’-এর তৃতীয় সিজ়ন। এ বার ‘মির্জ়াপুর’ থেকে বাদ পড়েছে পুরনো কিছু মুখ। তার মধ্যে অন্যতম মুন্না ত্রিপাঠী ওরফে মুন্না ভাইয়া। কয়েকটি দৃশ্যে দেখা গেলেও অভিনেতা দিব্যেন্দু শর্মা অভিনীত এই চরিত্রের নিধন হয়েছে দ্বিতীয় সিজ়নের শেষে। খলনায়ক মুন্না ছিল জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ়ের অন্যতম আকর্ষণ। তাই মির্জ়াপুরের তৃতীয় সিজ়নে এই চরিত্রকে চোখে হারিয়েছেন অনুরাগীরা।
০৩২৫
অনেকের মতে, এই সিরিজ়ের মুন্না চরিত্র আসলে উত্তরপ্রদেশের এককালের মাফিয়া ডন মুন্না বজরঙ্গির আদলে গড়া। কে এই মুন্না বজরঙ্গি?
০৪২৫
উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল এলাকার এককালের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ মুন্না বজরঙ্গির কাহিনিও বলিউডি ফিল্মের মতো নাটকীয়তায় মোড়়া। অপরাধ জগৎ থেকে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা মুন্না বজরঙ্গির উত্থান হয়েছিল উল্কার গতিতে।
০৫২৫
প্রায় দু’দশক ধরে উত্তরপ্রদেশের মির্জ়াপুর, জৌনপুর এবং বারাণসীতে তাঁর রাজত্ব চলত। ওই সময়ের মধ্যে নানা অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে ৪০টিরও বেশি খুনের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল মুন্নার।
০৬২৫
মুন্না বজরঙ্গির আসল নাম প্রেমপ্রকাশ সিংহ। জন্ম ১৯৬৭ সালে। তাঁর আদি বাসস্থান সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে ছোটবেলা থেকেই নাকি বন্দুক-পিস্তলের প্রতি টান ছিল মুন্নার। পঞ্চম শ্রেণিতেই স্কুলের পড়াশোনায় ইতি টেনেছিলেন তিনি।
০৭২৫
মুন্নার জীবনের শুরু হয়েছিল গালিচার (হিন্দিতে যা কালীন নামে পরিচিত। এই নামেই মুন্নার বাবা কালীন ভাইয়া চরিত্রের নামকরণ হয়েছে) কারিগর হিসেবে। কম বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৭ বছরে বয়সে প্রথম খুনের অভিযোগও ওঠে। পরে ধীরে ধীরে সুপারি কিলার থেকে উত্তরপ্রদেশের মির্জ়াপুরের ‘ডন’ হয়ে ওঠেন তিনি।
০৮২৫
কম বয়সেই উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের মাফিয়া গজরাজ সিংহের দলে নাম লিখিয়েছিলেন মুন্না। উত্তরপ্রদেশের অপরাধ জগৎ থেকে রাজনীতিতে পা রেখেছেন অনেকেই। সেই তালিকায় যোগ হয়েছিল মুন্না বজরঙ্গির নামও।
০৯২৫
অপরাধ জগতে হাতেখড়ির পর গজরাজ সিংহের ছত্রছায়া থেকে সরে গিয়ে নব্বইয়ের দশকে মুন্না নাম লিখিয়েছিলেন মুখতার আনসারির দলে।
১০২৫
নব্বইয়ের দশকে উত্তরপ্রদেশে মাফিয়াদের রমরমা কম ছিল না। মুখতারের উত্থানও সে সময়। ১৯৯৬ সালে মউ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মুলায়মের দল সমাজবাদী পার্টির টিকিটে ভোটে লড়ে জিতেছিলেন তিনি। রাজনীতিতে আসার আগে মুখতার ত্রাস ছড়িয়েছিলেন মাফিয়া হিসাবে। ধীরে ধীরে সেই মুখতারের ডানহাত হয়ে ওঠেন মুন্না।
১১২৫
মুখতারের উত্থানের সময় উত্তরপ্রদেশের ঘরে ঘরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল তাঁর দলবল। একে-৫৬ রাইফেলের পাশাপাশি অন্য অস্ত্রের ঝলকানি দেখা যেত ভাদোহী, মউ, গাজিপুর, বারাণসী, জৌনপুরের অলিগলিতে। আর মুন্নার নামের পাশে চকচক করত সুপারি কিলারের তকমা।
১২২৫
মাফিয়া যুদ্ধের কুৎসিত চেহারাটা প্রকাশ্যে এসে পড়ে তখন, যখন মুখতারের বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর রেষারেষি তুঙ্গে ওঠে। মুখতারের প্রধান প্রতিপক্ষ সে সময়ে গাজিপুর জেলার মহম্মদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দ রাই।
১৩২৫
দেওবন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক ব্রজেশ সিংহের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুখতারকে কড়া টক্কর দিচ্ছিলেন কৃষ্ণানন্দ। ২০০১ সালে ব্রজেশের দলদলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে মুখতারের সঙ্গীদের। মউ-লখনউ হাইওয়েতে সেই সংঘর্ষে মারা যান মুখতারের বেশ কিছু সঙ্গী। দু’দলের মোট ৬ জন নিহত হন।
