All you need to know about Gemini Sankaran and his Gemini Circus dgtl
Circus Legend Gemini Shankaran
চার্টার্ড বিমান, ট্রেনে করে নিয়ে যেতেন পশুদের! ভারতীয় সার্কাসের অপর নাম জেমিনি শঙ্করণ
১৯৫১ সালে জেমিনি সার্কাস শুরু করেন শঙ্করণ। তার পর থেকে তিনি জেমিনি শঙ্করণ নামেই বেশি পরিচিত। ভারতীয় সার্কাসের উত্থানের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক সময়ে তার পতন, সবই দেখেছেন শঙ্করণ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
জেমিনি সার্কাস। এই নাম শুনলেই অনেকের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে রঙিন তাঁবু এবং তার ভিতরে থাকা বিভিন্ন পশু, ঝলমলে রঙিন জামাকাপড় পরে থাকা এক দল পুরুষ-নারী। অনেকেরই ছোটবেলার অনেকটা জুড়ে রয়েছে এই জেমিনি সার্কাস। যাঁর হাত ধরে জেমিনি সার্কাসের সূত্রপাত, সোমবার ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যু হল সেই জেমিনি শঙ্করণের।
০২২২
জেমিনি শঙ্করণের আসল নাম মুরকোথ ভেঙ্গাকান্দি শঙ্করণ। যিনি সাত দশক ধরে ভারতীয় সার্কাস শিল্পকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি কুন্নুরে মারা গিয়েছেন। গত জুনে তিনি ৯৯-এর গণ্ডি পার করেন।
০৩২২
১৯৫১ সালে জেমিনি সার্কাস শুরু করেন শঙ্করণ। তার পর থেকে তিনি জেমিনি শঙ্করণ নামেই বেশি পরিচিত। ভারতীয় সার্কাসের উত্থানের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক সময়ে তার পতন, সবই দেখেছেন শঙ্করণ।
০৪২২
ভারতীয় সার্কাস শিল্পে শঙ্করণের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। সার্কাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একটি বইও প্রকাশ করেন, যার নাম ছিল ‘মালাক্কাম মারিয়ুন্না জিভিথাম’ (একটি কালজয়ী জীবন)।
০৫২২
১৯২৪ সালে কেরলের থালাসেরির কোলাসেরি গ্রামে শঙ্করণের জন্ম। অল্প বয়সেই সার্কাসের প্রতি তাঁর আকর্ষণ জন্মেছিল। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় তাঁর গ্রামে ‘কিতুন্নি সার্কাস’ নামে একটি স্থানীয় সার্কাসের দল খেলা দেখাতে এসেছিল।
০৬২২
ওই সার্কাসের মালিক ছিলেন কেলেরি কুনহিকান্নান। তিনিই ছিলেন ওই সার্কাসের এক এবং একমেবাদ্বিতীয়ম যোদ্ধা। কেলেরির ট্র্যাপিজ শো দেখার পর তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জন্মায় শঙ্করণের। সার্কাসের প্রতি আগ্রহ আরও গভীর হয়।
০৭২২
শঙ্করণের বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়, শঙ্করণ তাঁর বাবার কাছে সার্কাস শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এক কথায় রাজি হয়ে যান তাঁর বাবা। পরিবারের সমর্থনে নতুন যাত্রা শুরু হয় শঙ্করনের।
০৮২২
কিতুন্নি সার্কাসের মালিক কেলেরির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন শঙ্করণ। পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর মার্শাল আর্ট এবং অ্যাক্রোবেটিক্সের প্রশিক্ষণও। মার্শাল আর্ট শেখার জন্য তিনি স্কুল ছেড়ে দেন।
০৯২২
এর মধ্যেই শঙ্করণকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ওয়্যারলেস অপারেটর হিসাবে কাজ করতেন। সেনাবাহিনীতে চার বছর চাকরি করার পর তিনি সেই চাকরি ছেড়ে দেন।
১০২২
১৯৪৬ সালে আবার নিজের গ্রামে ফিরে আসেন শঙ্করণ। সার্কাসের প্রতি তাঁর ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১১২২