১৪২৫
প্রতিশোধের কাহিনি সেখানে শেষ হয়নি। ২০০৫ সালে মুখতারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কৃষ্ণানন্দকে খুন করার অভিযোগ ওঠে মুন্নার বিরুদ্ধে। মুন্নার অপরাধের তালিকা তৈরি হলে তাতে উপরের দিকে থাকবে কৃষ্ণানন্দ খুনের ঘটনা। ২০০৫ সালের নভেম্বরের দুপুরে ৬ জন সঙ্গীর সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন কৃষ্ণানন্দ। সে সময় আচমকা তাঁদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে মুন্না এবং তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে।
১৫২৫
কৃষ্ণানন্দকে খুনের সময় ৬টি একে-৪৭ থেকে না কি ৪০০-রও বেশি গুলি চালিয়েছিলেন মুন্নারা। পাল্টা গুলি চললেও প্রাণে বেঁচে যান মুন্না। ঘটনার তদন্তে নেমেছিল সিবিআই। পরে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, ৭টি দেহ থেকে ৬৭টি বুলেট উদ্ধার করা গিয়েছিল।
১৬২৫
বহু পুলিশকর্তার মতে, উত্তরপ্রদেশের মাফিয়া যুদ্ধে সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ। কৃষ্ণানন্দ-হত্যার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের নজরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যান মুন্না।
১৭২৫
পরে মুন্নার শিকার হন আরও এক বিজেপি নেতা রামচন্দ্র সিংহ। ‘জমি দখলের’ অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
১৮২৫
উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিযোগ, সমাজবাদী পার্টির পরোক্ষ মদতের লাভ পেয়েছিল মুখতার-মুন্নার দলবল। যদিও সমাজবাদী পার্টি এই অভিযোগ বার বার অস্বীকার করেছে।
১৯২৫
নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে পরের দু’দশক পর্যন্ত মুন্নার ত্রাস ছড়িয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। ওই রাজ্যের মাফিয়া যুদ্ধে একে-৪৭ বন্দুকের প্রথম ব্যবহার নাকি মুন্নার হাত ধরেই হয়েছিল। মউ, গাজিপুর, জৌনপুরে মুন্নার ত্রাসের ছায়াও দীর্ঘতর হচ্ছিল ধীরে ধীরে।
২০২৫
২০০৯-এ মুন্নার মাথার দাম ওঠে সাত লক্ষ টাকা। যদিও উত্তরপ্রদেশে থাকা মুশকিল হয়ে ওঠায় ২০০৩ সালেই মুম্বই পালিয়ে যান মুন্না। ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই স্ত্রী এবং ৩ সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছিলেন।
২১২৫
২০০৯ সালে মুম্বইয়ের মালাড এলাকায় মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিজের আসল নামেই সেখানে থাকছিলেন মুন্না। গ্রেফতারির পর জেলে ঠাঁই হয় তাঁর। জেলে থাকতে থাকতেই রাজনীতিতেও পা রাখেন মুন্না। ২০১২-তে মামলা চলাকালীন তিহাড় জেল থেকেই বিধানসভা ভোটে লড়েন মুন্না। তবে মড়িয়াহু কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টির শ্রদ্ধা যাদবের কাছে হেরে যান।
২২২৫
এক সময়ের কালাশনিকভধারী মুন্নার জীবনের শেষটা হয়েছিল মর্মান্তিক ভাবে। ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মুন্নাকে ঝাঁসি জেল থেকে বাগপত জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
২৩২৫
৯ জুলাই মুন্নাকে বাগপতের আদালতে পেশ করার কথা ছিল। ৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ জেলের মধ্যেই মুন্নার মাথায় গুলি চালান সুনীল রাঠি নামে অন্য এক সাজাপ্রাপ্ত। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মুন্নার।
২৪২৫
কিন্তু মুন্নাকে কেন খুন করেছিলেন সুনীল? সুনীলের দাবি ছিল, মুন্না তাঁকে জেলে ঢোকা থেকে মোটা বলে রাগাচ্ছিলেন। সেই কারণে রাগের বশে তিনি মুন্নাকে খুন করেছেন। পুলিশ জানিয়েছিল, শুধুমাত্র মুন্নার মাথা থেকেই ১০টি বুলেট উদ্ধার হয়েছিল।
২৫২৫
মুন্নার খুনের ঘটনায় জেল আধিকারিকদের সাসপেন্ড করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।