তাঁর মতো কেলেরির আরও এক জন ছাত্র ছিলেন এম কে রমন। বাড়ি ফিরে এসে সেই রমনের সঙ্গে প্রশিক্ষণ চালাতে থাকেন শঙ্করণ। সার্কাসে বেশ কিছু দিন হাত পাকিয়ে তিনি একটি সার্কাসের দলে যোগ দিতে কলকাতায় চলে আসেন।
১২২২
বাংলায় তখন বেশ কিছু বিখ্যাত সার্কাস দল ছিল। ট্র্যাপিজের এক জন তারকা খেলোয়াড় হিসাবে কলকাতায় আবির্ভূত হন শঙ্করণ। তাঁকে পেতে বিভিন্ন সার্কাস দলের তরফে মোটা টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এক জন তারকা খেলোয়াড় হিসাবে তিনি সার্কাসের এ তাঁবু-ও তাঁবু বদল করতে থাকেন।
১৩২২
১৯৫১ সালে শঙ্করণের জীবনের পাশাপাশি ভারতীয় সার্কাসের ইতিহাসেও নয়া মোড় আসে। ছ’হাজার টাকায় ‘বিজয়া সার্কাস’ কিনে নেন শঙ্করণ।
১৪২২
শঙ্করণের রাশি ছিল মিথুন। তারই ইংরেজি অর্থ অনুযায়ী সার্কাসের নাম দেন ‘জেমিনি সার্কাস’। ১৯৫১ সালের স্বাধীনতা দিবসের দিন গুজরাতের বিলিমোরায় জেমিনি সার্কাসের প্রথম শো হয়েছিল। প্রথম শোয়ের পরই জেমিনির নাম মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
১৫২২
১৯৬৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে এক আন্তর্জাতিক সার্কাস উৎসবে যোগ দেয় জেমিনি সার্কাস। শঙ্করণের জেমিনি-ই ছিল একমাত্র সার্কাস দল যা ভারতের তরফে সেই আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রতিনিধিত্ব করেছিল।
১৬২২
মস্কো, সোচি এবং ইয়াল্টায় শো করে জেমিনি সার্কাস। শঙ্করণের জেমিনি সার্কাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই ‘মেরা নাম জোকার’ ছবি বানিয়েছিলেন রাজ কপূর।
১৭২২
মস্কো, সোচি এবং ইয়াল্টায় শো করে জেমিনি সার্কাস। শঙ্করণের জেমিনি সার্কাস থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েই ‘মেরা নাম জোকার’ ছবি বানিয়েছিলেন রাজ কপূর।
১৮২২
সেই সময়কালকে ভারতীয় সার্কাসের স্বর্ণযুগ বলে মনে করেন অনেকে। জেমিনি এমনই রমরমিয়ে ব্যবসা করছিল যে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য চার্টার্ড বিমান ব্যবহার করতেন শঙ্করণ এবং তাঁর দল। অনেক সময় সার্কাসের দল নিয়ে যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন ভাড়া করতেন শঙ্করণ।
১৯২২
সেই সময় ভারতের তথা বিশ্বের হেন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, যিনি জেমিনির তাঁবুতে পা দেননি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জহরলাল নেহেরু, লর্ড মাউন্টব্যাটেনস, মার্টিন লুথার কিং, ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, ইন্দিরা গান্ধী, মোরারজি দেশাই এবং ভি কে কৃষ্ণ মেনন প্রমুখ।
২০২২
১৯৭৭ সালে শঙ্করণ তাঁর দ্বিতীয় সার্কাস কোম্পানি, ‘জাম্বো সার্কাস’ শুরু করেন। দেশবিদেশের প্রায় প্রতিটি নামীদামি শহরেই তাঁবু পড়তে থাকে জেমিনি এবং জাম্বো সার্কাসের। দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পীকেও চাকরি দিয়ে নিজের দলে নিয়ে আসেন শঙ্করণ।
২১২২
সার্কাসে জন্তুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পরে, শঙ্করণ ওয়েনাড়ের একটি ব্যক্তিগত এস্টেটে সে জন্তুদের জন্য একটি চিড়িয়াখানা খোলেন। বছর কয়েক আগে সার্কাসের দায়িত্ব দুই ছেলে অজয় শঙ্কর এবং অশোক শঙ্করের কাঁধে দিয়ে অবসর নেন শঙ্করণ।
২২২২
কয়েক বছর কেরল সরকার থালাসেরিতে একটি সার্কাস অ্যাকাডেমি চালু করেছিল। সেই সময়ে সেই অ্যাকাডেমির যাবতীয় খরচ বহন করতে এগিয়ে আসেন শঙ্করণ।